আধুনিক ক্রিকেট এখন আক্ষরিক অর্থেই সর্বাধুনিক। বিশেষ করে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট আসার পর টি-টোয়েন্টির সংজ্ঞায়েই মুহূর্তে মুহূর্তে পাল্টায়। সেই বিবেচনায় ১০০’র আশেপাশের স্ট্রাইক রেটের ইনিংসগুলো কোনো উপকার না করে বরং দলের ইনিংসে নেতিবাচক ভূমিকা রাখে।
সেই দোষে অনেকদিন ধরেই দুষ্ট মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও তাঁর সাম্প্রতিক সময়ের অধিকাংশ টি-টোয়েন্টি ইনিংস।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে শেষ ৪২ বলে ৬৩ রান করে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ২০ বলে ২২ করে ফিরেন অধিনায়ক রিয়াদ। এর অর্থ হল বাকি ২২ বলে বাংলাদেশ করে ৪১ রান। মানে, ১৩ ওভারে ১০০ ছোঁয়ার পরও যে বাংলাদেশের রানটা ১৭০ বা ১৮০ হল না – তাঁর দায়টা অনেকটাই অধিনায়কের ওপর বর্তায়।
শেষ অবধি বাংলাদেশ ১৬৩ রান করে। পাঁচ উইকেট হারিয়ে। হ্যাঁ, উইকেটটা একটু স্লো ছিল। তবে, জয়ের জন্য কি যথেষ্ট ছিল এই রান? উত্তরটা ‘না’। সিরিজে ফিরতে পারেনি বাংলাদেশ দল। থ্যাঙ্কস টু রিয়াদ, তাঁর বোলিং আক্রমণ সাজানোও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। খোদ সাকিব আল হাসানও দুই ওভার বোলিং করে ১০ রান দিয়ে এক উইকেট নিয়ে নিজের বোলিং কোটা শেষ করতে পারেননি।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসটা খেলেই টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন। নি:সন্দেহে সাহসী একটা সিদ্ধান্ত। আর ওই জায়গাটাতে এখন তরুণদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা সুযোগ পেতে পারেন।
একই কথা ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। রিয়াদ এখন সাদা বলের ক্রিকেটেও নিজের নামের প্রতি একদমই সুবিচার করতে পারছেন না। আসলে পারবেনই বা কি করে, বয়সটা যে প্রায় ৩৭। তাঁর ব্যাটিং রিফ্লেক্স নষ্ট হয়ে গেছে, হ্যান্ড আই কম্বিনেশন নেই বললেই চলে।
স্ট্রাইক রোটেট করতে পারেন না ঠিক মত। এমনকি এমন ম্যাচ খুঁজে পাওয়া কঠিন, যেখানে রিয়াদ ফিল্ডিংয়ে বড় কোনো ভুল করছেন না। অথচ, তিনিই নাকি টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক, যেটা তারুণ্যের খেলা। প্রতিনিয়ত নিজের সাথে পাল্লা দেওয়ার খেলা।
রিয়াদ এক সময় ফিনিশার ছিলেন, প্রয়োজনে ইনিংস বিল্ড আপও করতে পারতেন। সেটা এখন আর পারছেন না। ক্রিকেট পারফরমিং আর্ট। এর বাস্তবতাটাই এমন। এখানে কোনো কিছুই স্থায়ী নয়। যত দিন এগোবে, ততই সেরা সময়টা অতীত হতে থাকবে। একটা সময় ওই একই আর্টই করতে গেলে সেটা খুব কুৎসিৎ দেখাবে, যেটা এখন রিয়াদের ক্ষেত্রে হচ্ছে।
মাশরাফি বিন মুর্তজার ক্যারিয়ারের শেষটা সুখকর হয়নি। আগে যার দলে থাকা, অধিনায়কত্ব করা নিয়ে কোনো প্রশ্নই ওঠেনি – সেই মাশরাফিকে নিয়ে প্রশ্ন ওঠে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপের পর। সেই প্রশ্নটা আজকাল রিয়াদকে নিয়েও উঠছে। রিয়াদের উচিৎ সময় থাকতেই কিংবদন্তি হিসেবে বিদায় নিয়ে ফেলা।
মাশরাফি তাও শেষ দিকে অন্য কোথাও না হোক, ফিল্ডিংয়ে নিজেকে উজাড় করে দিতেন। আর ক্যারিয়ারের এক শেষ বিশ্বকাপটা বাদ দিলে মাশরাফির অধিনায়কত্ব নিয়ে বড় কোনো অভিযোগ নেই। সেখানে রিয়াদের সর্বশেষ ২০২১ সালের বিশ্বকাপটা বাজে যাওয়ার পরও তিনি টিকে আছেন বহাল তবিয়তে। যেন থামারই নাম নেই।
এমনকি তাঁকে অধিনায়ক করেই বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য আরেকটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ। এই পরিকল্পনায় সবচেয়ে বড় সমস্যা যে তিনিই সেটা বোর্ড বা মাহমুদউল্লাহ’র নিজের – কারো অন্তত বুঝে ফেলা উচিৎ সময় থাকতে।
সময়ের ধর্মই বদলে যাওয়া। চাইলেও তাই সময়ের নিয়তি পাল্টে ফেলা যাবে না। সেই বাস্তবতা বুঝতে হবে টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। বুঝতে হবে বোর্ডকেও। দুই পক্ষ যত দ্রুত বুঝে ফেলতে পারবেন – ততই সেটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য মঙ্গলজনক হবে।