না থেকেও আছেন রাসেল ডোমিঙ্গো

নতুন দিনের বাংলাদেশকে বুঝি এমনই দেখতে! ১০১ রানে তামিম, লিটন, সাকিবের উইকেট হারিয়ে তখন হারের চোখ রাঙানিটাই বেশি করে দেখতে পাচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু বড় রান কিভাবে তাড়া করতে হয়, তাড়া করতে গিয়ে ব্যাটিংটা ঠিক কিভাবে করতে হয় সেটাই যেন দেখিয়েছেন নাজমুল শান্ত ও তাওহীদ হৃদয়।

রান রেটের চাপটা একেবারে চেপে বসতে দেননি। নিজেদের মধ্যে দারুণ বোঝাপড়ায় ভালো বল গুলোতেও বের করেছেন সিংগেলস আর ডাবলস। বাউন্ডারিও আসছিল নিয়মিত। তাই ম্যাচ শেষে ম্যাচ সেরা শান্ত তাঁর সঙ্গী তাওহীদ হৃদয়ের কথা বলতেও ভুললেন না।

দুইজনের রসায়নের শুরুটা এ বছরের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) থেকে। গত আসরে সিলেট স্ট্রাইকার্সের লিগ পর্বে দাপটের নেপথ্যে ছিলেন এই দুই ব্যাটার। প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই দলের হয়ে রান করেছেন। দুর্দান্ত বেশ কয়েকটি জুটিও আছে তাদের।

যদিও দুজন্রর দারুণ ফর্মে ফাইনাল উঠলেও শিরোপার লড়াইয়ে হারতে হয় কুমিল্লার কাছে। সেই আসরে শান্ত তো টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকই হয়েছিলেন। হৃদয়ও সেই টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স দিয়ে জায়গা করে নেন জাতীয় দলে।

সিলেটের হয়ে দুজনের রসায়নটা বজায় রয়েছে জাতীয় দলেও। বাইশ গজে দুজনের বোঝাপড়াটা চোখে পড়ার মত। চেমসফোর্ডের মাঠে দুইজনের চোখ জুরানো ব্যাটিং মন না ভরিয়ে পারেই না বাংলাদেশের সমর্থকদের। ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিতে শান্ত হয়েছেন ম্যাচ সেরা।

তবে নিজের ইনিংসে সাপোর্টিং রোলে থাকা হৃদয়ের অবদানের কথাও ভোলেননি শান্ত। দুইজনের ১৩১ রানের পার্টনারশিপে কখনোই একে অপরের ওপর চাপ আসতে দেননি। সে বিষয়টাই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে শান্তর কাছে।

ম্যাচ শেষে শান্ত বলেন, ‘হৃদয় যেভাবে ব্যাট করেছে, যে ইনটেন্ট দেখিয়েছে সেটা আমার ব্যাটিংয়ে সাহায্য করেছে। তাকে কখনো নার্ভাস মনে হয়নি। আমাদের পার্টনারশিপে আমরা সব সময় চাহিদা অনুযায়ী খেলতে চেয়েছি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল আমরা কখনো ফলাফল কি হবে তা নিয়ে চিন্তা করছিলাম না। আমরা আমাদের স্বাভাবিক খেলাটাই খেলছিলাম।’

শান্ত জানান, বিপিএল থেকেই হৃদয়ের সাথে ব্যাটিংটা উপভোগ করছেন তিনি, ‘আমি তাঁর সাথে ব্যাটিং উপভোগ করি এবং বিপিএলেও আমাদের বড় কিছু জুটি আছে। আমরা দুইজনেই জানি আমরা কিভাবে ব্যাট করতে চাই এবং কিভাবে ইনিংস গড়তে চাই। সে যে ইনটেন্ট নিয়ে ব্যাট করছিল সেটা দলের জন্য দারুণ কারণ এটা প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলে। সে কখনো নিজের প্রসেসের বাইরে যায় না এবং আমার মনে হয় ওর এভাবেই খেলা উচিত। আমাদের দলের পরিকল্পনাও এমন, পরিস্থিতি যাই হোক আমরা আমাদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলব। আমরা তিন উইকেট বা চার উইকেট হারিয়ে ফেললেও সেটা নিয়ে ভাবি না।’

নিজের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিতে দারুণ খুশি হলেও দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়তে না পারায় আক্ষেপ আছে শান্তর। তিনি বলেন, ‘আমি সেঞ্চুরি নিয়ে ভাবছিলাম না। আমি শুধু বল ভালোভাবে দেখছিলাম এবং আমি জানতাম আমি ঠিকঠাক খেলতে পারলে সেঞ্চুরি পাব। আমি খুবই খুশি কারণ এটা আমার প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি এবং আমি যেভাবে ব্যাট করতে চেয়েছি সেভাবেই পেরেছি। কিন্তু আমার মনে হয় যদি আমি খেলা শেষ করে আসতে পারতাম তাহলে আরো বেশি খুশি থাকতে পারতাম।’

ওয়ানডে ক্যারিয়ারের শুরুটা শান্তর হয়েছিল যাচ্ছেতাই ভাবে। ২০২০ সালে ওয়ানডে অভিষেকের পর প্রথম ফিফটি পেতে সময় লেগেছে তিন বছর। তবে দীর্ঘ এই সময় তাঁর ওপর ভরসা রাখায় টিম ম্যানেজমেন্টের প্রতি কৃতজ্ঞ শান্ত।

শান্ত বলেন, ‘তাদের আসলেই ধন্যবাদ প্রাপ্য। নির্বাচক এবং টিম ম্যানেজমেন্ট সেই সাথে আগের কোচ রাসেল ডমিঙ্গো আমাকে প্রচুর ম্যাচ খেলার সুযোগ দিয়েছেন যেটা আমাকে সাহায্য করেছে। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তারা আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিলেন। এখনো অনেক দূর যাওয়া বাকি কারণ আমার মনে হয় আমি মাত্র কয়েকটা ভালো ইনিংস খেলেছি এবং আমি যদি এভাবেই খেলতে পারি সেটা আমার জন্য এবং দলের জন্য দারুণ হবে।’

শান্ত আর হৃদয়ের জুটিতে দল অনেকটাই জয়ের পথে থাকলেও ম্যাচের শেষ দিকে রোমাঞ্চ কম হয়নি। রান আউট হতে হতে মুশফিকের বেঁচে যাওয়া কিংবা শেষ ওভারে নো বল কান্ড, সবই গেছে বাংলাদেশের পক্ষে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকায় খুশি শান্ত।

তিনি বলেন, ‘ম্যাচ জেতার জন্য ভাগ্যের দরকার হয় এবং সেটা আমাদের সাথেই ছিল নো বল এবং রান আউটের সময়। আপনি যাই বলুন না কেন, ভাগ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভাগ্য আমাদের সাথে ছিল এবং সেটি আমরা কাজে লাগিয়েছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link