বুকের কান্না চেপে রিয়াদ চালালেন ‘সাইক্লোন’

নিজের ভেতরের ঝড়কে মাটিচাপা দিয়ে ব্যাট হাতে ঝড় চালিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দলকেও এনে দিয়েছেন এক অবিশ্বাস্য জয়। 

ছেলে রয়েছেন হাসপাতালের বিছানায়। বাবা ক্রিকেট ময়দানে খেলছেন দায়বদ্ধতা থেকে। নিজের ভেতরের ঝড়কে মাটিচাপা দিয়ে ব্যাট হাতে ঝড় চালিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দলকেও এনে দিয়েছেন এক অবিশ্বাস্য জয়।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এক নিরব চরিত্র। বুকের মধ্যে ঝড় বয়ে গেলেও তিনি মুখফুটে কিছু বলেন না। ছেলেকে হাসপাতালে রেখে তিনি খেলে ফেললেন এক অনবদ্য ইনিংস। ফরচুন বরিশালের প্রায় হেরে যাওয়া ম্যাচকে জিতিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ম্যাচ শেষে তাই সেই জয়কে উৎসর্গ করেছেন ছেলেকে। জানিয়েছেন বাবা তাকে ভালবাসে।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ অভিজ্ঞ সেনানী। বেশ খানিকটা পথ পাড়ি দিয়েছেন তিনি। ক্রিকেট জীবনে কখনোই ব্যক্তিগত জীবনের প্রভাব পড়তে দেননি। তেমনই এক উদাহরণ তিনি আরও একটিবার রাখলেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের মঞ্চে।

ফরচুন বরিশাল বেশ ভরসা করে তাকে দলে রেখেছে। তিনি সেই ভরসার দাম দিয়েছেন ব্যাট হাতে। মারকাটারি একটা ইনিংস খেলেছেন। ১১২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে দল যখন পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে, তখন তিনি মনের সকল গ্লানি দূরে সরিয়ে দায়িত্বকে প্রাধান্য দিয়েছেন।

প্রায় ২১৬ স্ট্রাইকরেটের একটা ইনিংস খেলেছেন অভিজ্ঞ রিয়াদ। দলের তরী জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়ে মাঠ ছেড়েছেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচ সেরার পুরষ্কার উঠেছে তার হাতে। সেই পুরষ্কার পেয়ে তিনি জানিয়েছেন নিজের ছেলের অসুস্থতার কথা। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে বেশ কিছুদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি।’

সাধারণ মানুষের পক্ষে নিশ্চয়ই এমন পরিস্থিতিতে নিজের কাজে মনোযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ ঠিকই নিজের পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। ঠিক এখানেই আসলে রিয়াদ চলে যান অনন্য উচ্চতায়। এক আদর্শ চরিত্র হিসেবে নিজেকে থিতু করতে পেরেছেন।

তবুও তো একজন পিতার মন। তার মন তো ছেলের জন্যে কাঁদবেই। তাইতো তিনি বললেন, ‘এই জয় আমার ছেলেকে উৎসর্গ করলাম।’ এরপর ছেলের জন্যেও দিয়েছেন নিজের বার্তা। তিনি বলেন, ‘খুব শীঘ্রই দেখা হবে, বাবা তোমাকে ভালবাসে।’

সবুজ ওই গালিচা আবারও প্রমাণ করল সব কিছু ছাপিয়ে একজন বাবা হয়ে ওঠেন খেলোয়াড়। পেশাদারিত্ব আর দায়িত্ববোধ স্নেহের বাধনকেও হার মানায়। তবে, মন পড়ে থাকে সন্তানের ওই হাসিমুখের দিকেই। ওই হাসিমুখটাই তো সব। বাবাদের কান্না কেউ দেখে না। সেই কান্নাই কখনও আগুন হয়ে ঝড়ে বাইশ গজে!

Share via
Copy link