একচোখা, একরোখা, বদমেজাজী, খলনায়ক- আপনি সাকিব আল হাসানকে বর্ণনা করতে গিয়ে এসব শব্দগুচ্ছ চাইলেই ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু আপনি যখন ক্রিকেট ময়দানের সাকিবকে জানার চেষ্টা করবেন, তখনই যেন মনে হবে- ‘যাই, ক্রিকেটার সাকিবকে একটা কুর্নিশ করে আসি’।
সবুজ গালিচায় নামলেই যেন সাকিব ভিন্ন এক চরিত্র। মাঠের বাইরের সমস্ত চিত্র মলিন হওয়া অবধারিত। সাড়ে পাঁচ আউন্সের চর্মগোলক কিংবা দেড় কেজির কাঠের টুকরো হাতে সাকিব এক মহাকাব্য। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি কখনো। ব্যাট-বলে পারফরম করেছেন। ঈর্ষা করবার মত কাজ করেছেন। কদর তার দেশের মাটিতে নাই-বা হলো যথার্থ!
২০০৭ থেকে ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রতিটা আসরেই খেলেছেন সাকিব। এই সময়ে উইকেট শিকারে তার ধারেকাছেও যেন নেই কেউ। ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম সংস্করণের বৈশ্বিক আসরে সর্বাধিক উইকেট শিকার করেছেন সাকিব। ৪৭টি উইকেট নিয়ে সবার উপরে তার অবস্থান। তার নিকটে রয়েছেন শহীদ আফ্রিদি ৩৯ উইকেট নিয়ে।
যেহেতু সাকিব অলরাউন্ডার। সেহেতু ব্যাট হাতেও তিনি তার সক্ষমতা দেখিয়েছেন। ৭৪২ রান রয়েছে তার নামের পাশে। অলরাউন্ডার হিসেবে তার অবস্থান সবার উপরে। এমনকি বোলারদের তালিকাতেও তিনিই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া বোলারদের মধ্যে ৩১ উইকেট নিয়ে ওয়ানিন্দু হাসারাঙা রয়েছেন সাকিবের পেছনে।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের একেবারে শুরু থেকেই বাংলাদেশ দল নড়বড়ে। এখন অবধি কোন কূল-কিনারা খুঁজে পায়নি বাংলাদেশ দল। তবুও সাকিব গোটা দলকে বয়ে বেড়িয়েছেন পুরো সময় ধরে। এবার হয়ত দৃশ্যপট ভিন্ন। চোখের সমস্যা রয়েছে তার। সেই সমস্যার বিকল্প এক উপায় বের অবশ্য করেছেন। কিন্তু সেটা কতটা ফলপ্রসূ হবে তা সময়ই বলে দেবে।
অন্যদিকে দলে নতুন খেলোয়াড়দের রয়েছে আনাগোনা। অভিজ্ঞতার কমতি অবশ্য নেই। সাকিবের উপর অন্তত এবার নির্ভরশীল না দল। সাকিবের উপরই অন্ধ ভরসা করবে না সকলে। সেটাই হতে পারে সাকিবের জন্যে সবচেয়ে স্বস্তির বিষয়।
তিনি থাকতে পারবেন চাপমুক্ত। খেলতে পারবেন নির্ভার হয়ে। আর সাকিব আল হাসান যখন ক্রিকেটকে উপভোগ করতে শুরু করেন, তখন তাকে দমিয়ে রাখা দায়। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের কথা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি আপনি। সেই বিশ্বকাপে সাকিব যা করেছেন, তা ভুলে যাওয়া দুষ্কর।
তেমন এক সাকিবের দেখা মিলবে এবারের বিশ্বকাপে। সেই প্রত্যাশা হয়ত কেউ করছে না বা করতে চাইছে না। সে জন্যে অবশ্য দায়ী সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাপ্রবাহ। তাতে অবশ্য লাভই হয়েছে। প্রত্যাশার ভারহীন সাকিব বড্ড ভয়ংকর।