রিস টপলির ফুলার লেন্থের বল। ড্রাইড করতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন শূন্যরানে। এরপরের ম্যাচে গ্লেন ফিলিপ্সের বলে ডেভন কনওয়েকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৭ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মার্কো ইয়ানসেনের লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে খোঁচা দিয়ে আবারও শূন্য রানে ফেরা।
একই ধারা ভারতের বিপক্ষে। এদফা লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়লেন রবীন্দ্র জাদেজার বলে। রান এবার ৮। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৯ রানে। স্কোয়ার লেগে শাহীন আফ্রিদির হাতে উইকেট দিয়ে ফেরেন চার রানে।
স্রেফ প্রথম ম্যাচে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে নাজমুল হোসেন শান্ত ছিলেন অপরাজিত। করেছিলেন ৫৯ রান। সেটাই শান্তর এবারের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ। সেই ইনিংসটিই শান্তর অর্জন। অথচ এমনটি তো হবার কথা ছিল না। শান্ত তো এই বছর জুড়েই ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটার।
বিশ্বকাপের ৭ ম্যাচে শান্তর রান মোটে ৮৭। এর মধ্যে তিনি পাঁচ বার আউট হয়েছেন ক্যাচ দিয়ে। কখনো লেগ স্ট্যাম্পের বাইরের বল, কখনো আবার অফ স্ট্যাম্পের অনেকটা বাইরের বল তিনি ড্রাইভ করতে গিয়ে তালুবন্দী হয়েছেন।
এমনটি নিশ্চয়ই হবার কথা ছিল না। ২০২৩ সালে বাংলাদেশের পক্ষে সবগুলো ফরম্যাটেই দূর্দান্ত ব্যাট চলেছে শান্তর। টেস্ট ও ওয়ানডেতে মোট চারখানা সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন তিনি। ধারণা ছিল তিনি বাংলাদেশের ব্যাটিংটা আগলে রাখবেন। তবে তা আর হলো কই!
২০২৩ সালের আগে অবধি নিন্দার তীব্র জ্বরে পুড়তে হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তকে। ব্যাটে রান নেই, ধারাবাহিকতার বালাই নেই। তবুও একটানা খেলে যাচ্ছেন জাতীয় দলের জার্সি গায়ে। তাইতো সাধারণ দর্শকদের ক্ষোভের শেষ নেই। সমালোচনার বিষাক্ত তীর বারবার আঘাত করেছে শান্তকে।
শান্ত সেসবকে খুব একটা ভ্রুক্ষেপ অবশ্য করেননি। নিজেকে ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। ফিরলেন বিশ্বকাপের বছরেই। রান করলেন নিয়ম করে। তবে সব কিছু যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল কর্পূরের মত। বিশ্বকাপের শুরুতেও আশার আলো জ্বালিয়েছিলেন শান্ত। তবে সময় গড়ানোর সাথে সাথে দপ করে নিভে গেছে সে আলো। যেখান থেকে শুরু করেছিলেন, সেখানেই আবার ফিরে গেলেন তিনি।
টপ অর্ডারের চরম ব্যর্থতায় এবারের বিশ্বকাপটা ভীষণ বাজেই কাটছে বাংলাদেশের। লজ্জার আর তেমন কিছুই হয়ত বাকি নেই। সাত ম্যাচের ছয়টিতে পরাজয়। তার থেকেও বড় বিষয় কোন প্রতিযোগিতাই গড়তে না পারা। সেই সাথে ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশগ্রহণ করতে না পারা। সব কিছু মিলিয়ে লজ্জার ষোলকলা পূর্ণ।
গোটা দলে সাথে সেই দায় শান্তর উপরও বর্তায়। নিজের প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে রাচিন রবীন্দ্র, পাথুম নিসাঙ্কা, আবদুল্লাহ শফিকরা নিজেদের ছাপ ফেলে যাচ্ছেন। এমনকি আফগানিস্তানের রহমানুল্লাহ গুরবাজরাও নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপটা নিজেদের মত করেই রাঙিয়ে যাচ্ছেন। পারছেন না শান্ত।
এখানেই আসলে প্রশ্ন জাগে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মান নিয়ে। সেই সাথে মানসিকতার বিস্তর ফারাকও প্রতিফলিত হয়। বৈশ্বিক আসরের চাপ সামলে নিতে এখনও খাবি খায় বাংলাদেশি খেলোয়াড়রা। বছর জুড়ে ফর্মে থাকা নাজমুল হোসেন শান্তর থেকে ভাল উদাহরণ হয়ত এই মুহূর্তে নেই।
শান্তরা ঠিক কেন পারেন না? এই উত্তর যেন খুঁজে পাওয়াও দুষ্কর। নতুবা ফর্মে থাকা একজন খেলোয়াড় কেন বিশ্বকাপে এমন মুখ থুবড়ে পড়বেন। এত বেহাল দশাই বা কেন হবে। এই ধারা থেকে বেড়িয়ে না আসলে, স্বপ্নগুলো দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে আরও ভয়ংকর বাজে ভাবে।