সামিত ‘দ্য গেম কন্ট্রোলার’

সামিত সোম এক কমপ্লিট মিডফিল্ডার। যাকে হয়ত আপনি খুঁজে পাবেন না খেলায়, কিন্তু সত্যিকার অর্থে তিনি নিজেই পুরো গেম।

সার্জিও বুস্কেটসকে নিয়ে স্পেনের কোচ ভিসেন্তে দেল বক্স একবার বলেছিলেন, ‘তুমি খেলা দেখো, তুমি বুস্কেটসকে দেখতে পাবে না। তুমি বুস্কেটকে দেখো, তুমি পুরো খেলাটাই দেখতে পাবে।’ বাংলাদেশ ফুটবলের ক্ষেত্রেও এখন এই কথাই প্রযোজ্য। আপনি হয়ত হামজা চৌধুরীর মত করে সামিতকে পুরো ম্যাচে খুঁজে পাবেন না। কিন্তু আপনি যখন সামিতকে দেখবেন, তখন বুঝবেন তিনিই বাংলাদেশের মধ্যমাঠের মস্তিষ্ক।

হামজা বন্দনায় গোটা দেশে গণজোয়ার। তিনিই যেন বদলে দিয়েছেন সমস্ত দৃশ্যপট। তার ইম্প্যাক্ট নজর কাড়ে, হৃদয়ে জায়গা করে নেয়। কিন্তু সামিত সোম ওই বুস্কেটেসের মত করেই পুরো ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজের পায়ের ইশারায় তদারকি করেন, খানিকটা নিরবে। এই তো বছর খানেক আগে, বাংলাদেশের মধ্যমাঠ বলতে কিছুই ছিল না- এমন বাক্য ব্যবহারে ভুল কিছু বলাও হয় না।

কোন নিয়ন্ত্রণ নেই, সৃজনশীলতা নেই, ভরসা নেই, বুদ্ধিমত্তা নেই- খালি নেই, নেই আর নেই। কিন্তু হামজা যেমন ভরসার দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে গেছেন, ঠিক তেমনি সামিত বনে গেছেন সেই বুদ্ধিমান সৃজনশীল কারিগর। যার নিজের গতির উপর নির্ধারিত হয় ম্যাচের গতি। যার পড়ে যাওয়াতেও থাকে ম্যাচ জয়ের ট্যাকটিস।

হংকংয়ের বিপক্ষে ঘরের মাঠের সেই ম্যাচটি দারুণ পুড়িয়েছে কানাডায় মাইনাস তাপমাত্রায় থাকা সামিতকে। তার ওই লেট হেডারে সমতায় ফিরেও বাংলাদেশ হেরেছিল ম্যাচটি। যার মূল কারণ, কার্যকরভাবে বাংলাদেশ দল সময় অপচয় করতে পারেনি। ফুটবল ময়দানে ফলাফল পক্ষে থাকলে কি করে প্রতিপক্ষের আক্রমণের ধারায় ব্যঘাত ঘটানো যায়- সেটাও তো ফুটবলীয় কৌশলের অংশ। সামিত ভারতের বিপক্ষে বহুবার তেমন পন্থা অবলম্বন করেছেন, সতীর্থদের বলে দিয়েছেন কি করতে হবে।

দিনশেষে ম্যাচ জেতাই মুখ্য। কিভাবে জিতলেন সেটা আলোচনায় আর থাকে না। শুধু যে চিকন বুদ্ধীই ব্যবহার করেছেন সামিত তা কিন্তু নয়। বাংলাদেশ পুরোটা ম্যাচ জুড়েই মিড ব্লক করতে চেয়েছে। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন সামিত সোম। রক্ষণের এক্সট্রা লেয়ার প্রোটেকশন দিয়ে গেছেন হামজা। ডার্টি ওয়ার্ক করেছেন সোহেল রানা। আর যতক্ষণ অবধি মধ্যমাঠে বলের নিয়ন্ত্রণ নিজের পায়ে রাখা যায়, প্রতিপক্ষের ধৈর্য্যকে চ্যালেঞ্জ জানানো যায়, তার সবটাই করেছেন সামিত সোম।

আগের ম্যাচগুলোতে তো তার সৃজনশীলতাও দেখিয়েছেন। ডিফেন্স চেড়া থ্রু পাস, একটা টার্নে পুরো প্রতিপক্ষকে ছিটকে ফেলা- সেসব তো তিনি সিদ্ধহস্ত। সামিত সোম এক কমপ্লিট মিডফিল্ডার। যাকে হয়ত আপনি খুঁজে পাবেন না খেলায়, কিন্তু সত্যিকার অর্থে তিনি নিজেই পুরো গেম। হামজার মতই তিনিও বাংলাদেশ ফুটবলের এক অবিশ্বাস্য প্রাপ্তি।

লেখক পরিচিতি

রাকিব হোসেন রুম্মান

কর্পোরেট কেরানি না হয়ে, সৃষ্টি সুখের উল্লাসে ভাসতে চেয়েছিলাম..

Share via
Copy link