একটা ফ্লিক শট। ব্যাটের সাথে বলের সংযোগ। শ্রুতিমধুর এক ধ্বনির উৎপত্তি। ফাইন লেগ কিংবা ডিপ স্কোয়ার লেগ অঞ্চল দিয়ে বল গ্যালারীতে। সৌম্য সরকারের সিগনেচার শট। এই একটি শটেই যেন সৌম্য ছড়িয়ে দিতে জানেন মুগ্ধতা। নিজের ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে নিয়ম করেই সে কাজটা তিনি করতেন। সাবলীল ব্যাটিংয়ে সৌন্দর্যের ফুলঝুড়ি।
২০১৪ সালে পদযাত্রা শুরু করা সৌম্য, ক্যারিয়ারের মাঝবয়সী সময়ে এসে কোথাও একটা হারিয়ে গেছেন। যেমন রক্তিম আভা মিলিয়ে যায় সাগরের অতল অন্ধকারে। ঘরে-বাইরে কোথাও যেন সুবিধা করতেই পারছেন না। স্পিন কিংবা পেস সবকিছুর বিপক্ষে ধুঁকছেন তিনি। নিজেকে খুঁজে পাওয়া যেন আর হচ্ছে না তাঁর। কিছুতেই যেন মিলছে না সেই ‘স্পার্ক’।
বাংলাদেশ ক্রিকেটে যুক্ত হওয়া ক্লিন হিটারদের সংখ্যা নিতান্তই অল্প। সেই ছোট্ট তালিকায় শুরু থেকেই যুক্ত হয়ে গিয়েছিলেন সৌম্য সরকার। কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহে তাঁকে নিয়ে এসেছিলেন জাতীয় দলে। ২০১৪ সালে লংকান কোচের সুনজরে ছিলেন তিনি একেবারে শুরু থেকেই। নিজের ফেলে যাওয়ার জায়গায় আবারও ফিরেছেন হাতুরুসিংহে। তবে সৌম্য নিজের সাম্রাজ্য তৈরি করবার আগেই যেন ফিরে গেলেন শূন্যতার রাজ্যে।
বছর দুই হয়, সৌম্য সরকার নিজের স্বরূপে ফেরার চেষ্টা করছেন। তবে প্রতিভার প্রতিফলন ঘটাতে যেন আর পারছেনই না। কবি প্রতিভার দামটা অমলরা না পেলেও সৌম্য সরকার ঠিকই পেয়েছিলেন। এই তো গেল বছরের শেষভাগে, বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনি খেলেছেন। হুট করেই তিনি ফিরেছিলেন দলে। শুধুমাত্র প্রতিভার জোরে। যদিও নিজেকে হারিয়ে ফেলার ঘূর্ণায়মান চক্র থেকে বেড়িয়ে আসার সুযোগ আর হয়নি।
সেই চক্র থেকে বেড়িয়ে আসার প্রচেষ্টা তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে। তবে দু:খজনক হলেও সত্য, ব্যর্থতার ধারা তিনি রেখেছেন অব্যাহত। লোকমুখে শোনা যায় কোচ চান্দিকা নাকি প্রায়শই সৌম্যর কথা বলেন। পছন্দের ছাত্র সৌম্য ছিলেন হাতুরুর, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। নিজের ক্যারিয়ারের উজ্জ্বল সময়টা তো সৌম্য পার করেছেন হাতুরুর ছত্রছায়ায়। তবে নির্বাচকদের নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া যেন আর কিছুই করার থাকে না।
নিজের প্রতিভার সুবিচারটা সৌম্য নিজ থেকেই যেন করতে পারছেন না। তবুও জাতীয় দলের পরিকল্পনায় এখনও তিনি বিবেচিত হন। তাঁকে নিয়ে এখনও নির্বাচকদের গোলটেবিলে আলোচনা হয়। টিম ম্যানেজমেন্টও খোঁজ রাখে। এই বুঝি সৌম্য ফিরল তাঁর বিধ্বংসী ফর্মে। কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহের প্রিয়পাত্র সৌম্য, তিনিও অপেক্ষায় আছেন – একবার ফর্মে ফিরলেই দলে ডেকে ফেলবেন শিষ্যকে।
কোথাও রান পাননি তবু হুট করেই জাতীয় দলের রাডারে চলে এসেছিলেন সৌম্য সরকার। এমনকি সুযোগ পেয়েছেন ইমার্জিং এশিয়া কাপেও। আহামরি কিছু করতে না পারলেও একেবারে খারাপ করেননি সৌম্য সরকার, ফলে একটা সময় পর্যন্ত এশিয়া কাপের দলেও তাঁর অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা ছিল অনেক বেশি।
যদিও লাল-সবুজের জার্সিতে ফেরার জন্য যথেষ্ট পারফরম্যান্স করতে পারেননি তিনি। সৌম্য সরকারের এমন বাদ পড়াতে একটা বার্তা অন্তত স্পষ্ট হয়েছে, এখন আর পারফর্ম না করলে দলে টিকে থাকা যায় না। অভিজ্ঞতা, বড় নাম কিংবা প্রিয় মুখ – সবকিছুর উর্ধ্বে গিয়ে টিম ম্যানেজম্যান্ট শুধু মাঠের খেলাকেই প্রাধান্য দেন।
একরাশ হতাশার অবারিত ধারা যেন বয়ে গেল। সৌম্যের এই খারাপ সময়ের শেষটা যেন কোন ভাবেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাইতো বাশার মনে করেন, এখান থেকে পরিত্রাণের পথ সৌম্যকেই খুঁজে নিতে হবে। অভিজ্ঞতার বিন্দুমাত্র কমতি নেই তাঁর। দলের টপ অর্ডার থেকে শুরু করে ফিনিশার রোল সব খানেই ব্যাটিং করবার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর।
তাছাড়া নিদহাস ট্রফির ফাইনালে দীনেশ কার্তিকের অতিমানবীয়তায় ক্রন্দনরত সৌম্য নিশ্চয়ই শিখেছেন কি করে স্নায়ুচাপ ধরে রাখতে হয়। প্রতিভা, অভিজ্ঞতার কমতি নেই। সমস্যা মূলত টেকনিক আর মানসিকতায়। সৌম্যের সেই দিনকটাই যেন ঠিক করা বড্ড প্রয়োজন। তবে সৌম্য অনুশীলনেও নিজের আত্মবিশ্বাস পুনরুদ্ধার করতে পারছেন না। এতসব নেতিবাচকতার ঘনকালো মেঘ ঠেলে সৌম্যর তপ্ত কিরণে নান্দনিকতার পুন:জাগরণের অপেক্ষা।