সাকিব, নিলাম ও কাণ্ডজ্ঞান

ক্রিকেটে স্মার্টনেসটা জরুরী। যেটা সাকিব আল হাসানের মধ্যে আছে। প্রথমবারের মত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) নিলামে দল পাননি। তাতে তাঁর জন্য অন্তত পৃথিবী শেষ হয়ে যায়নি। তিনি দিব্যি অনুশীলন করলেন মিরপুরে, হাসিমুখে – গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে দিলেন। বিষয়টা এমনই সাধারণ।

কারণ বাস্তবতা সাকিবও বোঝেন। বয়স, বেজ প্রাইজ, ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর চাহিদা আর ইমপ্যাক্ট মিলিয়ে সাকিব আল হাসান এখন আর আইপিএলের জন্য এতটাও হট কেক নন, যতটা তিনি পাঁচ-ছয় বছর আগে ছিলেন। আর এবার তো তিনি দল পেলেও সবগুলো ম্যাচ খেলতে পারবেন না – সেটা দল মালিকদেরও অজানা ছিল না।

ফলে, তাঁর পেছনে কেউ বিনিয়োগ করেনি। সেটা নিয়ে দর্শক-সমর্থকরা হতাশ হতেই পারেন। কিন্তু, সেই আবেগে কেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররাও গা ভাসাবেন? সাকিব আইপিএলে দল পায়নি, তাতে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত কিংব রুবেল হোসেনদের আবেগ দেখানোর কারণ কি? যৌক্তিকতাই বা কি! এই ধরণের কাণ্ডজ্ঞানহীনতার মানেই বা কি!

সাকিব আর রুবেল প্রায় সমসাময়িক ক্রিকেটার। রুবেল যে বার অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ খেলেছেন, সেবার সম্ভবত ভারতের অধিনায়ক ছিলেন বিরাট কোহলি। তখন থেকেই দু’জনের একটা রেষারেষি ছিল। তার জেরটা ২০১১ বিশ্বকাপ কিংবা ২০১৫ বিশ্বকাপেও দেখা যায়। কিন্তু, সেই বিরাট কোহলি আজ কোথায় আর কোথায় রুবেল হোসেন!

বিরাট কোহলি যেখানে মাঠে ও মাঠের বাইরে নিজেকে স্মার্ট করে গড়ে তুলেছেন সেটা রুবেলরা পেরেছেন কতটা! এই যে ভারতের বোর্ডের সাথে বিরাট কোহলির নানারকম সমস্যা বলে গুঞ্জন উঠলো, রোহিত শর্মা এমনকি সৌরভ গাঙ্গুলির সাথেও তাঁর সমস্যা আছে বলে বলাবলি হল – তাতে বিরাট কোহলিকে কখনও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবেগ ঢালতে দেখা গেছে? যায়নি। কারণ, তিনি চূড়ান্ত পেশাদার।

আর আমাদের রুবেল-মোসাদ্দেকরা কি করেন, অন্যের হয়ে ঢাল ধরেন। অথচ তাঁদেরই এতদিনে সাকিব বা বিরাটদের মত যোগ্য হওয়ার কথা। আচ্ছা, এবার আইপিএলে তো স্টিভেন স্মিথও কোনো ঠিকানা পাননি। বা গেল বারের কলকাতা নাইট রাইডার্সের অধিনায়ক ইয়ন মরগ্যানকেও কেউ নেয়নি। দেখেছেন, মার্নাস লাবুশেনকে কিছু বলতে ফেসবুকে। বা, বেন স্টোকস কি ইয়ন মরগ্যানের পক্ষে গলা ফাঁটিয়েছেন? অস্ট্রেলিয়া দলে নতুন আসা ক্যামেরন গ্রিন ছেলেটাই কেন নীরব! বড় ভাই দল না পাওয়াতে কেন কোনো আবেগ ছুয়ে গেল না তাঁদের? কারণ, তাঁরা পেশাদার। আইপিএলে দল পাওয়া না পাওয়া ওই দেশে কোনো জাতীয় সমস্যা না।

আবার একই সাথে এটাও ঠিক যে, আইপিএলে খেলতে সচরাচর স্টিভেন স্মিথ টেস্ট মিসও করবেন না। উনি নিজেও সাকিবের মত আইপিএলকে এতটা গুরুত্ব দেয় না।

আচ্ছা, অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের প্রসঙ্গে একটা ব্যাপার মাথায় আসলো। আচ্ছা, এলিসা হিলি কেন ফেসবুক বা টুইটারে স্বামীর ক্রিকেট খেলা-টেলা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেন না? অর্জনের দিক থেকে তো, তিনি স্বামী মিশেল স্টার্কের থেকে বেশ এগিয়ে আছেন। কাগজে কলমে, এলিসা হিলি তাঁর স্বামীর চেয়ে বিশ্বকাপ জয়ের চেয়ে বড় ব্যবধানে এগিয়েই আছেন। তিনি জিতেছেন ছয়টি বিশ্বকাপ, স্টার্ক জিতেছেন দুটি বিশ্বকাপ।

তাও এলিসা হিলি কিচ্ছু বলেন না,  কারণ তিনি পেশাদার এবং জাজমেন্টাল নন। যে কাজটা আমাদের এখানে একজন ক্রিকেটারের স্ত্রী প্রায় লম্বা সময় ধরেই করে আসছেন, ক্রিকেটের সাথে সামান্যতম সম্পর্ক না থাকার পরও। আসলে জাতিগত ভাবে কেন যেন বাঙালি বেশ জাজমেন্টাল। তার রেশ এখানেও পড়েছে।

এত-শত আলোচনায় সাকিবের এতদিনকার অর্জনের মুকুটে হয়তো কোনো মরচে ধরাবে না, তাঁর দেশের মানুষের ক্রিকেট মানসিকতার দিকে বারবারই আঙুল তুলবে সব সময়ের মত।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link