সেঞ্চুরিহীনতার জালে আটক সাকিব!

ভারতের বিপক্ষে আশিতে আটকা পড়লেন। আর ২০ টা রান হলে হতে পারতো সেঞ্চুরিখরার অবসান। সেই ২০১৯ বিশ্বকাপে শেষ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। এরপর থেকেই সাকিব রয়েছেন সেঞ্চুরিহীনতায়

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সাকিব আল হাসান এখন পর্যন্ত পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছেন ১১২ বার। কিন্তু সেই ১১২ বার পঞ্চাশ টপকানো ইনিংসকে সাকিব শতকে রূপ দিতে পেরেছে কয়বার জানেন? মাত্র ১৪ বার। অর্থাৎ ৮৭.৫ শতাংশ পঞ্চাশ পেরোনো ইনিংসেই তিনি সেঞ্চুরি পেতে ব্যর্থ হয়েছেন। 

কলম্বোতে ভারতের বিপক্ষে সাকিবের ব্যাট হেসেছে। পঞ্চাশ পেরিয়ে ইনিংসটাকে নিয়ে গিয়েছেন ৮০-তে। আর তাতেই বাংলাদেশ পায় লড়াই করার মতো সংগ্রহ। কিন্তু কোথায় গিয়ে যেন, সাকিবের দুর্দান্ত ইনিংসেও একটা আক্ষেপের গল্প তৈরি হলো। 

আশিতে আটকা পড়লেন। আর ২০ টা রান হলে হতে পারতো সেঞ্চুরিখরার অবসান। সেই ২০১৯ বিশ্বকাপে শেষ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। এরপর থেকেই সাকিব রয়েছেন সেঞ্চুরিহীনতায়। 

সেঞ্চুরির সাথে সখ্যতায় নাম আসতে পারে শচীন টেন্ডুলকারের। কিংবা হালের বিরাট কোহলিরও রয়েছে শতকের সাথে বন্ধুত্ব। আর সাকিব? সাকিবের সখ্যতা যেন ৮০-তে!

টেস্টে ১৮ বার, ওয়ানডেতে ১৫ আর টি-টোয়েন্টিতে ১ বার— সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত সাকিব ব্যাট হাতে আশির গণ্ডি পেরিয়েছেন ৩৪ বার। কিন্তু সেঞ্চুরির পথে হেটেও সাকিব সেই ম্যাজিক্যাল ফিগারে পৌছাঁতে পেরেছেন ১৪ বার। 

ব্যাটার সাকিবকে নিয়ে আক্ষেপ করার জন এই পরিসংখ্যান টুকুই যথেষ্ট। অলরাউন্ডার সাকিব যেমন সমৃদ্ধ, ব্যাটার সাকিবের জগৎ টাও হতে পারতো দারুণ সমৃদ্ধময়। কিন্তু ‘ইশ’ শব্দযুক্ত সুরেই আশির গণ্ডিতে আটকে থাকা সাকিবকে নিয়ে আফসোসে ভাসতে হচ্ছে। 

২০১৯ বিশ্বকাপের পর থেকে সাকিবের ব্যাটে সেঞ্চুরি নেই। অবশ্যই আশাহত হওয়ার মতো ব্যাপার। তবে এখানে একটা পরিসংখ্যান অবশ্যই যুক্ত করা উচিৎ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বিশ্বকাপে ১২৪ রানের ঐ ইনিংসের পর সাকিব ওয়ানডে খেলেছেন ৩৭ টা। যে ৩৭ ম্যাচে তাঁর ব্যাট থেকে ফিফটি এসেছেন ১১ বার। অর্থাৎ প্রায় প্রতি ৩ ইনিংসেই সাকিবের ব্যাট হেসেছে। কিন্তু সেটা শতক অবধি গড়ায়নি। 

উল্লেখ্য ব্যাপার, এই ১১ ইনিংসের মধ্যে সাকিব আশির গণ্ডি পেরিয়েছেন ৩ বার। যদিও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একটি ইনিংসে ৯৬ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। এ ছাড়া বাকি ২ টি ইনিংসে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। আর সে ব্যর্থতাতেই যেন সাকিবের ব্যাটিং নিয়ে পূর্ণ তৃপ্ততা আসে না। যা আসে তা হলো, দৃষ্টিকটু আউটে একটি ভাল ইনিংসের অপমৃত্যু নিয়ে আক্ষেপের সুর। 

অলরাউন্ডার সাকিবকে নিয়ে প্রশ্নের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। ঐ রাজত্বে তাঁর একাধিপত্য বহুকাল। তবে অলরাউন্ডার সাকিবের সংজ্ঞায়ন দলের একজন পুরোদস্তুর ব্যাটার এবং একজন পুরোদস্তুর বোলার হিসেবে। সাকিব সেই ব্যাটারদের ভুবনেও হতে পারেন দুর্দান্ত কিছু। কিন্তু সেঞ্চুরি মিসের বহমান ধারায় সাকিবের পরিসংখ্যান সেখানে ঠিক ‘সাকিব’-এর মতো নয়। 

ক্যারিয়ারের গোধূলি লগ্নে রয়েছেন সাকিব। ক্যারিয়ার কত সময় পর্যন্ত গড়াবে তা এখন পর্যন্ত অজানা। তবে ব্যাট হাতে আশিতে আটকে যাওয়া সাকিবকে নিয়ে আক্ষেপের দীর্ঘায়ন নিশ্চিতভাবেই এখন কাম্য নয়। সেঞ্চুরি তৃষ্ণায় তৃষিত সাকিবকেই এখন দরকার। কারন মানুষ শতকে মোড়ানো ইনিংসকেই স্মৃতির ফ্রেমে বেশির ভাগ সময় আটকে রাখে, আশিতে আটকানো কোনো ইনিংসকে নয়।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...