স্টার আনন্দে কিংবা চব্বিশ ঘণ্টা চ্যানেলে সম্বরণ ব্যানার্জির কথাগুলো বেশ মনে আছে, তিনি বলছিলেন দিল্লী ডেয়ারডেভিলসের (এখনকার দিল্লী ক্যাপিটালস) সব থেকে শক্তিশালী অংশ যদি ওপেনিং পেয়ার হয়, তাহলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের সব থেকে দুর্বল জায়গা সেটা।
দিল্লীর ব্যাটিং লাইন আপটা চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক – বীরেন্দ্র শেবাগ, গৌতম গম্ভীর, এবিডি ভিলিয়ার্স, মনোজ তিওয়ারি, তিলকারত্নে দিলশান, শিখর ধাওয়ান প্রমুখ। কলকাতার তখন বেশ টালমাটাল অবস্থা। পাকিস্তানের পেসার উমর গুল তখনও মনে হয় আসেননি। অজিত আগারকার, ইশান্ত শর্মা আর অশোক ডিন্ডার বোলিং লাইনআপ ভালো শুরু করেও কাজ করছেনা।
তবে স্পিনার ইকবাল আব্দুল্লাহ বেশ ভালো। কিন্তু কলকাতা অপেক্ষা করে আছে অন্য একজনের, সেই একজনের যাকে বছর দুই আগেও ঘেন্না করতো বেশিরভাগ ভারতবাসী, যার ৯৯’ এর সেই স্বপ্নের স্পেলে পরপর দুই গ্রেট রাহুল দ্রাবিড় আর শচীন টেন্ডুলকারকে বোল্ড করার স্পর্ধা মেনে নিতে পারেনি ইডেন গার্ডেন্সের জনতা, যাকে মারা শচীনের আপারকাট সবচেয়ে বেশি সেলিব্রেট করেছে ভারতবর্ষ।
সেই রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস শোয়েব আখতারের অপেক্ষা করেছিলো কলকাতার দর্শক। হ্যাঁ, তিনি অবশেষে যোগ দিয়েছিলেন কলকাতা নাইট রাইডারসে, শাহরুখ অনেক ঝক্কি পোহানোর পর এনেছিলেন তাঁকে।
কিন্তু দিল্লীর বিপক্ষে ম্যাচ তিনি খেলবেন কি? খেলার মতো কন্ডিশনে তিনি কি আদৌ আছেন? হ্যাঁ, তিনি খেলেওছিলেন।
কিন্তু ঠিক কি করেছিলেন যার জন্যে তেরো বছর পরে আবার লিখতে হচ্ছে সেই ম্যাচকে নিয়ে? বেশি কিছু করেননি, শুধু ৯৯’ এর আগুনের কিয়দাংশ বিছিয়ে দিয়েছিলেন দিল্লীর ডেয়ারডেভিলস মোড়কে; নিজের প্রথম ওভারে শেবাগের উইকেট, দ্বিতীয় ওভারে গম্ভীরের উইকেট। কিন্তু তৃতীয় ওভার করবেন কি? নাকি সৌরভ তাঁকে বাঁচিয়ে রাখবেন ডেথ ওভারের জন্যে?
ধুস! মোটে ১৩৪ এর টার্গেট, নিয়ে এসো শোয়েবকে, করিয়ে নাও তিন নম্বর ওভারটাও, জ্বালাও আগুন, ইডেন ঘুমিয়ে আছে অনেকদিন, তাকে জাগাতে হবে তো! শোয়েব করতে এলেন নিজের তিন নম্বর ওভারটাও, ক্যাপ্টেন সৌরভ এখানেই অন্যতম। তিন নম্বর ওভারে শোয়েবের জোড়া উইকেট —স্বয়ং এবিডি আর ভূমিপুত্র (?) মনোজ তিওয়ারি।
ইডেনের দর্শক সবচেয়ে বেশি সেলিব্রেট করলেন মনোজ তিওয়ারির উইকেট। দিলশান যা হোক করে শোয়েবকে হ্যাট্রিক নেবার হাত থেকে অবরুদ্ধ করলেন। শাহরুখ নাচলেন, দর্শকদের নাচালেনও। ১৩৪ এর টার্গেট দিয়ে কলকাতা জিতে নিলো ম্যাচ আর শোয়েব কি করলেন তারপর?
স্রেফ দৌড়ে গেলেন – দু হাত মেলে এঁকেবুকে ঠিক যেমনটা শোয়েব আখতার সবুজ জার্সিতে দৌড়ান সেই ভাবে। সৌরভ ধরার চেষ্টা করলেন একবার কিন্তু পারলেন না।