কৃপণতার জাদুকর সামাদ

‘সামাদ’ নামটা শুনলেই সবার আগে নিশ্চয়ই ‘জাদুকর সামাদ’ খ্যাত ফুটবলার সৈয়দ আবদুস সামাদের কথা মাথায় আসবে। শোনা যায়, ফুটবলটাকে এই উপমহাদেশে তিনি রীতিমত শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটেও কিন্তু একজন সামাদ আছেন, যিনি বাঁ-হাতি স্পিনের ঠিক শিল্পী না হলেও পরিশ্রমী। আর ঘরোয়া ক্রিকেটে দীর্ঘকালের এই পারফরমার এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) কৃপণতাকে নিয়ে গেছেন শিল্পের পর্যায়ে।

গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ জিতে প্লে অফ খেললেও পুরো বিপিএল জুড়েই খুলনা টাইগার্সের পারফর্মেন্স ছিল মলিন। ফলে বিপিএলে এই দলটির প্রতি নজর খুব কমই পড়েছে। খুলনার হয়ে পুরো টুর্নামেন্টে অবিশ্বাস্য বোলিং করা নাবিল সামাদও ছিলেন সবার চোখের আড়ালে। বাংলাদেশের ৩৫ বছর বয়সী এই স্পিনার এই আসরে ধাক্কা মেরেছেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বেদবাক্যেই।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মোদ্দাকথাই তো ব্যাটসম্যানরা চার ছয়ের বন্যা ভাসিয়ে দিবেন। বোলাররা তাঁদের সর্বোচ্চ দিয়ে তা ঠেকানোর চেষ্টা করবেন। তবে এবারের বিপিএলে নাবিল সামাদ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের এই তত্বটাকে ভেঙে চুরে গড়েছেন। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও রান করাটকে ব্যাটসম্যানদের জন্য একটা সংগ্রামে পরিণত করেছেন।

যদিও একটি ম্যাচেও তাঁকে নিয়ে নূন্যতম আলোচনা হয়নি। হয়তো ৩৫ বছর বয়সী এই স্পিনারকে বাংলাদেশ ক্রিকেট আর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় রাখেনা বলেই হয়তো এমন অবিচার। এই আসরে নাবিল সামাদের বোলিংয়ের দুই একটা উদাহরণ দেয়া যাক।

মিরপুরে সিলেটের বিপক্ষে খুলনার ম্যাচ। আগে ব্যাট করতে নামা সিলেট সানরাইজার্সকে মাত্র ১৪২ রানেই আঁটকে দেয় খুলনা। সেই ম্যাচে নিজের পুরো ৪ ওভার বোলিং করেছিলেন নাবিল সামাদ। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ২৪ টি বল করে খরচ করেছিলেন মাত্র ১০ রান। সাথে এই টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ ব্যাটিং করা কোলিন ইনগ্রামের উইকেটটিও নিয়েছিলেন।

নাবিল সামাদ এখানেই থেমে যাননি। একইকাজ তিনি আবার করেছেন শক্তিশালী মিনিস্টার ঢাকার বিপক্ষে। সেদিনও ৪ ওভার বোলিং করে খরচ করেছেন মাত্র ১০ রান। ইকোনমি রেট ২.৫০। সেইদিন নিজের করা ২৪ বলের মধ্যে ১৯ টিই করেছেন ডট। সেদিনও তুলে নিয়েছিলেন তামিম ইকবালের উইকেট।

তবে এরচেয়েও অবাক করা কান্ড করেছেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে ম্যাচে। মিরপুরে সেদিন এলিমেনেটর ম্যাচ ছিল হাই স্কোরিং। আগে ব্যাট করে চট্টগ্রাম করেছিল ১৮৯ রান। খুলনার অন্য বোলাররা যখন ওয়ালটন, মিরাজদের সামনে দিশেহারা সেই সময়য়েও নিজের জায়গা থেকে সড়তে নারাজ এই স্পিনার। সেই হাই স্কোরিং ম্যাচেও নাবিল সামাদ চার ওভার বল করে খরচ করেছেন মাত্র ১৫ রান। তুলে নিয়েছিলেন ৩৯ রান করে ভয়ংকর হয়ে উঠতে থাকা কেনার লুইসকে।

অর্থাৎ পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই এই কৃপণতা বজায় রেখেছেন নাবিল সামাদ। একমাত্র কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে ম্যাচটিতে ৩২ রান খরচ করেছেন। এছাড়া সবমিলিয়ে ৭ ম্যাচ খেলে এই স্পিনারের ঝুলিতে আছে ৬ উইকেট। এই আসর শেষে তাঁর ইকোনমি রেট ছয়ের নিচে।

এবারের বিপিএলে অন্তত ১২ ওভারে বোলিং করেছেন এমন বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে ইকোনমিক্যাল বোলিং করেছেন এই স্পিনার। ৭ ম্যাচে ২৬ ওভার বল করে খরচ করেছেন মাত্র ১৩২ রান। টুর্নামেন্ট জুড়ে তাঁর ইকোনমি রেট মাত্র ৫.০৭। এমনকি সাকিব আল হাসানের ইকোনমি রেটও তাঁর চেয়ে খানিকটা বেশি। এই বিপিএলে সাকিবের ইকোনমি রেট ছিল ৫.১৩। সাকিব অবশ্য তুলে নিয়েছেন ১৫ উইকেট।

নাবিল সামাদ যে এই বিপিএলে প্রথম এমন কীর্তি দেখালেন তা ঠিক বলা যাবেনা। এই স্পিনার সেই বয়সভিত্তিক দল থেকেই তাঁর এই বিশেষত্ব দেখিয়ে আসছেন। যদিও বাংলাদেশের হয়ে কখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সুযোগ পাননি নাবিল। তবে তাঁর পুরো টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ইকোনমি রেটও মাত্র ৬.৬০। যেই ফরম্যাটে হিসেব হয় চার-ছয়ের সেখানে নাবিল যেন প্রতিটি রান গুণে গুণে খরচ করেন।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link