এ এক জটিল সমস্যা। আপনি সাকিব আল হাসানকে যেন বাদই দিতে পারবেন না। বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা হবে আর সেখানটায় সাকিব থাকবেন না তা কি করে হয়। তিনি যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে রেখেছেন কিংবা ঘটনা উল্টো। সাকিব অনন্য, সাকিব সবার সেরা।
জৈষ্ঠ্যের তীব্র গরম। আম-কাঠাল পাঁকাতে যেন সূর্য্যি মামা বদ্ধ পরিকর। তিনি যেন বুঝিয়ে দিচ্ছেন দুঃখের শেষে আসে আনন্দ। এই তীব্র গরমের পর পাকা আমের গন্ধ খানিক বাদেই মৌ মৌ করবে চারিদিক। তবে আমের মৌসুম বছরে একবার হলেও সাকিবের মৌসুম বার মাস। তিনি সবখানেই সব সময় বিরাজমান। এই তীব্র গরমেও তিনি হুট করে দলে এসেও আলোচনায় নিজের ভ্যারিয়েশন নিয়ে।
সাকিব সব সময়ই নিজেকে বাকি সবার থেকে আলাদা করেই রাখতে পছন্দ করেন। তিনি যেন ক্যারিয়ারের শেষ দিকে এসেও নিজের ঝুলিতে নতুন কিছু যুক্ত করতেও দ্বিধা বোধ করেন না। প্রায় ছয় মাস পর টেস্টে বল হাতে সাকিব। স্বাভাবিকভাবেই সবার প্রত্যাশা যখন একেবারেই ক্ষীণ তখনও সাকিব মুগ্ধতা ছড়াতে ব্যস্ত। শুরুর দশ ওভারে পাঁচ মেডেন তুলে নেন।
কিন্তু ম্যাচ শুরুর আগেও তো বোলিং অনুশীলন করতে দেখা যায়নি সাকিবকে। যাবেই বা কি করে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট তো সাকিবের খেলার কথাই ছিল না। হানা দিয়েছিল করোনা। আবারও খানিক আলোচনার জন্ম দিয়ে দলের সাথে যুক্ত হলেন সাকিব। ঠিকঠাক অনুশীলন করার সময়টুকু পাননি তিনি। তাতে কি? সাকিবের সবচেয়ে বড় অস্ত্র তাঁর মস্তিষ্ক আর তাঁর মানসিকতা।
তিনি বাংলাদেশের অন্যসব খেলোয়াড়দের থেকে যোজন যোজন এগিয়ে মানসিকতায়। তিনি অদম্য! তিনি দুর্বার! তিনি হার মেনে নিতে নারাজ। তিনি যেন সদা প্রস্তুত থাকেন দলকে নিজের সেরাটা দেওয়ার। এই যে এবার তো রীতিমত আলোড়ন সৃষ্টি করে দিলেন ‘রিষ্টস্পিন’ বোলিং করে। সাকিব যে বুদ্ধিমান সে প্রমাণই যেন দিলেন আরও একবার। তিনি চাইলেই যে সব পারেন সেটারও একটা নজির।
সাকিব বরাবরই বেশ মেপে বোলিং করেন। তিনি কন্ডিশন থেকে খেলোয়াড়, পিচ থেকে খেলার মোমেন্টাম সবকিছু পর্যালোচনা করেই যেন এক একটি অগ্নিগোলক ছুড়ে মারেন প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের দিকে। চট্টগ্রামের মত ‘ফ্ল্যাট’ পিচ, ব্যাটারদের স্বর্গরাজ্য বলতে যা বোঝায় তেমন একটি পিচেও তিনি কার্য্যকর একজন বোলার। ক্রিকেটটা যেন শুধুমাত্র দক্ষতার নয় সেটাও সাকিব বার বার দেখিয়ে দেন।
এই খেলাটা খেলতে হয় বুদ্ধি দিয়ে, মস্তিষ্কের সঠিক ব্যবহার করে। সময় বুঝে কখনো ‘ফ্লাইট’, আবার কখনো ‘আর্মবল’। কখনো আবার হাতের উচ্চতার তারতম্য ঘটানো। সেই সাথে লাইন আর লেন্থে মেনে বোলিং করে যান তিনি। তবে এবার লেগ স্পিন বল করে খুব বেশি আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন সাকিব। এর আগেও অবশ্য গেল বছর পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে দেখা গেছে তাঁকে লেগ স্পিন করতে।
তবে এবারেরটায় যেন এসেছে আরও একটু পরিপক্কতা। আরও বেশি তীক্ষ্ণ হওয়ার পাশাপাশি, টার্নটাও হয়েছে বেশ। ক্যারিয়ারের শেষ দিকে এসে নতুন এক অস্ত্র যুক্ত করার চেষ্টা করছেন সাকিব, আর তা নিয়ে একটু সোরগোল হবে না তা কি করে হয়। মানুষটা তো সাকিব আল হাসান। তবে এই লেগ স্পিন বিষয়টা যদি তিনি পুরোপুরি আয়ত্ত্ব করে ফেলতে পারেন তাহলে আখেরে লাভটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের।
আর যে ক’বছর তাঁর সার্ভিসটা পাওয়া যাবে সে ক’বছর অন্তত আরও বিধ্বংসী এক সাকিবের দেখা মিলবে। কে জানে হয়ত ‘ফিঙ্গার স্পিনার’ সাকিব বনে যেতে পারেন ‘চায়নাম্যান’। মানুষটা সাকিব বলেই হয়ত এই প্রত্যাশার বাড়তি সাহসটুকু করা যায়।