‘টুথলেস’ কাটার মাস্টার

‘বুম বুম’ খ্যাত পাকিস্তানে কিংবদন্তি খেলোয়াড় শহীদ আফ্রিদি তখন ক্রিজে। নবাগত তরুণ লিকলিকে গঢ়ণের একটা ছেলে মুস্তাফিজুর রহমান। চেহারায় তখনও কৈশরের একটা ছাপ স্পষ্ট। সে ছেলেই দেখালেন বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। তিনি কোন ভাবে জানতেন আফ্রিদির ব্যাটে বল যাওয়া মানেই তিনি তা মাঠ ছাড়া করবেন। মুস্তাফিজ তাই দিলেন না বলে গতি।

আর খানিকটা কাটার জাতীয় কিছু একটা করলেন। ব্যাস তাতেই খোঁচা লাগিয়ে প্যাভিলনে আফ্রিদি। আর বাংলাদেশের ক্রিকেটে আবির্ভাব হয় নতুন এক সম্ভাবনার। নতুন এক আশার আলোর। ২০১৫ সালের ২৪ এপ্রিল শহীদ আফ্রিদির উইকেরটের মধ্য দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদার্পণ করেন মুস্তাফিজুর রহমান। সব আলো তখন অবধি নিজের করে নেননি মুস্তাফিজ।

তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তিনি ছিলেন বেশ কার্য্যকর একজন বোলার। শুরুর দিকে তেমনটাই মনে হচ্ছিল সবার। কারণও তো ছিল বিশেষ। মুস্তাফিজ তো নিজেকে প্রমাণই করেছিলেন। এরপর একাধারে তিনি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলতে থাকেন। ভারতের বিপক্ষে নিজের অভিষেক ওয়ানডে ম্যাচে পাঁচ উইকেট শিকার করে তো রীতিমত বিশ্বক্রিকেটের আলোচনার প্রধান বিষয়ে পরিণত হয়েছিলেন মুস্তাফিজ।

শুরুর দিকে মুস্তাফিজ ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। উইকেট শিকারের চাইতেও সবচেয়ে বড় বিষয় ছিল তিনি রান আটকে রাখতে পারতেন। টি-টোয়েন্টিতে দারুণ সম্ভাবনা থাকায় তিনি খেলার সুযোগ পেয়েও যান ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে। এসব কিছুই আমাদের জানা। তবে একটা জিনিস কি জানেন?

মুস্তাফিজের শুরুর দিকের প্রথম তিন বছর ইকোনমি রেট কখনোই পার করেনি ‘নয়’ এর ঘর। বরং তিনি হয়ত উইকেট নিতে পারেননি, তবে তিনি রান আটকে রাখতে ছিলেন দারুণরকম পটু। সমানতালে তিনি খেলতে থাকেন তিন ফরম্যাট। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন লিগ থেকে তাঁর ডাক আসতে শুরু করেন। মুস্তাফিজ অভিজ্ঞতার আশায় এবং সেই সাথে সম্মানীর চোখ রাঙানি পাশ কাটিয়ে যেতে পারেননি।

সর্বত্র বিচরণ করতে শুরু করেন মুস্তাফিজুর রহমান। মাঝে কিন্তু তাঁর কাঁধে ইনজুরিতে পড়া থেকে শুরু করে অস্ত্রপচার অবধি করা শেষ। অমিত সম্ভাবনা নিয়ে আগত হওয়া মুস্তাজিজ কেমন যেন ফিঁকে হতে শুরু করেন। ছন্দপতন বলতে যা বোঝায় আরকি। তবুও তাঁর প্রতিভার বিষয়ে খুব বেশি সন্দেহ ছিল না কখনোই। বরং তাঁর প্রতিভার বলেই তিনি রীতিমত ‘অটোচয়েজ’ ছিলেন একাদশে।

তবে সত্যি বলতে হয়ত মুস্তাফিজ বেশ ইকোনমিকাল একজন বোলার। তবে তিনি কখনোই উইকেট শিকারি বোলার নন। বিশেষ করে বিদেশের মাটিতে বড্ড বেশি অনুজ্জ্বল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। বিদেশের মাঠে মুস্তাফিজ খেলেছেন ১৯ খানা ম্যাচ। যার মধ্যে কেবল ২২ খানা উইকেট তিনি নিজের পকেটে পুরেছেন। যে ইকোনমি রেটের বদৌলতে মুস্তাফিজ রীতিমত অনড়, সেটাও সবচেয়ে বেশি বিদেশের মাটিতে।

সুতরাং চেনা পরিস্থিতির বাইরে বড্ড বেশি মলিন মুস্তাফিজের বোলিং। সাম্প্রতিক সময়ে মলিনতা যেন ছড়িয়ে যাচ্ছে সর্বত্র। দেশের মাটিতেও পারফরম করতে পারছেন না মুস্তাফিজ। তবে সবচেয়ে ভয়ংকর কিংবা চিন্তার বিষয় ফিজের ডেথ ওভারে বোলিং। মুস্তাফিজ বেশ বুদ্ধিদীপ্ত একজন পেসার এ নিয়ে সন্দেহর অবকাশ নেই। কিন্তু ইনিংসের শেষের দিকে তিনি রীতিমত খেই হারিয়ে ফেলেন।

বেধড়ক পিটুনির শিকার হচ্ছেন প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের কাছ থেকে। এমন চিত্র খানিকটা শঙ্কা জাগায়। মুস্তাফিজকে নিয়ে প্রশ্ন তুলতে বাধ্য করে। মুস্তাফিজ কি তবে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছেন। বিষয়টা খানিকটা এমন হতেও পারে। ২৬ বছর বয়স কেবল মুস্তাফিজের। তিনি হয়ত হারিয়ে যেতে চাইবেন না। ক্রিকেট পাড়ার সেদিনের কিশোর তো কত বাঘা দলকে নাকানিচুবানি খাইয়েছে। সে কি এত সহজে হারিয়ে যেতে পারে?

তবে এ কথা সত্য, তিনি হারিয়েছেন নিজের তেজ। তাঁকে নিয়ে বিস্ময়ের কমতি ছিল না একটা সময়ে। সে বিস্ময় তাঁকে নিয়ে পড়াশুনা করতে বাধ্য করে প্রতিপক্ষের টিম ম্যানেজমেন্টকে। যার ফলশ্রুতিতেই এখন খুব সহজেই মুস্তাফিজের বল আন্দাজ করে ফেলা সম্ভব। কিন্তু হয়ত বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষ বিশ্বাস করতে চান মুস্তাফিজ তাঁর সাম্প্রতিককালের পারফরমেন্স থেকে বেড়িয়ে আসবেন। তবে সেটা খুব দ্রুত হওয়া চাই। পেসারদের পাইপলাইনটা তো বেশ পোক্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link