রিঙ্কু সিং, আলিগড়ের বাদশাহ

জিততে হলে শেষ বলে চার রান চাই, গোটা স্টেডিয়াম উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছে উত্তেজনায়। রান আপেই টিম-মিটিং বসিয়ে ফেলেছেন শুভমান গিল, রশিদ খান, মিলাররা … কেন?

ক্রিজে থাকা ব্যাটার ততক্ষণে পরপর চার বলে ছক্কা হাঁকিয়ে শান্ত দৃষ্টিতে ফুঁসছেন, দেখে নিচ্ছেন ফিল্ড সেটিং! এই ব্যাটারের নাম হার্দিক পান্ডিয়া, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল কিংবা আন্দ্রে রাসেল নয়.. ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে রিঙ্কু, রিঙ্কু সিং!

হলফ করে বলতে পারি, গত বছরের আইপিএল নিলামের পর প্রত্যেকে ট্রল করেছিলেন রিঙ্কুকে … ‘ওর কাছে নিশ্চয়ই কেকেআরের কোনও এক মালিকের নীল ছবি আছে, তাই শালা চান্স পাচ্ছে।’

এর আগে কেকেআরের স্কোয়াডে নাম থাকত বটে, কিন্তু দল প্রথম একাদশে খেলাত না, রিঙ্কুকে নামিয়ে দিত কারুর না কারুর জায়গায় ফিল্ডিং করতে। ব্যস, ওটুকুই! মাঠের মধ্যে রিঙ্কুকে এর থেকে বেশি কিছু করতে দেখা যায়নি।

বড় মঞ্চে জ্বলে উঠলেন রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে, অসাধারণ বোলিং লাইন আপের বিরুদ্ধে জয় ছিনিয়ে আনলেন নীতিশের সঙ্গে জুটি বেঁধে। পরের ইনিংস আরও ভয়ঙ্কর! লখনৌয়ের বিরুদ্ধে প্রায় অসম্ভব একটা পরিস্থিতি থেকে বের করে এনেছিলেন দলকে।

ঐ দিন কেকেআর জেতেনি। ট্রল শুরু হয়েছিল, ‘নাইটি নাইটি’ বলে … সেদিনও লিখেছিলাম, ‘এভাবেই রিঙ্কুরা জিতে যান।’ হ্যাঁ, যে প্রাণশক্তি নিয়ে, যে জেদ নিয়ে আলিগড় থেকে, দেশের প্রান্তিক অংশ থেকে ক্রিকেট ব্যাগ কাঁধে করে খেলতে আসেন রিঙ্কুরা।

ওরা ঐ যাত্রাপথেই জিতে যান, অপেক্ষা থাকে শুধু একটা রূপকথার, সেখানে রশিদ খানের হ্যাটট্রিকে ড্রেসিংরুমে ফিরে যান রাসেল, নারাইন, শার্দুল ঠাকুররা। ৯ বলে ৪০ রান প্রয়োজন থাকে, অপর প্রান্তে উমেশ যাদব, জেতার আশা নেই বললেই চলে ৷ আর ঠিক এমন সময়ই বিষ্ফোরণ! একটা, দুটো.. পরপর চারটে ছয়ে বিপক্ষের নাভিশ্বাস তুলে দেন রিঙ্কুরা৷ হাজার চেষ্টার পরেও শেষ বলে ছক্কা আটকাতে পারে না বিপক্ষ!

কোচ দৌঁড়ে আসেন, ক্যাপ্টেন-সতীর্থ সবাই এসে জড়িয়ে ধরেন… মনে পড়ে, গত বছর হেরে যাওয়া সত্ত্বেও ম্যাচ শেষের অনুষ্ঠানে ক্লান্ত রিঙ্কুকে দেখে হার্শা ভোগলে বলেছিলেন, ‘আইয়ে আলিগড়কে বাদশাহ, আইয়ে।’

সাংবাদিকতার ছাত্র হিসেবে হার্শা ভোগলের এই সম্মোধন অসাধারণ লেগেছিল, ইংরেজিতে সড়গড় নয় এমন একজনকে যেভাবে স্বচ্ছন্দ্যবোধ করিয়েছিলেন হার্শা, তা নি:সন্দেহে প্রশংসাযোগ্য! কিন্তু নিছক সম্মোধন? এই ইনিংসের পরও রিঙ্কুকে আলিগড়ের বাদশাহ বললে অত্যুক্তি করা হবে? সত্যি?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link