একটা দায় মাথায় নিয়ে মুশফিকুর রহিমকে সরে দাঁড়াতে হয়েছিল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে। এই ফরম্যাটের সাথে মুশফিকের নেই কোন সামঞ্জস্যতা। ক্রিকেটের ক্ষুদ্র এই ফরম্যাটে তার স্ট্রাইকরেট আর গড় ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। সেই প্রশ্নবাণে এবার যে যুক্ত করা যায় সৌম্য সরকারকেও।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাথে সৌম্য সরকার নামটা উচ্চারিত হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই। সময়ের হিসেবে তা প্রায় এক দশক। ২০১৪ সালে ওয়ানডে ক্রিকেট দিয়ে যাত্রা শুরু করেন তিনি। এরপর কেটে গেছে লম্বা সময়। নিজের সম্ভাবনার সেই প্রদীপটাকে কোনভাবেই আর উজ্জ্বল আলোতে রুপান্তরিত করতে পারেননি।
ব্যাটিং শৈলি বা দক্ষতা নিয়ে হয়ত প্রশ্ন তোলার উপায় নেই। নিজের দিনে একা ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার সক্ষমতা তিনি রাখেন। তবে তিনি সেটা করে দেখাতে পুরোদমেই হয়েছেন ব্যর্থ। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার কাছ থেকে প্রত্যাশা ছিল অনেক। তিনি সে প্রত্যাশাও মেটাতে হয়েছেন ব্যর্থ।
প্রায় ৭৮টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ ইতোমধ্যেই খেলে ফেলেছেন সৌম্য সরকার। বেশ দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, অন্তত ৭০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা খেলোয়াড়দের মধ্যে তার ব্যাটিং গড় সর্বনিম্ন। যদিও এই তালিকায় মুশফিকুর রহিমও অবস্থান করছেন। তবে তিনি এক ধাপ পিছিয়ে রয়েছেন তিন নম্বরে।
সৌম্য সরকার সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে খেলেছেন। সেখানেও ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেননি তিনি। তিন ম্যাচে মোটে ৪৯ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির ইনিংসটি বাদে বাকি ইনিংসগুলো ছিল একেবারেই অকার্যকর।
১৬.৩৩ গড়ে রান করেছেন তিনি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে। ঠিক একই ধারা অব্যাহত রয়েছে তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও। সেখানে তার গড় ১৭.৩৯। স্ট্রাইকরেটও যে খুব চমকপ্রদ- তাও নয়। ১২২ এর একটু বেশি স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করে গেছেন তিনি।
অন্যদিকে মুশফিকুর রহিমের ব্যাটিং গড় ছিল ১৯.৪৮। আর স্ট্রাইকরেট, ১১৫.০৩। স্বাভাবিকভাবেই তাই প্রশ্ন জাগে, ঠিক কোন কারণে সৌম্য সরকারকে নিয়ে সমালোচনা হবে না? নিজের সক্ষমতার মুলো ঝুলিয়ে তিনি স্রেফ দিনের পর দিন থেকে যাচ্ছেন আলোচনায়। দশ বছরেও নিজের পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে পারেননি।
অথচ কথা ছিল, বাংলাদেশের ক্রিকেটের নতুন দিনের পথিকৃৎ হবেন তিনি। এক দশকেও যেটা করে দেখাতে পারেননি তিনি। সামনের দিনগুলোতে তা কতটুকু করতে পারবেন সে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়। সৌম্য সরকার নিজের প্রতিভার প্রতি সুবিচার করতে পারেননি এক ছটাকও।
কালেভদ্রে খেলা দু’একটি ইনিংস তো অন্তত কোন খেলোয়াড়ের সুযোগ পাওয়ার স্বপক্ষের যুক্তি হতে পারে না। তবুও সবাইকে অবাক করে দিয়ে সৌম্য সরকার বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহূর্তে দলে জায়গা খুঁজে পান। কোন ধরণের ধারাবাহিকতার প্রয়োজন পড়ে না সেখানটায়।
অথচ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে স্কোয়াড ঘোষণা করা হলে, তরুণ তানজিদ হাসান তামিম সুযোগ পেতে পারতেন। তার সক্ষমতা রয়েছে বড় ইনিংস খেলবার। তিনি ধারাবাহিকভাবেই পারফরম করেছেন বিপিএলে। তাকে প্রস্তুত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া যেত আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্যে।
তবে অব্যবস্থাপনার আরও একটি নিদর্শন হয়ে সৌম্য সরকার খেলে ফেললেন আরও একটি সিরিজ। তাতে করে মহামূল্যবান সময়ের অপচয় ছাড়া হয়নি আর তেমন কিছুই।