রিয়াল মাদ্রিদের ভিনিসিয়ুস জুনিয়র আর বাংলাদেশ দলে নাজমুল হোসেন শান্ত, দু’জনই যেন সমান্তরাল দুই চরিত্র।ভিনিসিয়াকে একসময় সতীর্থরাই দলে দেখতে চাইতো না। অথচ এখন লস ব্ল্যাঙ্কোসদের আক্রমণের নেতা তিনি, মাঠে না থাকলে তাঁর অভাব বোধ করে সবাই। নাজমুল হোসেন শান্তের গল্পটাও প্রায় একই, পুরো দেশের মানুষ কিছুদিন আগেও বিদ্রুপ করতো তাঁকে নিয়ে। কিন্তু এখন ইনজুরির কারণে বাদ পড়াতে তাঁর শূণ্যতা নিয়ে আক্ষেপ করে।
এই আক্ষেপের মাঝেই স্বস্তির খবর এসেছে এবার; মিরপুরে শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে হাজির হয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। মাংসপেশির চোট থেকে সেরে উঠে ধীরে ধীরে ব্যাটিংয়ে ফিরেছেন তিনি। নেট প্র্যাকটিসে বেশ সাবলীল মনে হয়েছে শান্তকে, উইকেটের চারদিকেই শট খেলে নিজেকে নতুন করে প্রস্তুত করতে শুরু করেছেন এই বামহাতি।
কখনো লং অনের উপর দিয়ে লফটেড শট, কখনো কভার ড্রাইভ কিংবা পুল – নান্দনিক সব শটের পসরা জানিয়ে এদিন টাইগারদের ডেরায় নিজের প্রত্যাবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। হয়তো পুরো এশিয়া কাপ খেলতে না পারার ঝাঁঝ মেটানোর জন্যই নিজেকে শানিয়ে নিচ্ছেন এই টপ অর্ডার ব্যাটার।
আর এসব কিছু নিশ্চিতভাবেই খুশি করবে লাল-সবুজের ক্রিকেট ভক্তদের; কেননা নাজমুল হোসেন শান্ত এখন ভরসার নাম, ব্যাটিং লাইনআপের সবচেয়ে ইনফর্ম সদস্য। ইংল্যান্ডের মার্ক উড, জোফ্রা আর্চারদের বিপক্ষে ব্যাটিং করে ম্যান অব দ্য সিরিজ জেতা কিংবা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হওয়া সবকিছুই শান্তের প্রতি আস্থা বাড়িয়েছে সবার।
এত দূরে অবশ্য যাওয়ার প্রয়োজন নেই, চলতি এশিয়া কাপের দিকে তাকালেই বোঝা যাবে নাজমুল শান্তের সামর্থ্য। মাত্র দুই ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েই চিনিয়েছেন নিজেকে। প্রথম ম্যাচে দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ের মাঝে একাই লড়েছেন, করেছিলেন ৮৯ রান; পরের ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে পেয়েছেন সেঞ্চুরির স্বাদ।
দুই ম্যাচে ১৯৩ রান, টুর্নামেন্টের অর্ধেকের বেশি শেষ হওয়ার পরেও সেরা ব্যাটারদের তালিকায় তিন নম্বরে আছেন তিনি। বিরাট কোহলি, শুভমান গিলের মত তারকারা চার ইনিংস খেলেও পারেননি শান্তকে ছুঁতে। আর এমন ব্যাটসম্যানের ইনজুরি থেকে ফিরে আসা দেশের ক্রিকেটের জন্য স্বস্তির হবে সেটাই তো স্বাভাবিক।
‘আত্মবিশ্বাস’ শব্দটার প্রভাব কত বেশি সেটা নাজমুল হোসেন শান্তকে দেখলেই বোঝার কথা। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে বারবার হোঁচট খেলেও একবার রানে ফেরার পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। এশিয়ান মঞ্চে যতটুকু সুযোগ পেয়েছেন নিজের সেরাটা দিয়েছেন শান্ত, বিশ্বকাপেও তেমন কিছু করে দেখাবেন সেটাই প্রত্যাশা – শান্ত নিজেও হয়তো সেজন্য এত তড়িঘড়ি করেই চিরচেনা বাইশগজে ফিরলেন।