শোয়েব আখতার ছিলেন তাঁর সময়ের প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের যমদূত। এই গতিদানব ভয় ধরাতেন ঠিক ব্যাটারদের মনে। ১৬১ কিলো/ঘন্টা গতিতে বল করা যেমন চাট্টিখানি কথা নয়, তেমনি সেই বলকে মোকাবেলা করাটাও চাট্টিখানি কথা নয়। শোয়েবের দূর্দান্ত গতি আর ভয় ধরানো রিভার্স সুইংয়ে বাইশ গজে টিকতে পারতেন না বেশিরভাগ ব্যাটারই। ক্রিকেটের তিন ফর্ম্যাটেই তিনি দাপট দেখিয়েছেন। ২০০৩ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনি সব থেকে জোরে বল করার বিশ্ব রেকর্ড করেছেন, যা এখনও কেউ ছুঁতে পারেনি।
তবে বোলিংয়ের দিক থেকে শোয়েব আখতারকে টেক্কা দিতেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পেসার ব্রেট লি। লি নিজেও তিন ফরম্যাটেই দারুণ খেলতেন। তাই বিশ্ব ক্রিকেটে কে সেরা বোলার তা নিয়ে এই দুজনের মধ্যে প্রায়ই টক্কর চলত। এখন তো দুইজনই বিদায় জানিয়েছেন ক্রিকেটকে। অবশ্য শোয়েব আখতার ও ব্রেট লি’র মধ্যে এখন বন্ধুত্বের সম্পর্ক বলে জানা যায়। সম্প্রতি ব্রেট লি তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে সাবেক পাকিস্তানি গ্রেট শোয়েব আখতারকে নিয়ে তাঁর কিছু অভিজ্ঞতাকে সামনে এনেছেন।
লি জীবনে প্রথমবার শোয়েবের নাম শুনেছিলেন একটি পাবে খেলা দেখতে গিয়ে। তিনি বলেন, ‘আমি দেখলাম একটা লম্বা চুলের ছেলে বুক ফুলিয়ে আগ্রাসী হয়ে খেলছেন। মাঠে রকেটের গতিতে বল করছেন। তখন আমি তাঁর নামটা দেখলাম। এই নামটা তারপর থেকে আমার মনে গেঁথে গিয়েছিল।’
মাঠের বাইরে দুজন বন্ধু হলেও, বাইশ গজে মুখোমুখি হতেন আগ্রাসী প্রতিপক্ষ হিসেবেই। অস্ট্রেলিয়া আর পাকিস্তান বরাবরই দুর্দান্ত প্রতিদ্বন্দ্বি ছিল। দুইদল মাঠে মুখোমুখি হলে একদিকে শোয়েব দ্রুততম বল করার চেষ্টা করতো, অন্যদিকে ব্রেট লিও তাই করতেন। বছরের পর বছর ধরে এই দুই ফাস্ট বোলারের মধ্যে এমন প্রতিযোগিতা চলেছে।
ব্রেট লি বিশেষ করে একটি ঘটনার কথা বললেন। তিনি বলেন, ‘আমি একবার মাঠে ব্যাট হাতে শোয়েবের সামনে নেমেছিলাম। স্টেডিয়ামের উপরে একটা ছাদ ছিল। উইকেটটা কঠিন ছিল না, একটু ঘাস ছিল। শোয়েব আখতার জোরে বল করছিল। আমি ব্যাট হাতে নিশ্চিত ছিলাম যে রান পাব। তখন আমি শুনলাম বিঙ্গা বিঙ্গা বলে কেউ আমাকে ডেকে উঠলো। তাকিয়ে দেখি তখন শোয়েব আমার দিকে ঘুরে বলে – আই অ্যাম গোয়িং টু কিল ইউ ।’ এটা শুনে আমি ভয়ে কিছুটা কেঁপে গিয়েছিলাম। সে মাঠের খেলাটাকে বেশ সিরিয়াসলি নিত। ও পরে আমাকে ইনস্যুইং ইয়র্কার করে। বল সোজা গিয়ে আমার পায়ে লাগে। কিন্তু আম্পায়ার এলবিডব্লিউ দেননি। তখন আমায় ভয় বেড়ে গিয়েছিল। ভেবেছিলাম শোয়েব এবার সত্যি হয়ত আমাকে মেরেই মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেবে।’
এটা ২০০০ সালের শুরুর দিকের পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার একটি ম্যাচের ঘটনা ছিল। সবশেষে অবশ্য বন্ধুর এক চোট প্রশংসা করতে ভোলেননি ব্রেট লি। তিনি বলেন, ‘ও বেশ রাগী ও আগ্রাসী ছিল। কিন্তু ও দারুণ ছেলে ছিল। আমার ভালো বন্ধু। ও যখন মাঠে বল করে তখন ওর থেকে ভালো কেউ হতে পারে না।’
আদতেই শোয়েব আখতার বিশ্ব ক্রিকেটের দুর্দান্ত এক তারকা ছিলেন। তবে, মাঠের খেলায় এভাবেই তিনি ছাড় না দেওয়ার মানসিকতা নিয়েই নামতেন।