ব্যাট দিয়ে বলকে খানিকটা ব্যালেন্স করবার চেষ্টা। এতে অবশ্য মনোযোগও বৃদ্ধি পায় অনেকটাই। শামিম হোসেন পাটোয়ারী যেন সেই মনোযোগটাই বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। অনুশীলনের পাশাপাশি যে তার ক্যারিয়ারেও আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত শামীমের। তিনি বরং সে কাজটাই করছেন যেন নিভৃতে।
শামিম হোসেন পাটোয়ারি হুট করেই যার জাতীয় দলের অভিষেক। ২০২০ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের মধ্যে থেকে বেশ আগেভাগেই চলে এসেছিলেন জাতীয় দলে। তার আগে এসেছিলেন স্রেফ শরিফুল ইসলাম। শরিফুল অবশ্য এখন প্রায় নিয়মিত জাতীয় দলে। কিন্তু ভিন্ন চিত্র শামিমের ক্ষেত্রে।
তিনি থিতু হতে পারেননি দু’বছর বাদেও। প্রত্যাশার আকাশসম বোঝা নিয়েই তিনি এসেছিলেন জাতীয় দলে। ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ পেশির ব্যবহারটা করতে পারেন বলেই তাকে নিয়ে আসা আন্তর্জাতিক সার্কিটে। আশা করা হচ্ছিল তিনি ঘোচাবেন হার্ড-হিটারের অভাব। চেষ্টা যে একেবারেই করেননি শামিম তা কিন্তু নয়।
তবে সে চেষ্টাটা বরং তাকে করে আসতে হতো ঘরোয়া ক্রিকেটেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট যে বড় রুঢ় জায়গা। আপনি বয়সভিত্তিক দলের চ্যাম্পিয়ন হলেও আপনাকে খুব একটা তোষামদ করা হবে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্রেফ পারফরমারদেরই আগলে রাখে। ক্রিকেটটা তো দিনশেষে একটা ‘পারফরমিং আর্ট’। আপনি পারফরম করছেন মানে আপনি থাকছেন, করছেন না তো বিদায় বলে দিতে এতটুকুও দ্বিধা হবে না।
শামিমের ক্ষেত্রে ঘটেছে তাই। অপরিপক্ক সময়ে তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রেখেছেন। প্রত্যাশার চাপ, তাছাড়া খেলোয়াড়দের মানের তারতম্য, সবকিছু মিলিয়ে খাবি খেয়েছেন শামিম হোসেন পাটোয়ারি। প্রয়োজনে তাকে দলে নেওয়া হয়েছে, আবার ফুরিয়ে গেলেই তাকে ছেটে ফেলা হয়েছে।
তবে একটানা সুযোগ মেলেনি তার। এমনকি স্রেফ ফিল্ডার কোটায় তাকে বিশ্বকাপ অবধি খেলতে নিয়ে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটেছে। এসব কিছুই নিশ্চয়ই শামিমের জন্যে পীড়াদায়ক। তবে এই পীড়ার একটাই ঔষধ, পারফরমেন্স। শামিমকে আবার জাতীয় দলে ফিরতে হলে তাকে পারফরম করতে হবে। নিজের যত ভুলত্রুটি রয়েছে সেসব শুধরে ফেলতে হবে।
পাশাপাশি মানসিকভাবেই বেশ স্থির হতে হবে তাকে। স্নায়ুচাপ নিজের আয়ত্বে নিয়ে আসার প্রচেষ্টা করতে হবে। এমনকি মনোযোগও অনড় থাকা চাই। সেসবের প্রস্তুতিই হয়ত নিতে শুরু করেছেন শামিম হোসেন পাটোয়ারী। তার এক সময়কার সতীর্থরা জাতীয় দলের স্তম্ভে পরিণত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। তারও নিশ্চয়ই স্পৃহা জাগে।
তাইতো মিরপুর একাডেমি মাঠে তার উপস্থিতি চোখে পড়ে। ক্যামেরার ফোকাস যখন সিলেট, তখন শামিম একাই চালিয়ে যান তার লড়াই ঢাকার বুকে। নিজেকে ঘষে-মেজে প্রস্তুত করে নেন আসন্ন দিনগুলোর জন্যে। নিজের সামর্থ্যের উন্নয়নের পাশাপাশি শামিমের পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়াটা জরুরী। সেই চর্চাও হয়ত করছেন তিনি। বহুদিনের আক্ষেপ ঘুচাতে তো কেবল শামিমই পারবেন- একজন হার্ডহিটার হয়ে।