কিংবদন্তির প্রয়াণে পোড়ে কিংবদন্তির মন। ঠিক এমন এক সময়ের মধ্য দিয়েই যাচ্ছেন ভারতীয় ক্রিকেটের মহাতারকা শচীন টেন্ডুলকার। লতা মঙ্গেশকর, ভারতের সংগীত জগতের এক সুবিশাল নক্ষত্র। তাঁর প্রয়াণে পুরো ভারত জুড়েই যেন নেমে এসেছে শোকের কালোঘন মেঘ। যেই মেঘ মানেনা আষাঢ়-শ্রাবণ।
প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রের মানুষই এই সুর সম্রাজ্ঞীর প্রয়াণে হয়েছে ব্যথিত, হৃদয়ে ভর করেছে দুঃখ। সেই দু:খের কিঞ্চিত পরিমাণ হয়ত প্রকাশ করেছেন শচীন টেন্ডুলকার। লতা জির সাথে তো তাঁর ছিলো গভীর মমত্ববোধের এক সম্পর্ক। লতা মঙ্গেশকর ছিলেন একজন একনিষ্ঠ ক্রিকেট ভক্ত। নতুন করে তো আর তা নিয়ে কিছু বলার নেই। তিনি সহসাই ভারত জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলা দেখতেন গভীর মনোযোগে।
এমনকি ১৯৮৩ সালে ভারত যেবার বিশ্বকাপ জিতলো সেবার তো তিনি খোদ লর্ডসে বসেই দেখেছিলেন ভারতের মহাকাব্য রচনা। তারপর দেশে ফিরে সেই মহাকাব্য রচয়িতাদের সম্মানে বিনা পারিশ্রমিকে একটি কনসার্টও করেছিলেন লতা জি। যেই কনসার্টে বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) ফান্ড তুলেছিলো বিশ্বকাপ জয়ী খেলোয়াড়দের পুরস্কার দেবে বলে। ধনকুব বিসিসিআই তো আর শুরু থেকেই আজকের মত ধনী ছিল না।
জীবনের পরিক্রময়া তিনি এক মধুর মা-ছেলের সম্পর্ক গড়ে ফেলেছিলেন ভারতের কিংবদন্তি ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকারের সাথে। এ বিষয়ে তিনি একবার গণমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘শচীন আমাকে সবসময় নিজের মায়ের মতোই সম্মান করে। আমি সেদিনটা কোনদিনই ভুলতে পারবো না যেদিন সে প্রথমবার আমাকে আই(মা) বলে ডেকেছিলো। সেটা এক অকল্পনীয় এবং অপ্রত্যাশিত এক ঘটনা ছিলো আমার জন্যে।’
লতাজি নিজেও ক্রিকেট ভালবাসতেন খুব। আর একটা কথা বারবারই বলতেন যে, তিনি শচীন রমেশ টেন্ডুলকারের বিরাট ভক্ত। লিটল মাস্টার নি:সন্দেহে সৌভাগ্যবান, এমন একজন মানুষকে ভক্ত হিসেবে পাওয়াও সৌভাগ্যের বিষয়।
বড় বন কিংবা মা দু’জন তো প্রায় সমান। নিজের একজন খুব কাছে বড় বোনকে হারিয়ে শচীন তাঁর দু:খ ভারাক্রান্ত শচীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘লতা দিদির জীবনে একজন হতে পেরে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান বলেই গন্য করি। সে সবসময় আমাকে ভালবাসা ও আশির্বাদ দিয়েছিলেন। তাঁর প্রয়াণে মনে হয় আমি নিজেকে খানিকটা হারিয়ে ফেলেছি। তাঁর গানের মধ্য দিয়েই তিনি চিরকাল আমাদের মাঝে বেঁচে রইবেন।’
লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যু সংবাদে শচীন ছুটে গিয়েছিলেন হাসপাতালে। ছয় ফেব্রুয়ারি রোববার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবার আগে থেকেই লতা জি ভুগছিলেন নানারকম শারীরিক জটিলতায়। জানুয়ারির আট তারিখে তিনি কোভিড পজিটিভ ও নিউমোনিয়া নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে। যদিও কোভিডের সাথে লড়াই করে তিনি জিতে গিয়েছিলেন কিন্তু তাঁর শরীরের অঙ্গগুলো আর তাঁর কথা মানতে চাইলো না। তাতেই খসে পড়ে গেলো উজ্জ্বলতম এক নক্ষত্র।