ওয়ানডে ক্রিকেটের ভুত ও ভবিষ্যৎ!

ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটের মধ্যে ওয়ানডে ফরম্যাটটিকে নিয়ে কানাঘুষা চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। ওয়ানডে ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান অনেক বর্তমান আর সাবেক ক্রিকেটার। আর সেই আগুনে এবার ঘি ঢালার মতো কাজ করলো বেন স্টোকসের ওয়ানডে ফরম্যাট হতে হঠাৎ অবসরের ঘোষণা। 

ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটের মধ্যে ওয়ানডে ফরম্যাটটিকে নিয়ে কানাঘুষা চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। ওয়ানডে ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান অনেক বর্তমান আর সাবেক ক্রিকেটার। আর সেই আগুনে এবার ঘিঁ ঢালার মতো কাজ করলো বেন স্টোকসের ওয়ানডে ফরম্যাট হতে হঠাৎ অবসরের ঘোষণা।

৩১ বছর বয়সী ইংল্যান্ডের টেস্ট ফরম্যাটের অধিনায়ক স্টোকস সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ অফ্রিকার বিপক্ষে ক্যারিয়ারের ১০৫ তম ওডিআইটি হতে যাচ্ছে তাঁর শেষ ওয়ানডে ম্যাচ। তিনি বলেছেন, ‘ক্রিকেটাররা কোন গাড়ি নয় যে, পেট্রোল দিলেই তারা চলতে শুরু করবে।’

ত্যি বলতে এখন অনেক বেশি ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আইসিসির ভবিষ্যৎ সূচি (এফটিপি) একেবারে ব্যস্ত সূচিতে ঠাসা। একটা সিরিজ শেষ হতে না হতেই আরেকটা সিরিজ খেলতে দৌড়াতে হচ্ছে ক্রিকেটারদের। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, পরিবারের সঙ্গে একটু সময় কাটানোর অবস্থাটাও থাকে না।

নিজের অকাল অবসরের জন্য ব্যস্ত সূচিকেই দুষলেন ইংলিশ এই ক্রিকেটার। তবে নিশ্চিত করেছেন টেস্ট ও টি- টোয়েন্টি  খেলে যাবেন। তিনি আরও বলেন একাধারে সব ফরম্যাট খেলে নিজের সেরাটা দিতে পারছেন না। তাঁর মতে,তিন ফরম্যাট খেলাটা আমার জন্য আর সম্ভব হচ্ছে না। বাড়তি ম্যাচ খেলার চাপটা আমার শরীর তো নিতে পারছেই না। পাশাপাশি আমার মনে হচ্ছে আমি অন্য একজন খেলোয়াড়ের জায়াগা নিয়ে নিচ্ছি যে জস (বাটলার) এবং দলকে নিজের ১০০ শতাংশ দিতে পারবে।’

স্টোকসের বিদায়ের ঘোষণার পর সাবেক ভারতীয় স্পিনার প্রজ্ঞান ওঝা টুইটারে ‘সামথিং টু থিংক অ্যাবাউট’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে মত দিয়েছেন যে, ‘টেস্টের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা চিন্তিত। কিন্তু এর তুলনায় ওয়ানডে ফরম্যাটটি সবচেয়ে অনিশ্চিত অবস্থানে রয়েছে। ভবিষ্যতে আমরা সম্ভবত অনেক ক্রিকেটারকে এই ফরম্যাট থেকে সরে যেতে দেখবো।’

এদিকে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যান উসমান খাজা নাকি হঠাৎ করে নেয়া স্টোকসের অবসরের সিদ্ধান্তে খুব বেশি অবাক হননি। খাজা বলেন আধুনিক যুগে তিন ফরম্যাটের খেলোয়াড় হওয়াকে তিনি অসম্ভব বলে মনে করেন না। তবে তাঁর মতে, অসম্ভব নয়, কিন্তু খুব কঠিন। কারণ আপনি যদি তিন ফরম্যাটের খেলাই খেলতে থাকেন, আপনাকে প্রচুর ভ্রমণ করতে হবে। তার মানে আপনি একদমই বাড়িতে থাকতে পারবেন না। যার কারণে আপনি মানসিক, শারীরিকভাবে হাঁপিয়ে উঠবেন। এর বাইরে তো অনেক ছেলে আইপিএলও খেলতে যায়।’

খাজা মনে করেন, টেস্ট ক্রিকেট এখনও নিজের মর্যাদা যথার্থভাবে ধরে রেখেছে। এখনও সবার ওপরেই আছে সাদা পোশাকের ক্রিকেট। এ ছাড়া টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এখন সারাবিশ্ব জুড়েই সমাদৃত। এর চাহিদা এতটাই বেশি যে, পৃথিবীর প্রায় সব ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ টি-টোয়েন্টির ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আয়োজন করছে। সম্ভবত ক্রিকেটের সবগুলো ফরম্যাটের মধ্যে ওয়ানডেই তৃতীয় বা শেষ গুরুত্বের অবস্থানে চলে এসেছে।

খাজা বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ওয়ানডে ক্রিকেট ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছে। এখনও বিশ্বকাপ আছে, যেটা আমার মনে হয় সত্যিই মজাদার এবং দেখতে উপভোগ্য, কিন্তু তা ছাড়া, এমনকি আমি নিজে ওডিআই ক্রিকেটে তেমন আগ্রহী নই।’

এর আগে ইংলিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ওয়াসিম আকরাম বলেন, ‘হঠাৎ করেই বেন স্টোকসের ওডিআই ছাড়ার সিদ্ধান্ত দু:খজনক, কিন্তু আমি তার সিদ্ধান্তের প্রতি একমত। এত ব্যস্ত শিডিউলে একজন ক্রিকেটারের পক্ষে একসঙ্গে তিন ফরম্যাটে খেলা কষ্টকর।’

ওয়াসিম আকরাম আরও বলেন, ‘ওডিআই ক্রিকেট মরতে বসেছে। নীতিনির্ধারকদের উচিত এখনই এটি বন্ধ করে দেয়া। শুধু ক্রিকেটার নয়, একজন ধারাভাষ্যকারের জন্যও এই ফরম্যাটটা কঠিন।’ পাকিস্তানি এই কিংবদন্তির পরামর্শ, ওয়ানডে বাদ দিয়ে টি-টোয়েন্টি এবং টেস্টে বেশি মনোযোগ দেয়া জরুরি। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে টি-টোয়েন্টি বেশ উপভোগ্য। আর এখানে সময়টাও কম লাগছে। তিনি আরও বলেন, ইংল্যান্ডে স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শক দেখে আপনার মনে হতে পারে ওয়ানডের জনপ্রিয়তা কমেনি। কিন্তু আপনি যদি ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা দক্ষিণ আফ্রিকায় যান সেখানে ভিন্ন চিত্র দেখবেন । অবস্থা এমন যেন, দর্শকদের টেনে এনেও গ্যালারি ভরানো যাচ্ছে না।’

ভনি ও টাফার্স ক্রিকেট ক্লাবপোডকাস্টে দেয়া সাক্ষাৎকারে ভারতীয় অফস্পিনিং অলরাউন্ডার রবিচন্দ্রন অশ্বিনও একবার জানিয়েছিলেন, ওয়ানডে ম্যাচ কিছু সময় দেখার পর টিভি বন্ধ করে দেন তিনি! এ সময় প্রতি ইনিংসে একটি নতুন বল ব্যবহারের যৌক্তিকতাও তুলে ধরেন এই ক্রিকেটার। 

ক্রিকেটারদের ওয়ানডের প্রতি এমন অনীহার সমাধান করতে হবে ক্রিকেট বোর্ড ও আইসিসির সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায়। ওয়ানডের জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। যদি ব্যস্ততাই মূল কারণ হয়, তাহলে ব্যস্ত সূচিকে একটু ছাড় দিয়ে ক্রিকেটারদের শারীরিক ও মানসিক দিকটিতে খেয়াল রাখতে হবে।

টেস্ট, ওয়ানডে, টি- টোইয়েন্টি ও ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট এর শিডিউলে আরও নমনীয় হতে হবে ক্রিকেটারদের প্রতি। ইন্ডিয়া যেমন প্রতিপক্ষ দলকে মাথায় রেখে তাদের ক্ষমতা অনুযায়ী নিজ দল সাজায়, এই পন্থাটি অন্য দেশগুলোও অনুসরণ করতে পারে। কিংবা এমনও করা যেতে পারে ফরম্যাট অনুযায়ী ক্রিকেটারদের দক্ষতা অনুযায়ী আলাদা করে বাছাই করার মাধ্যমে ওই ফরম্যাটেই সেরাটা দেয়ার সুযোগ করে দেয়া যায়। তবে এসব ক্ষেত্রে ক্রিকেটারদের যথাযোগ্য পারিশ্রমিক দেয়ার ব্যাপারটি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। 

 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...