২৪ টা বসন্ত জুড়ে তার বাইশ গজ। ‘জুড়ে’ শব্দটা আসলো কারণ তার মতো ক্রিকেটকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধারণ করেছেন খুব কম ক্রিকেটার। পরিশীলিত ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি ব্যাটার হিসেবে ছিলেন সেরাদের সেরা। তর্কসাপেক্ষে সর্বকালের সেরাও বলা যেতে পারে।
মানুষটা যে শচীন টেন্ডুলকার সেটা বোধহয় আগ বাড়িয়ে না বললেও হতো। বুড়ো, মধ্যবয়স্কা, এমন কি সবেমাত্র কৈশোর যারা পেরিয়েছে- তিন প্রজন্মই তার ব্যাটিং এলিগেন্সের সাথে পরিচিত। তবে ক্রিকেটার শচীন আরো বেশি অনুকরণীয় হয়ে ওঠেন মাঠ এবং মাঠের বাইরের নির্লিপ্ততায়, ভদ্রতায়।
ক্যারিয়ারে ক্রেইগ ম্যাকডরমেট, অ্যালান ডোনাল্ড, শন পোলক, ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, শোয়েব আখতার, ব্রেট লি, জিমি অ্যান্ডারসন, গ্লেন ম্যাকগ্রা, ডেল স্টেইনদের মতো বহু বাঘা বাঘা পেসারদের সামলেছেন। শচীনকে আউট করার টোটকা হিসেবে এরা অনেকেই স্লেজিং করেছেন, বাক্যবাণে জর্জরিত করেছেন। সেসবে শচীন কি কখনো ক্রদ্ধ হয়েছেন? ইতিহাস বলে শচীন সেসব বাক্যবাণের উত্তর দিয়েছেন ব্যাট দিয়ে।
ক্যারিয়ারে তেমনভাবে কখনোই মেজাজ হারাতে দেখা যায় নি শচীনকে। সম্প্রতি মাঠ ও মাঠের বাইরের সেই শচীনকে নিয়ে কথা বলেছেন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক রশিদ লতিফ। ক্রিকেট ক্যারিয়ারে শচীন কতটা বিনয়ী ছিলেন তা নিয়েই স্মৃতিচারণা করেছেন তিনি। এত বছরের ক্যারিয়ারে শচীন কিভাবে স্লেজিং সামলাতেন? নিজের ইউটিউব চ্যানেল ‘কট বিহাইন্ড’ এ উপস্থাপকের করা এমন প্রশ্নের উত্তরে রশিদ লতিফ ফিরে যান তাঁর ক্রিকেট জীবনে।
তিনি বলেন, ‘শচীন ব্যাটিংয়ে আসলেই আগে লক্ষ্য করতো উইকেটের পিছনে কে আছে। ফিল্ডিং প্রান্তে থাকা কেউ তাকে স্লেজিং করলে সে একদম চুপ থাকতো, আমলেই নিতো না। কিন্তু সে যখন ভাল মুডে থাকতো তখন খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ হয়ে কথা বলতো। এতে করে পরে আর কেউ স্লেজিং করতে পারতো না৷ সত্যিকার অর্থে, শচীন একজন নিপাট ভদ্রলোক ছিলেন।’
ওপেনিংয়ে ব্যাট করার কারণে কিভাবে শচীন টেন্ডুলকারের ক্যারিয়ারে আমূল পরিবর্তন এসেছিল তা নিয়েও কথা বলেন রশিদ লতিফ। তিনি বলেন, ‘ক্যারিয়ারের শুরুর সময়টা শচীনের জন্য অনেক কঠিন ছিল। ৯৪ তে ও প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি পায়। যতদূর মনে করতে পারি, ও ৭০ এরও বেশি ম্যাচ পর প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরির দেখে। আর এর পর থেকেই ও ওয়ানডেতে ভাল করতে শুরু করে। সেঞ্চুরিও পেতে থাকে নিয়মিতই। মূলত ওর ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন ওর ক্যারিয়ারের জন্য দারুণ ভূমিকা রেখেছিল।’
রশিদ লতিফ অবশ্য ভুল কিছু বলেননি। ১৯৮৯ তে অভিষেক হওয়ার পর মিডল অর্ডারে তেমন ভাল করতে পারছিলেন না শচীন। এরপরে তার ব্যাটিং পজিশন পরিবর্তন করা হয়। আর এরপর থেকেই শচীন দারুণ সব ইনিংস খেলতে শুরু করেন। একই সাথে ভারতও সুফল পেতে শুরু করে।
এছাড়া গ্রেটনেসের প্রসঙ্গ আসতে রশিদ লতিফ বলেন, ‘শচীন অবশ্যই সর্বকালের সেরাদের একজন৷ একই সাথে ডন ব্র্যাডম্যান, ভিভ রিচার্ডস, ব্রায়ান লারা, রিকি পন্টিং, জ্যাক ক্যালিস, এরাও ক্রিকেটের অন্যতম গ্রেট।’
৭৯ ম্যাচ পর প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি পাওয়া শচীন টেন্ডুলকার পরবর্তীতে ওয়ানডেও টেস্ট মিলে করেছেন সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি। সহসাই সে কীর্তিতে কেউ ভাগ বসাবে বলে মনে হয় না। তবে সব কিছু ছাপিয়ে শচীন টেন্ডুলকার নামটা আরো বেশি অনুকরণীয় হয়ে ওঠে তার পুষ্পকোমল হৃদয় আর বিনম্র মননের কারণে। কারণ দিনশেষে ক্রিকেট টা তো ভদ্রলোকের খেলা।