ক্রমশ আস্থার স্তম্ভ হচ্ছেন সাকিব

প্রায় একই ধাঁচের বলে ওভার তিনেক আগে আউট হতে পারতেন রাচিন রবীন্দ্র। শরিফুল ইসলাম মিডল স্ট্যাম্প বরাবর পিচ করান। সেই বল খোঁচা লেগে খুঁজে নেয় সীমানা দড়ি। রাচিন নিজেও জানতেন ঠিক কি দূর্দান্ত এক বল ছুড়েছেন শরিফুল। তাইতো দুইজনে হাসিমুখে ‘ফিস্টবাম্প’ করলেন।

ঘটনাটা ম্যাচের প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে ঘটে। তানজিম হাসান সাকিব সম্ভবত রাচিনকে পরাস্ত করবার সেই জায়গাটা মস্তিষ্কে এঁটে নিলেন। চতুর্থ ওভারে বল হাতে এলেন সাকিব। নেপিয়ারের উইকেট থেকে দারুণ সহয়তা পাচ্ছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। সাকিবদের কাজ ছিল স্রেফ সঠিক লাইন আর লেন্থে বল করা।

চতুর্থ ওভারে শেষ বলটায় তাই করলেন সাকিব। মিডল স্ট্যাম্পে পিচ করা বলটায় সামান্য মুভমেন্ট আদায় করে নেন। দ্বিধাগ্রস্ত রাচিনের ভাগ্যে যা ছিল ঘটেছে তাই। উইকেটের পেছনে থাকা মুশফিকুর রহিম ততক্ষণে দস্তানা বন্দী করে উদযাপনের সূত্রপাত ঘটিয়ে ফেলেছেন।

উদযাপন করার উপলক্ষ্যের দুয়ার তো তানজিম সাকিবই খুলে দিয়েছেন এদিন। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে রঙিন পোশাকে জয় একটি। তাও আবার স্বাগতিকদের বিপক্ষে নয়। এমন এক দুঃখস্মৃতির সমাপ্তি ঘটাতেই যত আয়োজন তানজিম হাসান সাকিব, শরিফুল ইসলাম, সৌম্য সরকারদের।

রাচিনকে ফেরানোর পর যেন নিউজিল্যান্ডের হিমেল হাওয়াতে জয়ের সুঘ্রাণ মেতে শুরু করে বাংলাদেশ। সেটাকে আরও তীব্র করে তোলেন সাকিব নিজেই। নিউজিল্যান্ড ইনিংসের দ্বিতীয় উইকেটও যায় তার পকেটে। হেনরি নিকলসকেও ফেরান তিনি। লেন্থের তারতম্য ঘটিয়ে প্রত্যাশার চাইতে একটু খানি বেশি বাউন্স আদায় করে নেন সাকিব।

সেই বলটি পুল শটে সীমানা পার করতে চাওয়া নিকলসকে থামতে হয়েছে মিড-অনে। ক্যাচ লুফে নেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। পরের কাজটুকু অবশ্য করেছেন শরিফুল ইসলাম। নিজের দ্বিতীয় স্পেলে বোলিং করতে এসেই ছেলেখেলা শুরু করেন কিউইদের মিডল অর্ডার নিয়ে। গুনে গুনে তিনখানা উইকেট গিয়েছে তার পকেটে।

তবুও খানিকটা লড়াই করবার পুঁজি সংগ্রহের পথ খোঁজার চেষ্টা নিউজিল্যান্ডের। সেই পরিকল্পনার মূল কেন্দ্রবিন্দু টম ব্ল্যান্ডেল। কিন্তু সাকিব এদিন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপকে মাথা তুলে দাড়াতেই দেবেন না তিনি।

অফস্ট্যাম্পে ফুলার লেন্থের বল। সেটা সজোরেই চালালেন ব্লান্ডেল। খায়েশ তার একটি বাউন্ডারি। তবে পয়েন্টে যে দাঁড়িয়ে চৌকশ ফিল্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। তার হাত আর ফাঁকি দেওয়া যায়নি। ব্ল্যান্ডেলের বিদায়ে স্বল্প রানে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কাটা বাস্তবে রুপান্তরিত হয়।

এই তিন উইকেট শিকারের পথে তানজিম সাকিব বল করেছেন সাত ওভার। তার খরচা মাত্র ১৪ রান। উইকেটের দুয়ার খুলে দেওয়া, গুরুত্বপূর্ণ উইকেট শিকার করা আর রান খরচে কিপটেমির পুরষ্কারটা পেয়েছেন সাকিব। হয়েছেন ম্যাচ সেরা।

তানজিম হাসান সাকিবের অভিষেক হয়েছে খুব বেশিদিন হয়নি। ইতোমধ্যেই তিনি নজর কাড়তে শুরু করেছেন তিনি। ইতোমধ্যেই দলে যেন থিতু হওয়ার রাস্তা তৈরি করে নিচ্ছেন সাকিব। হাসান মাহমুদকে বেশ চাপের মধ্যেই রেখেছেন তিনি। ব্যাট হাতেও অবদান রাখার মত সামর্থ্যও রয়েছে তার।

বাংলাদেশের টেলএন্ডারদের ব্যাটিং নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল বহুদিনের। সেই শূন্যস্থান পূরণের আশাই দেখাচ্ছেন তানজিম হাসান সাকিব। বোলিংয়ের অস্ত্রাগারেও রয়েছে বৈচিত্র‍্য। ব্যাট হাতেও ক্যামিও খেলার দক্ষতা নিয়ে সাকিব ক্রমশ হয়ে উঠছেন ভরসার প্রতীক। স্রেফ ধারাবাহিকতাই প্রত্যাশা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link