শাহরুখ খান, শোয়েব আখতার ও হারিস রউফ

পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির ছেলে হারিস রউফ। এই সেই রাওয়ালপিন্ডি যেখান থেকে উঠে এসেছেন পাকিস্তানের গতিদানব শোয়েব আখতার। দুইজন দুই প্রজন্মের প্রতিনিধি হলেও, বোলিং অ্যাকশনে বেশ মিল। গতিতে যেন ‘রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস’কে টেক্কা দেওয়ার চ্যালেঞ্জটা নিয়েই ক্রিকেটে পদার্পণ করেছেন হারিস।

তাই রাওয়ালপিণ্ডির সূত্র ধরেই হোক কিংবা গতির সূত্র ধরে বারেবারে হারিসকে কিংবদন্তি শোয়েবের সাথে তুলনা করে বসেন অনেকেই। অবশ্য শোয়েব আখতার কেবল পাকিস্তান নয়, গোটা ক্রিকেটবিশ্বেই একজন বোলিং নক্ষত্রের নাম, সেই জায়গায় নিছক তরুণ হারিসকে তাঁর সাথে তুলনা দিয়ে দেওয়াটা কিছুটা দৃষ্টিকটুই বটে। অন্তত বেশিরভাগ ক্রিকেটবোদ্ধার তাই মত।

চলমান পাকিস্তান এবং ইংল্যান্ডের মধ্যকার টিটোয়েন্টি সিরিজটি একটি রোমাঞ্চকর সমাপ্তির জন্য প্রস্তুত। সিরিজটির বর্তমান স্কোরলাইন পাঁচটি ম্যাচ শেষে  পাকিস্তানের হাতে তিনটি জয় এবং ইংল্যান্ডের দুইটি জয়। সামনে আছে আরও তিনটি টি- টোয়েন্টিটি ম্যাচ। চতুর্থ টি- টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাকিস্তানের তিন রানের নাটকীয় জয়ের পেছনে পাকিস্তানের পেস আক্রমণ দুর্দান্ত ভূমিকা রেখেছে।

সেই ম্যাচে মোহাম্মদ নওয়াজ এবং হারিস রউফ তিনটি করে, মোহাম্মদ হাসনাইন দুটি এবং মোহাম্মদ ওয়াসিমও একটি করে উইকেট তুলে নিয়েছেন। ম্যাচটির ১৮ তম ওভারের পর থেকেই একেবারে হারতে বসা ম্যাচটার মোড় ঘুরে যায় পাকিস্তানের দিকে। আর এই ঘটনার নেপথ্যে নায়ক হারিস রউফ।

আগের ওভারে মোহাম্মদ হাসনাইনকে পিটিয়ে ছাতু বানিয়ে ২৪ রান তুলে নিয়েছিলো ইংরেজরা। ১২ বলে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ৯ রান। আপাতদৃষ্টিতে পাকিস্তানের ম্যাচ শেষ সেখানেই। ইংল্যান্ডের সামনে ছিলো সহজ জয়ের হাতছানি।

কিন্তু, নিমিষেই যেন ভাগ্যের চাকা পাকিস্তানের দিকে ঘুরে গেল। কারণ ১৯তম ওভারে দুই বলে ২ টি উইকেট শিকার করে ইংরেজ ঘাঁটিতে থাবা বসান হারিস, আর তাতেই জিততে থাকা ম্যাচটা হাতছাড়া হয়ে যায় তাঁদের। আর একটু হলে হ্যাটট্রিক করতেই যাচ্ছিলেন হারিস!

ম্যাচটির পর ভক্তদের হারিসে মুগ্ধতার রেশ যেন কাটছেই না। প্রশংসায় ভাসছেন এই ফাস্ট বোলার। একটি ইউটিউব লাইভ সেশন চলাকালীন, একজন ভক্ততো পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক সালমান বাটকে গতিদানব শোয়েব আখতারের সাথে মিলিয়ে একটি অস্বাভাবিক প্রশ্নই করে বসলেন।

সেই ভক্তটির প্রশ্ন ছিল, ‘হারিস ধারাবাহিক ভাবে সাথে ১৫০ কিলো/ঘণ্টা এর বেশি গতিতে বোলিং করেন, তাকে বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে অন্যতম দ্রুততম বোলার হিসাবে দেখা হয়। তাহলে হারিস কেন শোয়েব আখতারের মতো বিখ্যাত হতে পারছেন না?’

ভক্তের এমন প্রশ্নের উত্তরে বাট বলেন, ‘এটা শাহরুখ খান কিংবা অমিতাভ বচ্চনের সাথে অন্য যে কোনও ভারতীয় নায়কের তুলনা করার মতো বিষয়। কেউ রাতারাতি এমন হতে পারেনা। শোয়েব আখতারের মতো ক্রিকেটাররা টেস্ট ম্যাচকে ২-৩ ওভারেই বদলে দিতে সক্ষম। হারিস তো টেস্ট খেলেননি। আপনি এভাবে চট করে বিখ্যাত হয়ে উঠবেন না।’

তিনি আরও বলেন যে, ‘হারিসও বিখ্যাত, তিনি পাকিস্তানের একজন তারকা। কিন্তু আপনি ২-৩ ম্যাচে শোয়েব আখতার কিংবা ওয়াসিম আকরাম হতে পারবেন না, এবং শুধুমাত্র একটি ফরম্যাটে খেললেই চলবে না।’

অর্থাৎ বাটের মতে হারিসকে টি- টোয়েন্টির মতো ওয়ানডে এবং টেস্টেও নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। যেমন টেস্টে টানা চার-পাঁচদিন একজন ফাস্ট বোলারকে ধারাবাহিকভাবে সকাল, বিকেল, সন্ধ্যায় ১৫০ কিমি/ঘণ্টায় বল করার দক্ষতা রাখতে হয়। এটা কেবল টি- টোয়েন্টির চার ওভারের দায়িত্বের মতো নয়। মোদ্দাকথা হলো এক্ষুনি হারিস রউফকে কেবল একটি ফরম্যাটের ভিত্তিতে শোয়েব আখতারের মতো কিংবদন্তির আসনে অধিষ্ঠিত করাটা যুক্তিহীন।

সবশেষ কথা হলো ফাস্ট বোলিং যদি একটি শিল্প হয়, তবে এর সবচেয়ে বড় শিল্পী তো ওয়াসিম-ওয়াকাররাই। তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মে এই শিল্পের গুরুদায়িত্বটা শাহিন শাহ আফ্রিদি, মোহাম্মদ হাসনাইন, নাসিম শাহ ও হারিস রউফদের ওপরই ন্যস্ত হয়েছে। অনুজদের অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত এই বোলাররাই নিঃসন্দেহে পাকিস্তানের বর্তমান শক্তিশালী পেস  আক্রমণের প্রাণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link