একটা আক্ষেপ বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের তাড়িয়ে বেড়ায়। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল), তর্ক-সাপেক্ষে এই সময়ের অন্যতম সেরা ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট। তাতে অবশ্য আক্ষেপ নেই। বাংলাদেশ ক্রিকেট কাঠামোতে জমজমাট একটা ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক টুর্নামেন্ট আয়োজন সম্ভব হয়ে ওঠেনি। সেটা এক প্রকার মেনেই নিয়েছে সাধারণ দর্শকরা। আক্ষেপের জায়গাটা ভিন্ন।
আইপিএল বৈশ্বিক ক্রিকেটের পঞ্জিকায় বেশ বড়সড় জায়গা দখল করে ফেলেছে। এর চাহিদা খেলোয়াড়দের মধ্যে ক্রমশ বেড়েই চলেছে। প্রতিটি দেশের খেলোয়াড়ই একবার অন্তত আইপিএলে খেলার সুযোগের সন্ধান করেন। কেননা অর্থের ঝনঝনানি যেমন রয়েছে, তেমনই জনপ্রিয়তার অন্যতম মাধ্যমে পরিণত হয়েছে আইপিএল। এই সুযোগটা লুফে নিতে চায় প্রতিটা খেলোয়াড়। বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা তার ব্যতিক্রম নয়।
কিন্তু বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের সেই সুযোগটা মেলে না সচারচর। কেননা, ভিনদেশি কোটায় কেবল চারটি খেলোয়াড়ই খেলাতে পারে আইপিএল ফ্রাঞ্চাইজিগুলো। সেই লড়াইয়ে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা বরাবরই পিছিয়ে থাকে।
আক্ষেপ অবশ্য আরও রয়েছে। সহযোগী দেশের খেলোয়াড়রাও মাঝেমধ্যে সুযোগ পান আইপিএলে। তাঁদের থেকে অন্তত অভিজ্ঞতার বিচারে বাংলাদেশি খেলোয়াড়রা বেশ এগিয়ে। তবুও কেবল সাকিব আল হাসান লম্বা সময় ধরে দল পেয়ে গেছেন।
এরপর মুস্তাফিজুর রহমান নিয়মিত হয়েছেন। ২০২৩ আসরকে সামনে রেখে এবার তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে আইপিএলে দল পেয়েছেন লিটন কুমার দাস। মুস্তাফিজুর রহমানকে রিটেইন করেছিল তাঁর দল দিল্লি ক্যাপিটালস। নিলামে উঠেছিলেন সাকিব ও লিটন। এই দুই খেলোয়াড়কে ভিত্তিমূল্যে দলে ভিড়িয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স।
সাকিব হয়ত নিজের ক্যারিয়ারের পরন্ত বিকেলে রয়েছেন। তাই হয়ত তাঁর চাহিদা কমেছে ক্রমশ। তবে লিটন তো কেবলই দারুণ একটা বছর কাটালেন। ব্যাটে সাবলীল। এমন একজন খেলোয়াড়ের জন্য অর্থের লড়াইটা হওয়া তো অন্তত উচিৎ। কিন্তু হয়নি।
কেবল ৫০ লাখ রুপির বিনিময়ে তাঁকে দলে ভেড়ায় কলকাতা। তাও আবার একেবারে শেষের দিকে। এই অল্প অর্থের পেছনে বড় কারণ বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা। কেনানা আসছে বছর বেশ ব্যস্তই থাকবেন টাইগার ক্রিকেটাররা।
আগামী বছরের পহেলা এপ্রিল থেকে শুরু হবে আইপিএলের ২০২৩ আসর। আর শেষ হবে জুনের ৪ তারিখে। লম্বা সময় ধরে চলা এই টুর্নামেন্টের অধিকাংশ সময়েই পাওয়া যাবে না বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। তাই হয়ত নিলামে লিটন, তাসকিনদের চাহিদা শূন্যের কোটায়। তবুও শেষ অবধি লিটন আর সাকিব দল পেয়েছেন। তাও আবার কলকাতা। এই দুইজনকে ভিত্তিমূল্যে কিনে নেওয়ার পেছনে অবশ্য কলকাতার পাবলিসিটি ট্র্যাটেজি প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।
গেলবার দল বঞ্চিত ছিলেন সাকিব আল হাসান। এর আগে কলকাতার সবচেয়ে উজ্জ্বল সময়ের সঙ্গী ছিলেন সাকিব। তবুও এই খেলোয়াড়কে ভিত্তিমূল্যেও ক্রয় করেনি কেকেআর। এতে অবশ্য বাংলাদেশি ক্রিকেট সমর্থকদের বেজায় মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছে। বাংলাদেশে একটা বিশাল ফ্যানবেস রয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্সের। সেই ফ্যানবেস মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল দলটি থেকে। সেই পরিস্থিতি সামাল দিতেই হয়ত সাকিবকে পুনঃরায় ক্রয় করেছে দলটি।
অন্যদিকে, বাংলাদেশি দর্শকদের আরও আকৃষ্ঠ করার প্রচেষ্টা থেকেও হয়ত লিটনকে দলে নিয়েছে কলকাতা। এদিকে অবশ্য বেশ আলতোভাবে ব্যবসার একটা প্রলেপও রয়েছে। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে একটি ফ্রাঞ্চাইজির বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হয়। এই অর্থের জোগানদাতা অবশ্য স্পন্সররা।
আর স্পন্সরদের ব্যবসার পরিধি বাড়াতে এমন অনেক পন্থাই অবলম্বন করে থাকে ফ্রাঞ্চাইজিগুলো। সাকিব আর লিটনকে দলে নেওয়ার পর থেকেই কলকাতা নাইট রাইডার্সের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তাদেরকে ঘিরেই প্রচারণা চালাচ্ছে ফ্রাঞ্চাইজিটি।
ঠিক এখানটায় মার্কেটিং কৌশলেও এই দুই খেলোয়াড়কে অনায়াসে ব্যবহার করা গেল একটা বড় ক্রিকেট পাগল গোষ্ঠীকে আকৃষ্ট করতে। এসব নানামুখী কারণে উপস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও লিটন ও সাকিবকে দলে নিয়েছে কলকাতা। তাছাড়া কলকাতার হাতে অর্থও খুব বেশি বাকি ছিল না। স্বল্প অর্থ ব্যয়ে এমন খেলোয়াড়দের দলে ভেড়ানো বেশ কঠিন কাজ। তাই হয়ত দেরি করেই লিটন ও সাকিবদের দলে নিয়েছে কলকাতা।
ক্রিকেট ছাপিয়ে আইপিএলে ব্যবসা প্রধান বিষয়ে পরিণত হয়েছে বহুবার। লিটন, সাকিবের শেষ বেলায় অন্তর্ভুক্তি হয়ত তেমনই এক ব্যবসায়িক স্টান্ট। তবুও সাকিব অথবা লিটন সীমিত সুযোগেই নিজেদেরকে আলোকিত করবার প্রচেষ্টা করবে তেমনটাই হয়ত প্রত্যাশা করে বাংলাদেশের সকল ক্রিকেট ভক্ত। একই রকম প্রত্যাশা নিশ্চয়ই কলকাতা নাইট রাইডার্স কর্তৃপক্ষেরও।