লেগ স্পিনাররা এখন যেকোনো টি-টোয়েন্টি দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। আফগানিস্তানের রশিদ খান, শ্রীলঙ্কার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, ভারতের যুজবেন্দ্র চাহালের মত পাকিস্তানের রয়েছে শাদাব খান। কিন্তু রশিদ, হাসারাঙ্গাদের মত শাদাব ততটা লাইমলাইটেও থাকেননা খুব একটা। হয়তো ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) না খেলার কারণেই তাকে নিয়ে অন্যদের মত আলোচনা করা হয় না।
তবে নীরবে নিভৃতে নিজের কাজটা ভালভাবেই করতে জানেন পাকিস্তানি তারকা শাদাব খান। বাবর আজমের দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় তিনি। চলমান এশিয়া কাপে আরো একবার নিজেকে প্রমাণ করেছেন এই ডানহাতি। এই যেমন ফাইনাল নিশ্চিত করার ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে শাদাব খানেী বোলিং ফিগার এমন – ৪ ওভার, ২৭ রান, এক উইকেট। শুধু এই ম্যাচ নয়, প্রতিটা ম্যাচেই তিনি পার্থক্যটা গড়ে দিয়েছেন।
দুই ওপেনারের ঝড়ো শুরুতে পাওয়ার প্লেতে ৪৮ রান তুলেছিল আফগানিস্তান। কিন্তু শাদাব খান বোলিংয়ে আসতেই থেকে যায় রানের গতি। মোহাম্মদ নওয়াজকে সঙ্গী করে আফগান ব্যাটারদের খোলসবন্দী করেন তিনি। তাঁর প্রথম তিন ওভারের আট বলে কোন রান-ই নিতে পারেনি আফগানিস্তান; আবার ইনফর্ম ব্যাটসম্যান নাজিবউল্লাহ জাদরানকে আউট করে মূল কাজটা করেন এই লেগি।
নিজের শেষ ওভারে এক ছয়ে মোট এগারো রান হজম করেছেন। তা না হলে শাদাব খানের বোলিং পারফরম্যান্স আরো অনেকটা ফুটে উঠতো ম্যাচে স্কোরকার্ডে। অবশ্য ৪ ওভার ২৭ রান আধুনিক টি-টোয়েন্টিতে দুর্দান্ত বোলিংয়ের নিদর্শন-ই বটে।
শাদাব খানের এই দুর্দান্ত বোলিংয়ের শুরুটা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে। সেদিন দল হারলেও তিনি ছিলেন সেরা ছন্দে। চার ওভার হাত ঘুরিয়ে কোন উইকেট না পাননি ঠিকই, কিন্তু খরচ করেছেন মাত্র ১৯ রান। ১৪৭ রান করার পরেও পাকিস্তান যে শেষপর্যন্ত লড়াই করতে পেরেছে, সেটির বড় কারণ শাদাব খানের এই হিসেবি বোলিং।
গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে অবশ্য শাদাব খানের বল বুঝতেই পারেনি হংকংয়ের ব্যাটসম্যানেরা। ইনিংসের সপ্তম ওভারে শাদাব খানের হাতে বল তুলে দিয়েছিলেন পাক অধিনায়ক। এরপর মাত্র ১৬ বলে হংকংয়ের এশিয়া কাপ মিশনে সমাপ্তি টেনে দেন তিনি। ৮ রানের বিনিময়ে চার উইকেট তুলে নিয়ে শাদাব খান গড়েছিলেন রেকর্ড। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আয়োজিত এশিয়া কাপে সেরা বোলিং ফিগারের মালিক এখন তিনি।
সুপার ফোর রাউন্ডেও ধার কমেনি শাদাব খানের। ভারতের বিপক্ষে মর্যাদার ম্যাচে দলের অন্য বোলাররা যখন দুইহাতে রান বিলিয়েছিলেন তখন প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের রানের গতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন তিনি। রান বন্যার ম্যাচে ৪ ওভারে দিয়েছেন ৩১ রান, সেই সাথে তুলে নিয়েছেন দুই সেট ব্যাটসম্যান – লোকেশ রাহুল এবং রিষাভ পান্তের উইকেট।
সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত খেলা চার ম্যাচেই শাদাব খান ছিলেন দলের অন্যতম সেরা বোলার। ইনিংসের মাঝের ওভার গুলোতে বিপক্ষ দলের রান আটকানো কিংবা গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেয়া – দুই কাজেই সমান দক্ষতা দেখিয়েছেন এই লেগ স্পিনার। এছাড়া তাঁর পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতাও নজরকাড়া। অবশ্য বোলিং সঙ্গী মোহাম্মদ নওয়াজ দারুণ ফর্মে থাকায় তিনি নিজের সেরাটা দিতে পারছেন বেশ সহজেই।
যদিও এখন পর্যন্ত নিজের ব্যাটিং সত্তার প্রকাশ ঘটাতে পারেননি শাদাব খান। তবে পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) ব্যাট হাতেও ঝড় তুলতে দেখা গিয়েছে তাকে। ফিল্ডিংয়েও শাদাব খান বেশ মনোযোগী। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং – তিন বিভাগেই তাঁর মত এমন কার্যকরী ক্রিকেটার খুঁজে পাওয়াটা পাকিস্তান দলের জন্য আশীর্বাদ হয়েই এসেছে।
এশিয়া কাপের মঞ্চে পাকিস্তান সর্বশেষ শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছিল ২০১২ সালে। দশ বছর পর আরো একবার মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে উন্মুখ হয়ে আছে দলটি। শিরোপা জয়ের বাকি পথটা নির্বিঘ্নে পার করার জন্য শাদাব খানের এমন ফর্ম বড্ড প্রয়োজন পাকিস্তানের। তিনি নিজেও হয়তো দুর্দান্ত শুরুর পর শেষটা রাঙিয়ে তোলার অপেক্ষায় আছেন।