ক্ষোভে তাঁর ওয়াকআউট

শেষ কবে কোনো অধিনায়ককে প্রতিবাদে মাঠ ছেড়ে বের হতে দেখেছেন?

নিদহাস ট্রফিতে সাকিব আল হাসানের প্রতিবাদ এখনও চোখে লেগে থাকার মতন। কিন্তু সাকিব কিন্তু মাঠে ছিলেন না। মাঠে থাকা অবস্থাতেই মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার মতন ঘটনা খুবই কম। আর সেটা যদি হয়ে ফুটবলে? তা তো নেই বললেই চলে।

টেকনোলজি দিয়ে মোড়া ফুটবলে রেফারির সিদ্ধান্ত আতশীকাচের নিচে ফেলা হয় বারেবার। কিন্তু সেখানেই রেফারির ভুল সিদ্ধান্তের দরুন মাঠ ছেড়ে বের হয়ে গিয়েছেন অধিনায়ক। তাও যে সে অধিনায়ক নন, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।

ম্যাচের শুরু থেকেই শুরু করা যাক। ইউরোপ অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল সার্বিয়া আর পর্তুগাল, রেড স্টার স্টেডিয়ামে। ম্যাচের প্রথমে বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে গিয়েছিল পর্তুগাল। ১১ মিনিটের মাথায় বার্নাদো সিলভার ক্রসে গোল করেন ডিয়েগো জোটা। ৩৬ মিনিটে সেই ব্যবধান দ্বিগুন করেন লিভারপুল স্ট্রাইকার। মায়চের প্রথমার্ধ পর্তুগাল লিডে যায় গোলের ব্যবধানে।

বিরতি থেকে ফিরেই নিজেদের খেলায় ফিরে সার্বিয়া। বেঞ্চ থেকে আসা নেমানিয়া রাদোনিচই ঘুরিয়ে দেন খেলার মোড়। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিটেই আলেকসান্দার মিত্রভিচ ব্যবধান কমান। বামপ্রান্ত থেকে রাদোনিচের ক্রসে মাথা রেকর্ড গড়েন মিত্রভিচ। এই গোলের সাথে সাথে সার্বিয়ার ইতিহাসের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে যান মিত্রভিচ। জাতীয় দলের জার্সিতে ৬৩ ম্যাচে তাঁর গোলসখ্যা ৩৯।

৬০ মিনিটের মাথায় সার্বিয়াকে সমতায় ফেরান ফিলিপ কস্টিক। এই গোলেও প্রত্যক্ষ সাহায্য ছিল নেমানিয়া রাদোনিচের।

তবে ঘটনার সূচনা ম্যাচের শেষ মিনিটে। অতিরিক্ত সময়ের খেলা শুরু হয়ে গিয়েছে। ৯২ মিনিটে এসে লাল কার্ড দেখেছেন সার্বিয়ান ডিফেন্ডার মিলেঙ্কোভিচ। সেখান থেকে পরের মিনিটেই আক্রমণে উঠে পর্তুগাল। মাঝমাঠ থেকে রেনাতো সানচেজের বাড়ানো ক্রস সরাসরি গিয়ে পরে রোনালদোর পায়ে। রোনালদোয় আরামসে গোলরক্ষক দিমিত্রিকে পাশ কাটিয়ে বল পাঠিয়ে দেন জালে। কিন্তু হুট করে উড়ে এসে জুড়ে বসেন অধিনায়ক স্তেফান মিত্রভিচ। গোল লাইন পেরিয়ে যাওয়া বল ক্লিয়ার করে নিয়ে আসেন আবার মাঠে। সেই বল আবারও জালে বার্নাদো সিলভা কিন্তু লাভ হয়নি।

যতক্ষণে পর্তুগালের সকলে উদযাপন শুরু করে দিবেন, ততক্ষণে রেফারি বললেন খেলা চালিয়ে যেতে। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব রোনালদো। রেফারির সাথে বাকি সময়টা পুরো দল কাটিয়েছেন রেফারির সাথে তর্ক করে। কিন্তু তাতে রেফারির থোরাই কেয়ার। রেফারির ডিসিশনই শেষ ডিসিশন। বরং রেফারির সাথে আর্গুমেন্টে জরিয়ে হলুদ কার্ড দেখেছেন তিনি। অথচ রিপ্লেতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল যে বল গোল লাইন পার করেছে।

মিত্রভিচ বল ক্লিয়ার করার আগেই বল গোল লাইন পেরিয়েছে। অর্থাৎ রোনালদোর দাবি ব্যায্য ছিল। কিন্তু ভিএআর, গোল লাইন প্রযুক্তি কোনোটাই না থাকায় তা দেখবার সুযোগ ছিল না রেফারির।

সার্বিয়ার গোলকিকের সময় তাই রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে মাঠ ছাড়েন রোনালদো। বাকিটা সময় পর্তুগাল দলও আর খেলেনি। ম্যাচ চলতে দিয়েছে ম্যাচের মতন। যদিও খেলা চলেছে মাত্র ১০ সেকেন্ড, তবুও ম্যাচ একপ্রকার বয়কটই করেছিল তারা। ম্যাচ শেষ হয়েছে পর্তুগালের আর্মব্যান্ড মাটিতে পরে থাকা অবস্থাতেই।

বলা বাহুল্য এই ম্যাচে ছিল নাভিএআরপ্রযুক্তি। এমন কি গোল লাইন প্রযুক্তিও অনুপস্থিত। ইউরো কোয়ালিফাইয়ারে অনেকদল খেলে বলেগোল লাইন প্রযুক্তিম্যানডেটরি করেনি তারা। যদি কোনো মাঠে আগে থেকে এই দুই প্রযুক্তি থাকে, তবেই তা ব্যবহার করা যাবে। রেড স্টারের মাঠে ছিল না কোনো প্রযুক্তিই। ফলে গোল দ্বিতীয়বার দেখার সুযোগ হয়নি তাদের। ফলে ম্যাচ জিতেও বঞ্চিত থেকে গেলেন রোনালদো।

রোনালদোর ক্ষোভ কাটেনি ম্যাচ শেষেও। ইন্সটাগ্রামে লিখেছেন, ‘পুরো দেশের ক্ষতি হয়েছে এই সিদ্ধান্তে।কোচ হিসেবে নিজের এক হাজারতম ম্যাচ ছিল পর্তুগিজ কোচ ফার্নান্দো সান্তোসের। তিনি সরাসরি প্রশ্ন ছুঁড়েছেন ফিফার উদ্দেশ্যে, ‘কেন বিশ্বকাপ বাছাইয়ের মতো একটা ম্যাচে কোনো গোললাইন প্রযুক্তি নেই? ফিফার কি উচিত না এরকম গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে এই প্রযুক্তি নিশ্চিত করা?’

ম্যাচ শেষে জন্য তার কাছে রেফারি ক্ষমাও চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

ফুটবলে গোল লাইন প্রযুক্তির সূচনাও হয়েছিল কিন্তু বিশ্বকাপের মঞ্চ থেকেই। ২০১০ সালে ইংল্যান্ড বনাম জার্মানির নকআউট পর্বের ম্যাচে ল্যাম্পার্ডের করা গোল দেননি রেফারি। আর এরপর থেকেই সবক্ষেত্রে শুরু হয় গোল লাইন প্রযুক্তির কার্যকারিতা।

এই ড্রয়ে ম্যাচের ১টিতে জিতে ১টিতে ড্র করে সমান পয়েন্ট করে সংগ্রহ পর্তুগাল সার্বিয়ার। পয়েন্ট সমান হলেও গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকেগ্রুপের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে সার্বিয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link