তখনও তিনি ব্যাটে নামেননি। পাকিস্তানের দুই ওপেনার তখনও ক্রিজে। কিন্তু ড্রেসিংরুমে বসেও পুরোপুরি গেমের ভেতরে এক মোহাম্মদ রিজওয়ান। চোখ বন্ধ, হাতে তসবিহ। যেন বাইরের কোলাহল থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে মনের গভীর কোনো প্রশান্তির খোঁজ করছেন। আপন মনে ডাকছেন স্রষ্ঠাকে।
ক্রিকেট মানেই মানসিক লড়াই। সেই লড়াইয়ে নামার আগেই রিজওয়ান নিজেকে গুছিয়ে নিচ্ছিলেন। কেবল ব্যাটিং দক্ষতা নয়, খেলায় টিকে থাকতে প্রয়োজন মানসিক দৃঢ়তা, স্থিরতা। আর সেটা অর্জনের জন্য তিনি আশ্রয় নিলেন প্রার্থনায়।
কিন্তু, যতই মানসিক প্রস্তুতি থাকুক, বাস্তবতা কখনো কখনো কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে। পাকিস্তানের ইনিংস যখন একটা গোছানো শুরুর ইঙ্গিত দিচ্ছিল, তখনই ধাক্কা। প্রথমে বাবর আজম কাভার ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটরক্ষকের হাতে ধরা দিলেন। এর পরপরই রান আউটের ফাঁদে ধরা পড়ে সাজঘরে ফিরলেন ইমাম উল হক। মুহূর্তের মধ্যে ভেঙে পড়ল পাকিস্তানের টপ অর্ডার।
ঠিক তখনই ক্রিজে এলেন রিজওয়ান। তার সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ — ভাঙা ইনিংসকে গুছিয়ে তোলা, দলকে বিপর্যয় থেকে উদ্ধার করা। তবে, সেই চ্যালেঞ্জে তিনি পুরোপুরি সফল হতে পারেননি। বরং, তার ব্যাটিং ছিল অতিরিক্ত ডট বলে বোঝাই।
দুবাইয়ের মন্থর উইকেটে রিজওয়ানের ইনিংস যেন আরও মন্থর হয়ে গেল। ৭৭ বলে ৪৬ রান। স্ট্রাইক রেট মাত্র ৬০-এর আশেপাশে। আধুনিক ওয়ানডে ক্রিকেট যেখানে ৯০ থেকে ১২০ স্ট্রাইক রেট খুব স্বাভাবিক, সেখানে রিজওয়ান যেন সময়ের সাথে তাল মেলাতে পারলেন না। ইনিংসে ছিল মাত্র তিনটি চার। তবে সৌদ শাকিলের সাথে ১০৪ রানের এক গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়লেন, যা পাকিস্তানকে কিছুটা হলেও স্থিরতা এনে দিয়েছিল।
ক্রিকেটে ধৈর্য প্রয়োজন, তবে কখনো কখনো বেশি ধৈর্যই হয়ে ওঠে বিপদের কারণ। মাঠে স্থিরতা দরকার, তবে প্রয়োজনে গিয়ার বদলানোর সামর্থ্যও থাকা চাই। রিজওয়ান মানসিক প্রশান্তি খুঁজেছেন, নিজের খেলা খেলেছেন। কিন্তু হয়তো একটু বেশিই শান্ত হয়ে গিয়েছিলেন, যেখানে প্রয়োজন ছিল আক্রমণের স্পষ্টতা। পাকিস্তানের ইনিংসে প্রাণ ফেরানোর জন্য যে জরুরি ছিল একটু বেশি তাড়না, একটু বেশি গতি—সেই তাড়না কি তার ব্যাটিংয়ে ছিল? প্রশ্নটা থাকল সেখানেই!