সেদিন সাব্বির রহমান গণমাধ্যমে বললেন, ‘আপনাদের কাছ থেকেই (মিডিয়া) শুনলাম আমি এশিয়া কাপে খেলছি।’ সেই গণমাধ্যমের কথাই তবে সত্যি হল। তিন বছরের লম্বা একটা বিরতির পথ পেড়িয়ে সাব্বির আবার জাতীয় দলে। শুধু জাতীয় দলের ফিরলেন না তিনি এশিয়া কাপের মত এক গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টও খেলবেন। তবে এই যে সাব্বিরের ফেরাটা আসলে ঠিক কোন বার্তা দেয়?
সাব্বির রহমান রুম্মান, দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিং আর পেশিশক্তির যথাযথ ব্যবহার, এই দুয়ের মিশেলে তিনি হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের আঁধার ঘোচানোর আলো। একটা সময় তাঁকে নিয়ে বেশ ভরসা করা হত, স্বপ্নও দেখা হয়েছে হরেক রকম। টি-টোয়েন্টির এই জামানায় তিনি হবেন বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপের অন্যতম ক্ষুরধার ব্যাটার।
প্রতিভার কমতি নেই। ব্যাটিং স্ট্যাইলেও ব্যকরণের যথেষ্ট ব্যবহার রয়েছে তাঁর। নিজের দিনে রুদ্রমূর্তি ধারণ করতে পারেন সাব্বির সে প্রমাণ তিনি দিয়েছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) মঞ্চেও। তবে জাতীয় দলে সাব্বিরের কাছ থেকে ঠিক সাব্বির সুলভ পারফরমেন্স কখনোই পাওয়া যায়নি। কালেভদ্রে দুর্দান্ত কিছু ইনিংস তিনি খেলেছেন। তবে তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেই চালিয়ে দেওয়া যায়।
২০১৯ সালে তিনি শেষবার খেলেছিলেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রামে। সে ম্যাচেও সাব্বির ছিলেন ব্যর্থ। দল থেকে বাদ পড়ে যাওয়া যেন ছিল অবধারিত। তাছাড়া মাঠের বাইরের নানা কারণে সাব্বির নানা সময়ে হয়েছে বিতর্কিত। এতসব কিছু সয়ে নিয়ে নিজেকে জাতীয় দলে ফেরানোর মত তেমন কোন পারফরমেন্সই তিনি করতে পারেননি। তবুও হুট করেই ডাক এলো তাঁর।
এমনকি এই যে তাঁর ডাক আসতে চলেছে সে নিয়েও তিনি ছিলেন না নিশ্চিত। তাঁর মানে কি দাঁড়ায়? তাঁকে আগে থেকে অবহিত করা হয়নি। একজন খেলোয়াড় দলে আসবেন, তাঁর একটা প্রস্তুতি তো অন্তত থাকা উচিৎ। তিনি জানলেন না কিছুই তাহলে হুট করেই তিনি জাতীয় দলে এসে খেলবেন কি? তাছাড়া এমনও নয় যে তিনি ঘরোয়া টুর্নামেন্টগুলোতে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন। এনামুল হক বিজয় নিজেকে প্রমাণ করেছেন ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে।
নিজেকে প্রমাণের তেমন কোন মঞ্চই বাছাই করতে পারেননি সাব্বির। সাম্প্রতিক সময়ে চোখে লেগে থাকার মত একটি ইনিংসও যেন খুঁজে পাওয়া দায়। সেখান থেকে সাব্বির কেন দলে সে প্রশ্ন ওঠাটা স্বাভাবিক। আবার ভিন্ন ধরণের একটা প্রশ্নও তুলে ধরা সম্ভব। বাংলাদেশের তবে পাইপলাইন বলতে কিছুই নেই? উত্তরটা খুঁজতে খুব বেশি দূর যাওয়ার প্রয়োজনও নেই।
একটু নিবিড় পর্যালোচনা করলেই দেখা মিলবে এর উত্তরের। প্রায় প্রতিটা খেলোয়াড়ই রোস্টার ব্যাসিসে জাতীয় দলে আসছেন। পারফর্ম করতে পারছেন না। চলে যাচ্ছেন। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন অন্যকেউ তবে তা নতুন মুখ নয়। অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের চিত্র যেন সম্পূর্ণ আলাদা। ভারতের পাইপলাইনে যেন খেলোয়াড়দের উপচে পড়া ভীড়।
তবে সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক বিষয় প্রায় প্রতিটা খেলোয়াড় সুযোগ পেলেই দলে নিজের জায়গাটা পাকাপোক্ত করবার জন্য সবকিছু ঢেলে দিচ্ছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের কাঠামোগত যে একটা শুভংকরের ফাঁকি রয়েছে তা যেন সূক্ষ্ণভাবে এড়িয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা। এভাবেই কোথাও জায়গা না পাওয়া সাব্বিররা সংকীর্ণ এক ফাঁক গলে চলে আসেন জাতীয় দলে। আর ঘুরে ফিরে যেখান থেকে শুরু হয় পরিবর্তনের গান সেখানটায়ই থেমে যায় পুরো ক্রিকেট।