মাথার উপর বলকে খানিকক্ষণ ঘোরাতেন। দেখে মনে হয় যেন কোন জাদু লেপ্টে দিচ্ছেন। বলটা বাইশ গজের শক্ত মাটিতে ছোঁয়ার সাথে সাথে চক্ষু ছানাবড়া, সত্যি তো জাদু! রবিচন্দ্রন অশ্বিন যে সত্যিকারের ‘উইজার্ড’। কিংবদন্তি এই স্পিনারের জাদুর শো এবারের মত থেমে গেল। তিনি যে অবসরের ঘোষণা দিয়ে ফেলেছেন!
হুট করেই জানিয়ে দিলেন নিজের সিদ্ধান্ত। ব্রিসবেন টেস্টের ড্রেসিংরুম থেকে শেষবারের মত দেখা গেল তাকে ভারতের জার্সি গায়ে। ক্যারিয়ার জুড়ে যিনি ছড়িয়েছেন মুগ্ধতা, তার তো মাঠ থেকেই বিদায় নেওয়ার কথা ছিল। তবে কি অভিমান?
কিন্তু অশ্বিনের ব্যক্তিত্বে অভিমান ঠিক খাটে না। তার ক্রিকেটীয় দর্শনে নিশ্চয়ই নেই কোন ছেলেমানুষি। ময়দানে আবেগঘন মুহূর্তের সৃষ্টি করেছেন হাজার খানেক। কিন্তু কোন সস্তা আবেগে গা তিনি কখনোই ভাসাননি। মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হবেন, এমন ঘটনাও খুব বেশি ঘটাননি।
ম্যানকাড নিয়ে একবার তুমুল সমালোচনা হয়েছিল বটে। কিন্তু সেটা তো আর ক্রিকেটের বাইরের কিছু নয়। ক্রিকেটের নিয়ম বইয়ের মাঝে ম্যাচ জিততে তার কোন দ্বিধা নেই। জাদুকরি বোলিং স্পেলে তিনি ভারতের বহু ম্যাচ জয়ের কারিগর। সেসবের জন্য প্রশংসার বন্যায় ভেসেছেন তিনি অসংখ্যবার।
কিন্তু গোটা ক্রিকেটই হয়ত তাকে মনে রাখবে চিরকাল। বৈধ অফস্পিনের পুনর্জাগরণ তো তারই অবদান। পাকিস্তানি মুশতাক আহমেদ কিংবা লংকান মুরালিধরনের পর অফস্পিন এক অন্ধকার জগতে প্রবেশ করেছিল। প্রায় প্রতিটা অফস্পিনারকে দিতে হয়েছে নিজেদের অ্যাকশনের বৈধতার প্রমাণ। সবাই ধরেই নিয়েছিল অফস্পিন বোধহয় ফসিল হওয়ার পথে।
কিন্তু সেখান থেকে অফস্পিনের আলোক মশাল হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিচরণ শুরু করলেন। তার বিরুদ্ধে প্রশ্ন ওঠেনি। ওই যে তিনি কখনোই কিতাবের বাইরে যাননি। এই করে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব শাসন করেছেন তার কবজির জোড়ে। আঙুলের সূক্ষ্ম কারিকুরিতে ব্যাটারদের শুনিয়েছেন সায়াহ্নের গান।
লাল চর্মগোলক হাতে ৫৩৭ বার তিনি ব্যাটারদের পাঠিয়েছেন বিষণ্ণতার ধূসর শহরে। ক্লান্ত অশ্বিন একটু এবার বিশ্রাম নেবেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ঘনকালো মেঘ চিড়ে সূর্যের আলো দিতে দিতে কেটেছে যে দীর্ঘ সময়। আরামকেদারায় বসে এখন হয়ত নেবেন ক্রিকেট দর্শনের স্পেশাল ক্লাস।