কেউ চল্লিশে এসে, কেউ আবার পয়ত্রিশ পেরোলেই ব্যাট-প্যাড তুলে রেখে ক্রিকেটকে বিদায় জানান। পারফরম্যান্সটা দুর্দান্ত না হলে পয়ত্রিশের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকে থাকাটা বড় দায়। এই সময়ে কেউ ফর্মের তুঙ্গে থেকে অবসরে যান, কেউ আবার ব্যর্থতা মাথায় নিয়ে বিদায় নেন। যে বয়সটায় অনেকে ক্রিকেট ছেড়ে অন্য পেশায় যুক্ত হন বা পরিবারকে সময় দেন – সেই বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা দিতে যাচ্ছেন ইংল্যান্ডের রিচার্ড গ্লেসন।
ল্যাঙ্কাশায়ারের ৩৪ বছর বয়সী পেসার গ্লেসন ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রথমবারের মত ডাক পেয়েছেন। ইংল্যান্ডের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগ টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে ১৬.৮০ গড়ে ২১ উইকেট শিকার করে নজর কাড়েন এই পেসার। এরপরই সুযোগ পেয়ে যান জাতীয় দলের স্কোয়াডে।
অবশ্য পেশাদার ক্রিকেটেই তিনি এসেছেন অনেক পরে। ২৭ বছর বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক। গেল দুই মৌসুমে ব্যাক ইনজুরির কারণে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলতে পারেননি। জাতীয় দলে খেলার স্বপ্নটাও শেষ হয়ে যায়। এরপরই নতুন করে আশার গল্প। ক্যারিয়ার শেষ ভেবে ফেলা গ্লেসন এখন জাতীয় দলের স্কোয়াডে।
নর্দান্টসের হয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক। এরপর ২০১৬ সালে লিস্ট এ ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক। শুধু যে ক্রিকেট খেলতেন এমন নয়, ক্রিকেটের পাশাপাশি তিনি কোচিং পেশার সাথেও যুক্ত। মূলত মাইনর কাউন্টি থেকে মেজর কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে সুযোগ না পাওয়ায় তিনি কোচিং পেশায় আসেন।
২০১৬ সালে নর্দাম্পটনশায়ারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। এরপর বছর দুয়ের মধ্যে যোগ দেন ল্যাঙ্কায়ারে। এর মাঝে টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে নর্দাম্পটনশায়ারের হয়ে শিরোপা জেতেন তিনি। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) রংপুর রাইডার্সের হয়ে খেলার সুযোগ পান গ্লেসন।
চোটের কারণে পুরো ক্যারিয়ারটাই থমকে যেতে নেয় গ্লেসনের। তিনি নিজেও ভেবেছিলেন আর হয়তো ক্রিকেটে ফেরা হবে না। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন করে আর আগ্রহ দেখায়নি ল্যাঙ্কাশায়ারও। এই নিয়ে গ্লেসন বলেন, ‘ আমি ওই সময় দুই মাস চাকরিহীন ছিলাম। আমি আবারও ক্রিকেট খেলতে পারবো কি-না তা নিয়েই তৈরি হয়েছিল সন্দেহ। তবে ক্রিকেটে ফিরতে পেলে নিজের শতভাগ দেওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম। আমি আবারও ফিরে আসবো এমন কোনো সম্ভাবনা ছিল না। জাতীয় দলে জায়গা পাওয়ার মতো পারফর্ম করা তো পরের বিষয় ছিল ‘
চোটের সাথে পাল্লা দিয়ে ক্রিকেটে ফেরাটা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। এরপর চোট কাটিয়ে টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে ফেরা। পুরো মৌসুম জুড়ে বল হাতে দাপট দেখালেন। দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে নজর কাড়লেন সবার। নির্বাচকদের একপ্রকার বাধ্য করলেন তাঁকে স্কোয়াডে নিতে।
চোট আর হতাশা নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। সেখান থেকে শেষ সময়ে ক্যারিয়ারে নতুন মোড়। ক্যারিয়ারের শেষভাগে এসে কি নতুন কোনো গল্প রচনা করবেন গ্লেসন? ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদচারণা, নাকি স্কোয়াডে থেকেই হতাশার পাল্লা ভারী করে বিদায় নিবেন ক্রিকেট থেকে – সেটার জন্য অপেক্ষা আর একটি সিরিজের।