‘একবার না পারিলে, দেখ শতবার’ এই মন্ত্রেই যেন উজ্জীবিত গোটা দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট। আবারও তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে দেশটি। পরিকল্পনা নিজেদের একটি ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন করা। এই আয়োজনের কথা মাথায় রেখে আগামী বছরের শুরুতে একটি ওয়ানডে সিরিজও বাতিল করেছে দেশটি। ধারণা করাই যাচ্ছে এবার তাঁরা বদ্ধপরিকর।
ক্রিকেটের পরিভাষা যেন ক্রমশ পরিবর্তনের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে। বিশ্বের নানানপ্রান্তের ক্লাব ফুটবল বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে ইউরোপে। সে পথেই যেন হাটছে ক্রিকেট। ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখে প্রায় প্রতিটা দেশই নিজস্ব ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজনের দিকে ছুটছে। সে দিক থেকে বাদ নেই দক্ষিণ আফ্রিকাও।
এই যে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের একটা বিপ্লব গোটা বিশ্বক্রিকেটে ছড়িয়ে যাচ্ছে, এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণটা সম্ভবত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ। জনপ্রিয়তা, অর্থকড়ি সবদিক থেকেই যেন আইপিএল সেরার সেরা। তাইতো প্রায় প্রতিটি খেলোয়াড় আইপিএলে অংশ নিতে মুখিয়ে থাকে। আর খেলোয়াড়দের মান যাচাইয়ের একটা বড় মানদণ্ড এখন আইপিএল।
আর সেই আইপিএলের ছয় ফ্রাঞ্চাইজিই বিনিয়োগ করতে চলেছে দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগে। প্রোটিয়াদের নতুন করে আবার আয়োজনের শুরু থেকেই বলা হচ্ছিল যে তাঁদের টুর্নামেন্ট হবে দ্বিতীয় সেরা। একপ্রকার ধরেই নেওয়া হয় ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে আইপিএলকে মাত দেওয়া বড্ড কঠিন। আর সেই আইপিএলের ফ্রাঞ্চাইজিরাই যখন বিনিয়োগ করছে, তখন তা সেরা না হওয়ার উপায় কি। তবে একটা প্রশ্ন সাধারণ মানুষের মনে জাগাটা বড্ড স্বাভাবিক।
দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট বোর্ড নিয়ে নিন্দার শেষ নেই। দুর্নীতির দায়ে জর্জরিত গোটা ক্রিকেট বোর্ড। অন্যদিকে আগের দুই বারের প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছে প্রোটিয়ারা নিজেদের একটা ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের কাঠামো দাঁড় করাতে গিয়ে। এমন এক পরিসংখ্যানের মুখে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের অর্থ যে জলে যাবে না সে নিশ্চয়তা তো নেই। এমন এক সমীকরণকে সামনে রেখে ভারতীয় বিনিয়োগে কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছেন অনেকেই।
তবে সহজ হিসেবে ভারতের বিনিয়োগকারীদের আস্থা জোগাচ্ছে সুপার স্পোর্টস ও গ্রায়েম স্মিথ। কলুষিত এক ক্রিকেট বোর্ডে গ্রায়াম স্মিথ যেন ছিলেন এক বিপ্লবী। তিনি বিপ্লব করেছেন নিজের মানুষদের বিপক্ষে। একঝাঁক দুর্নীতিবাজ মানুষদের বিপক্ষে প্রতিটা পদক্ষেপে লড়াই করতে হয়েছে তাঁকে। তবুও তিনি পিছপা হননি। তিনি ২০১৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। এই বছরের মার্চে তাঁর সময়কালের পরিসমাপ্তি ঘটে। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেট বোর্ডের সাথে চুক্তি নবায়নও করতে চাননি।
তো তিনি কি করে দিচ্ছে ভরসা? এমন প্রশ্নের জবাবটা খুবই সরল। তাঁকে নিযুক্ত করা হয়েছে টি-টোয়েন্টি লিগের কমিশনার হিসেবে। সুতরাং একঝাঁক দুর্নীতিবাজ মানুষদের অপেক্ষা একজন গ্রায়াম স্মিথকে ভরসা করা অত্যন্ত সহজ। তিনি ছিলেন তাঁর সময়ে সেরা ব্যাটারদের একজন। তাছাড়া অধিনায়ক হিসেবে মাঠের ক্রিকেটে দলকে আগলে রেখেছেন, জয়ের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেটা প্রায় প্রতিটা ক্রিকেটে নজর রাখা মানুষেরই জানা। এমন একজনকে তো ভরসা করাই যায়।
অন্যদিকে সুপারস্পোর্টস এই আয়োজনের অন্যতম শেয়ারহোল্ডার। দীর্ঘদিন ধরে ক্রিড়াঙ্গয়ে দাপটের সাথেই কাজ করে যাচ্ছে। এমন একটি প্রতিষ্ঠানে সংযুক্তিও আস্থা জুগিয়েছেন ভারতীয় ফ্রাঞ্চাইজিদের। মোদ্দাকথা দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেট বোর্ডের দুর্নীতির কথা মাথায় রেখেও ভারতীয় ফ্রাঞ্চাইজিগুলো বিনিয়োগ করতে চলেছে। তবে একেবারেই আঁধারে পথ চলতে হবে না তাঁদের।
পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার মত থাকছে কেউ না কেউ। আর ‘মিনি-আইপিএল’ তকমা নিয়ে নিশ্চয়ই এই টুর্নামেন্ট নিশ্চয়ই সফলতার দেখা পাবে। আরও একবার ব্যর্থতার সাগরে ডুবতে হবে না দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেট বোর্ডকে।