তাঁর ক্যারিয়ারের সময় সীমায় আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচে ইকোনমি ৪.৬৮। তাঁর নিজের ইকোনোমি ৩.৬৮। আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটে মেইডেনের সংখ্যায় তিনি একেবারে মগডালে। ক্রিকেট জীবনে ৩১৩ মেইডেন নেন তিনি। দ্বিতীয় সেরা অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাকগ্রা এবং তাঁর মেইডেন সংখ্যা ২৭৯। ও হ্যাঁ, ম্যাকগ্রার চেয়ে ৫৮ ওয়ানডে বেশি খেলেও তাঁর ইকোনোমি ম্যাকগ্রার চেয়ে ০.২০ রান প্রতি ওভার কম।
তিনি শন ম্যাকলিন পোলক। দক্ষিণ আফ্রিকার বিখ্যাত পোলক পরিবারের ছেলে। দাদা অ্যান্ড্রু পোলক, বাবা পিটার পোলক, চাচা গ্রায়েম পোলক – দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটে কারো অবদানই কম নয়।
ইকোনোমি রেটের বিচারে, অন্তত ১০০ উইকেট নিয়েছেন, এমন বোলারদের মধ্যে ৮ নম্বরে তিনি। তাঁর উপরের সাত জনের মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস দানব কার্টলি অ্যামব্রোস ছাড়া কেউ ১৯৯২ সালের পর খেলেননি। এবং কন্টেক্সটের জন্য বলে রাখি, ওয়ানডে ক্রিকেটের জন্মলগ্ন থেকে ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯২ অবধি, সার্বিক ইকোনোমি রেট ছিল ৪.১১। ওয়ানডে ক্রিকেটে উইকেট তোলার নিরিখে তিনি ছয় নম্বরে।
এবার আসা যাক টেস্টের পরিসংখ্যানে। তিনি তাঁর দেশের দ্বিতীয় (একদা সর্বোচ্চ) উইকেট শিকারী। তাঁর দেশের হয়ে তিনি যখন খেলতেন, তখন তাঁর দেশের সার্বিক বোলিং গড় ছিল ২৯.৩৩। সেই সময় সীমায় বিশ্বব্যাপী বোলিং গড় ছিল ৩২.৯৭। তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সময়সীমায় তাঁর দল ১৩২ টেস্ট খেলে, যার মধ্যে ১০৮ টেস্ট তিনি নিজেও খেলেছেন।
এই সময়ে, বাকি ২৪ ম্যাচে, অর্থাৎ যে ম্যাচে তিনি খেলেননি, সেই সব ম্যাচে তাঁর দেশের সার্বিক বোলিং গড় ২৯.৮৭। অস্ট্রেলিয়া ছাড়া বিশ্বের কোনো দেশে তাঁর বোলিং গড় ৩০ ছাড়ায় নি। ২৬ টেস্টে নিজের দেশের অধিনায়কও ছিলেন তিনি। সেইসব ম্যাচে তাঁর গড় ২১.৩৬। বোলার অধিনায়কের সংখ্যা ক্রিকেটের ইতিহাসে এমনিতেই কম।
আমি অবশ্য তাঁকে বোলার বলি না। বলি অলরাউন্ডার। অবশ্যই, তিনি অলরাউন্ডার সে যাই হোক, যেসব খেলোয়াড় অধিনায়ক হিসেবে অন্তত ৫০ উইকেট পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে দ্বিতীয় সেরা গড় তাঁর। প্রথম স্থানে পাকিস্তানের কিংবদন্তি ইমরান খান। অধিনায়ক হিসেবে তাঁর গড় ২০.২৬। তাঁর সময়কালে, যেসব ম্যাচ তাঁর দেশ জেতে, সেইসব ম্যাচে তাঁর গড় ১৮.৩০।
এর সাথে ঝড়ো ব্যাটিং এবং ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অতল গহ্বর থেকে তাঁর দেশের ক্রিকেটকে উদ্ধার করা। এতক্ষনে নিশ্চয় পরিষ্কার, কার কথা বলছি। শন পলক। তিনি যে ২৬ টেস্টে অধিনায়ক ছিলেন, তার মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা জেতে ১৪ টি। হারে পাঁচটি। তার মধ্যে তিনটিই তৎকালীন সর্বগ্রাসী অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে।
দেশের মাটিতে হারের সংখ্যা ০। এক দিনের ক্রিকেটে ৯৭ টি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেন, যার মধ্যে ৬০ টি জেতেন। বহু চেষ্টা করে, ব্যর্থতার তালিকায় মাত্র তিনটি জিনিস খুঁজে পাচ্ছি। এক, ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপের ব্যর্থতা, দক্ষিণ আফ্রিকার চোকার্স ট্যাগ ঘোঁচাতে না পারা এবং অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দলগত ভাবে টেস্ট ক্রিকেটে চরম ব্যর্থতা।
আজ তাঁর দেশ ক্রিকেটীয় ও রাজনৈতিক ভাবে চরম দুর্দশার মধ্যে রয়েছে। বলতে পারি, দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি সিরিল রামফোসা যদি আজ তাঁকে বলেন যে তিনি মাঠে নামলেই এই সব সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়া যায়, আদর্শ টিমম্যান শন পোলক বোধহয় এক মুহূর্ত দ্বিধা করবেন না।