শচীনের ভুলে যাওয়া রত্ন

২৪ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ার। দুই যুগের এই ক্যারিয়ারে শচীন টেন্ডুলকার বনে গেছেন কিংবদন্তি তারকা। এই দীর্ঘ ক্যারিয়ারে শতশত ম্যাচ আর ইনিংসের মাঝে এমন কিছু ইনিংস তিনি খেলেছেন যেগুলো দলের জন্য রত্নের চেয়ে কম নয়। দলের বিপর্যয় কতক ম্যাচে একাই দাঁড়িয়ে গেছেন! খেলেছেন দায়িত্বশীল ইনিংস, দলকেও একক প্রতাপ দেখিয়ে জিতিয়েছেন বহু ম্যাচে।

তবে, শচীনের প্রচুর আন্ডাররেটেড ইনিংসও আছে যা নিয়ে আলোচনা হয় না খুব কম। সেসব ইনিংস আরো আলোচনার দাবী রাখে। এবার তাহলে সেই আলোচনায় যাওয়া যাক।

  • ৪৩ – প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ১৯৯৬-৯৭

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে কার্টলি অ্যামব্রোস, কোর্টনি ওয়ালশ, ইয়ান বিশপদের সামনে রানই বের করতে পারছিলেন না নভজ্যেৎ সিং সিধু, রাহুল দ্রাবিড়রা। কিন্ত অপরপ্রান্তে বাউন্ডারির ফোয়ারা ছোটাচ্ছিলেন শচীন টেন্ডুলকার।

অ্যামব্রোস, বিশপদের বিপক্ষে কাউন্টার অ্যাটাকে খেলছিলেন তিনি। কিন্তু ব্যক্তিগত ৪৪ রানে অ্যামব্রোসের শর্ট বল শচীনের কাধে লেগে উইকেটকিপার ব্রোউনির হাতে যেতেই আবেদন করলো ক্যারিবীয়রা! আর সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে শচীনকে আউট দেন অনফিল্ড আম্পায়ার এডি নিকোলস। আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে ৪৩ বলে ১০ চারে ৪৪ রানে ফিরতে হয় শচীনকে!

  • ১১১ – প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা, ১৯৯২

১৯৯২ এর শেষভাগে ভারত তখন দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। শচীনের ব্যাটে খুব বেশি রানও আসছিলো না। বলতে গেলে অফ ফর্মেই ছিলেন তিনি। তবে সেবার জোহানেসবার্গ টেস্টে খেলেছিলেন ১১১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস।

ব্রায়ান ম্যাকমিলান, অ্যালান ডোনাল্ডদের সামনে যেখানে দাড়াতে পারছিলো না ভারতীয় ব্যাটাররা তখন ১৯ বছর বয়সী তরুন শচীন দক্ষিণ আফ্রিকার বাউন্সি উইকেটে বিরুদ্ধ কন্ডিশনে দাপুটে ব্যাটিংয়ে খেলেন ১১১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস! ওই ইনিংসেই দেশের বাইরে শচীন নিজের সামর্থ্যর জানান দেন।

  • ৯৭ – প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা, ২০০০

২০০০ সালে ওয়াংখেড়েতে সিরিজের প্রথম টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি ভারত। আগের সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩-০ তে হোয়াইটওয়াশ হওয়ায় স্বভাবতই অধিনায়ক শচীনের উপর চাপটা এবার একটু বেশি। টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে জ্যাক ক্যালিস, অ্যালান ডোনাল্ডের সামনে দাঁড়াতেই পারছিলো না ভারতীয় ব্যাটাররা।

একপ্রান্তে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকলেও মাটি কামড়ে পড়েছিলেন শচীন। অষ্টম উইকেটে আউট হবার আগে একক লড়াইয়ে ১৬৩ বলে ১২ চার ও ২ ছক্কায় ৯৭ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলেন তিনি। শচীনের ব্যাটেই ২২৫ রানের পুঁজি পায় ভারত। যদিও ওই ম্যাচে ৪ উইকেটের জয় পায় প্রোটিয়ারা।

  • ৬৪ – প্রতিপক্ষ পাকিস্তান, ১৯৯২ বিশ্বকাপ

সাল ১৯৯২। সিডনিতে বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রথমবার মুখোমুখি দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভার‍ত ও পাকিস্তান। টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ২৫ রানের প্রথম উইকেট হারায় ভারত। এরপর দ্বিতীয় উইকেটে ৬১ রানের জুটি গড়লেও হটাৎই ছন্দপতন! ১৪৮ রানে তখন দলের ৫ উইকেট নেই।

একপ্রান্ত আগলে রেখে মিডল অর্ডারে নামা শচীন তুলে নেন অসাধারণ এক ফিফটি। শচীন ছাড়া দলের কেউই করতে পারেনি পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস। ১৮ বছর বয়সী শচীনের ৬২ বলে অপরাজিত ৫৪ রানের ইনিংসে ২১৬ রান সংগ্রহ করে ভার‍ত। পরবর্তীতে বল হাতে ব্যাট হাতে ভয়ংকর হতে যাওয়া পাকিস্তানের সর্বোচ্চ স্কোর করা আমির সোহেলের উইকেট নেন তিনি। নিজেদের প্রথম দেখায় বিশ্বকাপের মঞ্চে অসাধারণ এক জয় পায় ভার‍ত।

  • ৮৫ – প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ১৯৯৪

ওয়াঙখেড়েতে সেবার সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২৭২ রানে অলআউট হয় ভারত। জবাবে প্রথম ইনিংসে ২৪৩ রানে থামে ক্যারিবীয়দের ইনিংস। ২৯ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ১১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপাকে ভার‍ত।

সেখান থেকে ৮৮ রানে নেই ৫ উইকেট। ম্যাচে তখন ব্যাকফুটে স্বাগতিকরা। এরপর শচীনের ব্রিলিয়ান্ট ৮৫ রানের ইনিংসে ৩৩৩ রানের শক্তিশালী পুঁজি পায় ভারত! শচীনের ৮৫ ও জাভাগাল শ্রীনাথের ৬০ রানেই পালটে যায় ম্যাচের চিত্র। ৩৬৩ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ২৬৬ রানে থামে ক্যারিবীয়দের দ্বিতীয় ইনিংস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link