আজিঙ্কা রাহানে আমাদের মতো করে ছোটেন না। ভরা বাজারে থলি হাতে দুশো পঞ্চাশের কাতলাটা নাইলনের ব্যাগে পুড়তে আমরা ছুটি। পাঁচটা পাঁচের ডাউন হাওড়া লোকাল ধরতে আমরা ছুটি। জিঙ্কস আমাদের মতো নয়। সে তাল মিলিয়ে ছুটতে ভালোবাসে না। তাঁর ছোটার মধ্যে তাড়া নেই। নন স্ট্রাইকে বিরাট কোহলি থাকলেও তাঁর তাড়া নেই।
বিহাইন্ড উইকেটে টিম পেইন গাদাগুচ্ছের মুখব্যাঞ্জন ছুঁড়লেও তাঁর তাড়া নেই। সে আমাদের মতো নয়। সে ছোটে আবিষ্কারের নেশায়। কোথাও একটা পড়েছিলাম, আর্জেন্টাইন ফুটবলার হুয়ান রিকুয়েলমে নাকি এভাবেই ছুটতেন। রিকুয়েলমে ওয়ান-রুট হাইওয়ে ধরতেন না। তিনি ছুটে বেড়াতেন পাহাড় বেয়ে, গ্রাম বেয়ে, নদী বেয়ে। আ
মাদের জিঙ্কসও ঠিক এইভাবে ছোটে। সে ছুটতে গিয়ে ভুল করে। কিন্তু সেই ভুলের সাথেও যে তার সখ্যতা। স্পিনারদের ব্যাকফুট কাট খেলতে গিয়ে আউট হয় বারবার। কিন্তু, একটু থিতু হলেই ও সেই কাটের দিকেই ঝুঁকবে। সে ভুলটাকেও আবিষ্কার করতে চেয়েছে।
তাঁর তাড়া নেই । এক জীবন… দুই জীবন.. তিন জীবন… তাঁর হাতে সময় অনেক। চটজলদি ভুল সে বদলাবেইনা। সে জানলার আঁকশি দিয়ে একচোখ দিয়ে তাকিয়ে থাকতে চায়। সে দেখতে চায়, কার শক্তি বেশি … তাঁর নাকি তাঁর ভুলের।
সে আবার গালিও খায়। সে হোম গ্রাউন্ডে ফর্মে থাকে না বহুদিন। আমি জানি না সেটা কেনো। জিঙ্কসকে বোঝা শক্ত।তবু মনে হয় আবিষ্কারের নেশা পেয়ে না বসলে জিঙ্কস ছোটেন না। এক জায়গায় হাঁটু গেড়ে বসে থাকেন। আবার ওই যে ব্রিসবেনের মারণ ফাঁদ, ওই যে সিডনির সাদা পাখিগুলো, ওখানেই তো লুকিয়ে থাকে জিঙ্কসের প্যান্ডোরা বাক্সটা।
সে ছোটে সেখানে। স্বয়ং বিরাট কোহশি চলে গেছে দেশে, মোহাম্মদ শামি আর জাসপ্রিত বুমরাহরাও সবাই চলে গেছে। আমাদের জিঙ্কস ছুটছে তখন লণ্ঠনটা জ্বেলে, কারণ ওই যে আরেকটা আবিষ্কারের নেশা তখন পেয়ে বসেছে তাঁকে। জিঙ্কস কি ‘দুরন্ত আশা’ পড়েছেন? – ‘মর্মে যবে মত্ত আশা সর্পসম ফোঁষে’।
জিঙ্কস আবিষ্কারের জন্য ছোটে। বেদুইনদের মতো। রিকুয়েলমের মতো। শিল্পীর মত, শিল্পের খোঁজে। সে ভুল করে, আবার ভুল করে, আবার ভুল করে …হয়তো সে এভাবেই ঠিককে আবিষ্কার করতে চায়। জিঙ্কস ধারাবাহিক নয়। জিঙ্কস আবিষ্কারক।
জিঙ্কস ছোটেন … আমাদের মতো করে নয়। খেলতে খেলতে.. গাইতে গাইতে সে ছোটে। তাঁর তাড়া নেই। এক জীবন … দুই জীবন … পাঁচজীবন … অনেক জীবন বাকি তাঁর।