প্রতিশোধের নাম নাসিম শাহ

আসিফ আলী যখন আউট হলেন তখনো পাকিস্তানের ৭ বলে প্রয়োজন ১২ রান। আফগানিস্তানের জয়ের সামনে তাই একমাত্র বাঁধা তিনিই ছিলেন। ফলে আসিফ আলীর উইকেট পেয়ে আফগানদের বাঁধ ভাঙ্গা উল্লাস। একটা পর্যায়ে আসিফ আলীর সাথে যেন প্রায় হাতিহাতিতেই জড়িয়ে পড়ছিলেন আফগান ক্রিকেটাররা।

আর সেই দৃশ্যটা অপরপ্রান্তে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন নাসিম শাহ। একজন বোলার হয়ে তিনি কীই বা করতে পারেন। তবে সতীর্থ ব্যাটারের প্রতি এমন বিরূপ আচরণ বুঝি সহ্য হলো না তরুণ এই ক্রিকেটারের। একটা জিদ চেপে বসলো গায়ে। ব্যাট হাতে যেন সেই জিদটাই নিঙরে বের করলেন। পরপর দুই ছয় মেরে আজ গোটা পাকিস্তানের নায়ক তিনিই।

তবে পাকিস্তান আজ জয়টা পেল বেশ কাঠখড় পেরিয়েই। আসলে যদি প্রশ্ন করা হয় পাকিস্তান ব্যাটিং লাইন আপের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা কী? আপনার উত্তরটা নিশ্চয়ই ওপেনিং জুটি। আবার যদি বলা হয় এই ব্যাটিং লাইন আপের দুর্বলতাটা কোথায়। তাহলেও বোধহয় উত্তরটা হবে পাকিস্তানের ওপেনিং জুটি। কিন্তু তা কেমন করে হয়? মাঠের ক্রিকেট তো বটেই কাগজে কলমেও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সবচেয়ে শক্তিশালি জুটি পাকিস্তানের।

বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান তো আসলে এই ফরম্যাটে বিশ্বের অন্যতম সেরা দুই ব্যাটসম্যানই। অন্তত আইসিসি র‍্যাংকিং সেই কথাই বলে। এতদিন টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এক নাম্বারে ছিলেন পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম। তবে আজই বাবর আজম নিজের সিংহাসন হারিয়েছেন আজই। তবে এতে বোধহয় খুব বেশি মন খারাপ হয়নি অধিনায়কের।

কেননা বাবর আজম জায়গাটা হারিয়েছেন তাঁরই সতীর্থ, তাঁরই সঙ্গীর কাছে। যার সাথে তিনি প্রতিটা ম্যাচে ইনিংস শুরু করতে নামেন। সেই মোহাম্মদ রিজওয়ানের কাছে। ফলে এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা দুই টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যানই পাকিস্তানের ওপেনার। তাই এই ওপেনিং জুটি কতটা শক্তিশালী সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। প্রায় বেশিরভাগ ম্যাচেই অধিকাংশ কাজ করে দেন এই দুই ওপেনার।

আর এখানেই যেন লুকিয়ে থাকে পাকিস্তানের দুর্বলতা। কেননা পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন আপ এই দুজনের উপর খুব বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। আর যেদিন বাবর আজম কিংবা মোহাম্মদ রিজওয়ান দুজনই ব্যর্থ হচ্ছেন তখন কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হয় পরের ব্যাটারের। আর আজ যেন সেই দিনটাই ছিল।

অধিনায়ক বাবর আজম আজ ফিরে গিয়েছেন নিজের প্রথম বলেই। আরেকপ্রান্তে মোহাম্মদ রিজওয়ানও আজ ছিলেন না চেনা ছন্দে। ২৬ বলে ২০ রান করেই ফিরে গিয়েছেন। এরপরই আসলে চাপটা পড়ে পাকিস্তানের উপর। আফগানিস্তানের দেয়া ১৩০ রানের টার্গেটও যেন পাহাড়সম হয়ে উঠে।

প্রথম দশ ওভারে পাকিস্তান তুলতে পেরেছিল মাত্র ৫২ রান। ফখর জামানের উইকেট পড়ার পর তো যেন ম্যাচটা হাতেই তুলে নেয় আফগানিস্তান। তবে সেখান থেকে পাকিস্তানকে টেনে তুলেছেন শাদাব খান ও ইফতেখার আহমেদ। বল হাতে নিজের কাজটা করে দেয়ার পর ব্যাট হাতেও পাকিস্তানের ত্রানকর্তা হয়ে এলেন শাদাব। ২৬ বলে খেললেন ৩৬ রানের ইনিংস। তবে তখনো পাকিস্তানের জন্য কাজটা সহজ ছিল না।

আর সেই কাজটা করার জন্য পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় আশা হয়ে ছিলেন আসিফ আলী। শুরুটাও করেছিলেন নিজের স্বভাবসূলভই। নিজের ইনিংসের প্রথম বলেই রশিদ খানকে উড়িয়ে ছয় মারেন। এমনকি আউট হবার আগের বলটাতেও ছয় মেরে দলের জয়ের আশা বাচিয়ে রেখেছেন। তবে এরপরের বলেই আসফ আলী আউট হয়ে গেলে পাকিস্তানের আশাও শেষ হয়ে যায়।

কেননা নয় উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান তখন কেবল ম্যাচ হারের অপেক্ষায়। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১১ রান। ওভারের প্রথম দুই বলেই দুই ছয় মেরে এবার ব্যাট হাতেও ক্রিকেট দুনিয়ার মন জয় করে নিলেন নাসিম শাহ।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link