বাঁহাতের স্যুইংয়ে লেখা ছিল মহাকাব্য, মাঝখানে একটা অপরাধ এসে গল্পটা ট্র্যাজিক করে দিলো। তার নাম আমির। মোহাম্মদ আমির।
তবে এই গল্পের শুরুতে কোনো ট্র্যাজেডি ছিল না। ছিল এক ছেলের স্বপ্ন, কুয়াশায় ঢাকা রাওয়ালপিন্ডির মেঠোপথ ধরে ওয়াসিম আকরামের মতো হওয়া—এই একটা ইচ্ছেই পকেটে ভরে চলা। মাত্র ১১ বছর বয়সে যখন ওয়াসিম তাঁকে এক ক্যাম্পে নিয়ে গেলেন, তখন সে বুঝতেই পারেনি, তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ওভারটা শুরু হয়ে গেছে।
১৬ বছর বয়সে জাতীয় দলে অভিষেক।পাকিস্তান তখন খুঁজছিল নতুন এক জাদুকর। আমির এসে বললেন, ‘আমি আছি।’ ২০০৯, লর্ডসের সবুজ গালিচায় যখন ব্যাটসম্যানদের চোখে চোখ রেখে ইনসুইং ছুড়তেন, তখন মনে হতো, এটা কোনো সাধারণ বোলার না—এ যেন যুব ওয়াসিম, নতুন শরীরে পুরোনো সেই আগ্রাসন আর স্যুইং!
২০১০ সালের এক গ্রীষ্মে, একটা নো বল, একটা স্পট ফিক্সিং, একটা বিশ্বাসঘাতকতা — সব কিছুর দাম দিতে হলো আমিরকে পুরো ক্যারিয়ারের সবচেয়ে মূল্যবান সময়টা দিয়ে। মাত্র ১৮ বছর বয়সে যখন বুকটা সবচেয়ে খোলা থাকার কথা ছিল, তখন মাথার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হলো অপরাধের হেলমেট।
২০১৬ সালে মাঠে ফেরা মোহাম্মদ আমির তখন আর আগের মতো আগুনে ছিলেন না। কিন্তু কোনো এক অলৌকিক সন্ধ্যায়, যখন বলটা আবার মাঝখানে জায়গা খুঁজে নেয়, স্টাম্প ছিটকে যায় — তখন বোঝা যায়, প্রতিভার মৃত্যু হয় না। তাই তো এই আগুন পাখির ডানায় ভর করে ২০১৭ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতে যায় পাকিস্তান!
ওয়াকার ইউনুস কিংবা ওয়াসিম আকরাম—সবাই আমিরকে দেখে বলেছিলেন, ‘এই ছেলেটা যদি না হারাত পাঁচটা বছর, আজ হয়ত বিশ্বের সেরা লেফট-আর্মার হয়ে যেত।’
কিন্তু, আমিরের জীবনটা তো একটা অসমাপ্ত স্ক্রিপ্টের মতো। ক্রিকেট ঈশ্বর যেমন তাঁকে প্রতিভা দিয়েছিলেন সীমাহীন, তেমনি শাস্তিটাও দিয়েছিলেন নির্মম।
আমিরের পেস বোলিংয়ের জাদুতে লেগে ছিল আগুনে পুড়ে যাওয়া এক তিতকুটে গন্ধ। হয়ত সেটাই তাকে আলাদা করেছিল, হয়ত সেটাই শেষ করে দিয়েছিল। হ্যাঁ, আজও আমির ছুটে আসেন, বোলিং করেন। নিজেকে উজার করে দেন। কিন্তু, তাতে তাঁর পাপ কেটে যায় না। বিশ্বসেরার তকমাটাও না পাওয়াই থাকে!
কিছু প্রতিভা ইতিহাসের বুকে এক অনন্ত প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়েই থেকে যায়। তাঁর নাম মোহাম্মদ আমির। পাপের আগুনে পুড়েছেন, নিভে গেছেন, ছাই ভস্ম থেকে ফিরেছেন — কিন্তু গল্পর শেষে পূর্ণতা পাননি।