সৌরভ গাঙ্গুলি তখন সদ্য ভারত অধিনায়ক হয়েছেন, ঢাকায় এশিয়া কাপের দলে আজহার, জাদেজার মত বুড়ো ঘোড়ার পাশে ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের ফুলঝুরি ছোটানো এক প্রতিভাবান বাঁ-হাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ও সুযোগ পেলেন পদ্মাপারে ভারতীয় দলের হয়ে খেলার জন্য।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে অভিষেক ও হয়ে গেল ছেলেটির, তিন নম্বরে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে ৩৫ রানের একটা ছোট্ট সুন্দর ইনিংস ও খেলে গেলেন ঐ বাঁ-হাতি স্টাইলিশ ব্যাট। নাম হেমাঙ বাদানি, তামিলনাড়ুর হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত দারুণ পারফরম্যান্স নিত্যসঙ্গী ছিল তাঁর, এর সাথে ভারতীয় দলেও চার বছর ধরে যাওয়া আসাটা একরকম নিয়মই হয়ে গিয়েছিল তাঁর।
সেই ঐতিহাসিক ইডেন টেস্ট মনে পড়ে? অস্ট্রেলিয়া যখন দ্বিতীয় ইনিংসে তিন উইকেটে ১৬৬, নিশ্চিত ড্রয়ের দিকে এগোচ্ছে ম্যাচ, তখনই শর্ট লেগে স্টিভ ওয়াহকে দুরন্ত ক্যাচে ফেরান বাদানি। এর পর আর বেশিক্ষণ টেকেনি অজি ইনিংস।
সেই ঐতিহাসিক টেস্টে দ্বাদশ ব্যক্তি ছিলেন বাদানি। আদতে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হলেও টেস্ট অভিষেকে ওপেনার হিসেবে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে নামতে হয়েছিল, বিশেষ সুবিধা করতে পারেননি, লাল বলের জগতে কোনোদিনই ভাল কিছু করতে পারেননি ভারতীয় দলের জার্সি গায়ে, একবার কলম্বোয় মুত্তিয়া মুারলিধরনকে সামলে একটা ইনিংসে ৩৮ ছাড়া।
২০০৩ সালে ভারত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভাঙা আঙুল নিয়েও দুর্দান্ত ১২৭ রানের ইনিংস খেলে যান চার দিনের প্রস্তুতি ম্যাচে, পরবর্তীকালে বাদানি বলেছিলেন সেদিন ঐ ইনিংস না খেললে আদৌ হয়ত আর কখনও ভারতীয় দলে সুযোগ পেতেন না তিনি, তাই ভাঙা আঙুল নিয়েও লড়াই চালিয়ে যান। যদিও টেস্ট দলে আর সুযোগ পাননি, কিন্তু একদিনের দলে পরবর্তী ৩টি সিরিজে নিয়মিত সদস্য হয়ে যান।
রঙিন জার্সিতে বাদানি যদিও ভারতীয় দলের হয়ে যথেষ্টই ভাল পারফরমেন্স দেখিয়ে এসেছেন, ৪০ একদিনের ম্যাচে ৩৩ এর বেশি গড় নিয়ে ৯০০র কাছাকাছি রান, তার মধ্যে দুর্ধর্ষ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দুর্দান্ত কিছু স্ট্রোকের ফোয়ারা ছুটিয়ে সেঞ্চুরি, ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় হাইলাইটস বাদানির এটাই।
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বরাবরই ভাল খেলতেন তিনি, ২০০৪ এর ভিবি সিরিজে পার্থে ব্যাটিং বিপর্যয়ের মধ্যে অজিত আগারকারকে সঙ্গে করে ধ্বস আটকেছিলেন, কিন্তু একদিনের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার থেমে যায় মাত্র ২৭ বছর বয়সে ঐ ২০০৪ সালেই কোনো এক অজ্ঞাত কারণে।
এর আগে সুযোগ পাননি বিশ্বকাপের দলেও, দীনেশ মোঙ্গিয়া বাজি মেরে বেরিয়ে যান, পরবর্তীতে যুবরাজ – কাইফ জুটি মিডল অর্ডারে সেট হয়ে যাওয়া বাদানির সুযোগ না পাওয়ার একটা বড় কারণ হতে পারে, যদিও বহু সময়ই মিডল অর্ডারে জায়গা ফাঁকা হলেও বাদানির কথা আর ভাবাই হয়নি। আবার কখনও ধারাবাহিকতার অভাব ও বাদানির ক্যারিয়ারে বড় প্রভাব ফেলে যায়। ২০০৭ এ আইসিএলে যোগ দেওয়া ভারতীয় দলে ঢোকার আশায় কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দেয়।
যুবরাজ, কাইফ, রায়নাদের মতো একসূত্রে বাদানির নাম কী ভারতীয় ক্রিকেটে উচ্চারিত হতে পারত না নাকি বাদানি তাঁর যোগ্য ছিলেন না? দুর্দান্ত ফিল্ডার, কাজ চালানোর মত বাঁ-হাতি স্পিনার আর দারুণ টেম্পারেমেন্ট সমৃদ্ধ স্টাইলিশ ব্যাট হেমাঙ বাদানিকে তাহলে ভারতীয় ক্রিকেট কিভাবে মনে রাখবে? উপেক্ষিত নাকি অধারাবাহিক! প্রশ্নটা তোলাই থাকল।