প্রতিটা ম্যাচই সাকিবের রেকর্ড গড়ার মঞ্চ

জিম্ববুয়ের হারারেতে এক ছোকড়ার ব্যাট হাতে বাইশ গজে আগমন। নিষ্প্রোজনীয় এক ম্যাচ। সিরিজ আগে থেকেই হেরে বসে আছে বাংলাদেশ। তেমন এক ম্যাচেই বিশ্ব ক্রিকেটে আবিভার্ব ঘটে তার। এরপর তো নানন্দিক এক উপন্যাস লেখা হলো। দাপট দেখিয়ে ইতিহাসের পাতায় রাজত্ব করা হলো।

সেই দাপট তো এখনও থেমে যায়নি। সাকিব আল হাসান যেন এখনও বিকেল বেলার শেষ সূর্য হয়ে তাপ বিকিয়ে যাচ্ছেন। শেষ বিকেলে একটু খানি উষ্ণতার পরশ বুলিয়ে দিচ্ছেন। সেই যে ২০০৬ সালে সুদূর হারারে তে তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরু। সেই ক্যারিয়ারটা দেখতে দেখতে ছুঁয়ে ফেলেছে ১৭তম বছরের পাতা।

সেই ম্যাচে স্কোয়ার লেগের খানিক পেছনে বল ঠেলে দিয়ে নিজের রানের খাতা খুলেছিলেন তিনি। গুটি গুটি পায়ে চলতে চলতে সেই রান আজ পেরিয়ে গেছে ১৪০০০ আন্তর্জাতিক রানের মাইলফলক। আফগানিস্তানের বিপক্ষে, সজোরে চালানো ব্যাটের খোঁচা লেগে, খুঁজে নিয়েছে সীমানা। উইকেটরক্ষক চেষ্টা করেও নাগাল পাননি সেই বলের।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘পোস্টার বয়’ তখনই পেরিয়ে গেছেন মাইলফলক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনিই এখন বিরল এক রেকর্ডের মালিক। তার ধারে কাছে নেই কেউ। একই সাথে ১৪ হাজার রান ও ৬০০ এর বেশি উইকেট শিকার করা একমাত্র ক্রিকেটার একমাত্র সাকিব আল হাসান। অনন্য হওয়ার তীব্র ক্ষুধা তার।

সেই ক্ষুধার শুরুটাও সেই ২০০৬ সালে খেলা জিম্বাবুয়ের সাথেই। সেবার তিনি, উপড়ে ফেলেছিলেন এলটন চিকুম্বুরার উইকেট। এরপর ক্রমশ তার উইকেটের পাশের ট্যালিটায় এক এক করে নতুন অংক যুক্ত হয়েছে। বর্তমানের তা বেশ বড় এক সংখ্যা।

সাকিবের নামের পাশে এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ৬৭৪টি উইকেট। ১৭টি বছর ধরে বিশ্ব ক্রিকেটের অলরাউন্ডার র‍্যাংকিংয়ে আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছেন তিনি। এখনও তিন ফরম্যাটেই অন্যতম সেরাদের একজন। বয়সটা হয়েছে তার। তবে কোন এক অলৌকিক ধাতু দিয়ে তৈরি তিনি। নতুবা ৩৭ বছরের একজন সমানতালে পারফরম করে যায় কি করে!

শুধু যে সাকিব ১৪ হাজারি রান ক্লাবে ঢুকেছেন তা কিন্তু নয়। আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিনি বহুক্ষণ ধরে চেষ্টায় ছিলেন বা-হাতি নাজিবুল্লাহ জাদরয়ানকে সুইপ শট খেলতে বাধ্য করতে। একটা পর্যায়ে তিনি সফলতা পেয়ে যান। সেই সুইপ শটের গড়মিলে, সাকিবের পকেটের ৩০৫ তম ওয়ানডে উইকেট।  বা-হাতি স্পিনারদের মধ্যে যৌথভাবে এখন তিনি অবস্থান করেছেন দ্বিতীয় স্থানে।

তার সাথে রয়েছেন ইতিহাস বরেণ্য ড্যানিয়েল ভেট্টোরি। ব্ল্যাকক্যাপসদের হয়ে ২৭৭ ম্যাচে ৩০৫ উইকেট শিকার করেছেন ভেট্টোরি। অন্যদিকে সাকিব খেলেছেন মাত্র ২২৯ ম্যাচ। সাকিবের এই যে এত এত সফলতা, এর পেছনের কারণ সম্ভবত সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রচণ্ড স্পৃহা। তাইতো বাংলাদেশকে সঙ্গী করে তিনি মাঠ মাতাচ্ছেন।

সাকিব নিশ্চয়ই দ্বিতীয় অবস্থানে থাকতে চাইবেন না। আর মাত্র ১৯টি উইকেট হলেই তিনি উঠে যাবেন সবার শীর্ষে।ছাপিয়ে যাবেন সনাৎ জয়াসুরিয়াকে। সাকিব বন্দনা এত অল্পতেই শেষ হবার নয়। আফগানিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে আরও এক রেকর্ড গড়েন সাকিব আল হাসান।

সে ম্যাচে তিনি রান খরচ করেছিলেন মাত্র ১৩। করেছিলেন পূর্ণ ১০ ওভার। উইকেট নিয়েছিলেন একটি। এই নিয়ে নিজের ক্যারিয়ারে তৃতীয় দফা ১৫ রানের কম খরচ করলেন সাকিব। এই রেকর্ডে সাকিবের সঙ্গী প্রোটিয়া কিংবদন্তি শন পোলক।

সাকিব যেন সর্বেসর্বা। ‘সাকিব একাই একশো’। বিশ্ব ক্রিকেটের তামান রেকর্ডে তার ভাগ বসানো চাই। তার এই বিশ্বসেরা হওয়ার ক্ষুধা, সবচেয়ে বেশি সহয়তা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে। ১৭ বছরে অদম্য ও অপ্রতিরোধ্য একজন যোদ্ধা পেয়েছিল বাংলাদেশ। এখন বাংলাদেশের অন্তত তাকে ফেরত দেওয়া প্রয়োজন। বিশ্ব ক্রিকেটেরই তাকে ফেরত দেওয়া প্রয়োজন। কোন এক বৈশ্বিক শিরোপা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link