জীর্ণ কুটিরে জাল বোনা স্পিন বিস্ময়

কোনরকমে দাঁড়িয়ে আছে মাটির একটা জীর্ণ-শীর্ণ ঘর। কাল বৈশাখী ঝড়ের পর আর যেন দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেনা মাটির দেয়াল গুলো। প্রায় বিলুপ্তির পথে চলতে থাকা এই বাড়ি থেকেই জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেটে এসেছেন দূধর্ষ এক বাঁহাতি স্পিনার। তিনি হলেন শানু আক্তার। আবাহনী নারী ক্রিকেট দলের ক্ষুদে বিস্ময়।

বল হাতে আবাহনীর হয়ে মাঠে নেমেই করেছেন বাজিমাত। ছয় ওভার বোলিং করে মাত্র ছয় রান দিয়ে তুলে নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। এখনকার সময়ে এসে এই বোলিং ফিগারটা অনেকটা অবিশ্বাস্যই মনে হয়। তবে অবিশ্বাস্য এই কাজটাই করেছেন স্পিনার শানু আক্তার। মেয়েদের ঢাকা লিগে আবাহনীর হয়ে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই করেছেন এই কীর্তি।

গাইবান্ধার সেই গ্রাম থেকেই শানুর ক্রিকেটের হাতেখড়ি। এরপর ক্রিকেট খেলার জন্য চলে এসেছিলেন রংপুরে। সেখান থেকে সুযোগ মিললো বিকেএসপিতে। এরপর আর কখনো পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বাঁহাতি এই অফ স্পিনার বয়সভিত্তিক দলগুলোর বেড়া টপকেছেন খুব দ্রুতই।

বাংলাদেশের অনুর্ধ্ব-১৯ দলের হয়েও খেলেছেন। এরপর ২০১৬ সাল থেকেই আছেন বাংলাদেশ জাতীয় নারী দলের ক্যাম্পে। এই সময়টায় নারীদের ঢাকা লিগ খেলেছেন বিকেএসপির হয়ে। তবে এবারই প্রথম খেলছেন আবাহনীর হয়ে। আর আবাহনীর হয়ে মাঠে নেই শানুর বাজিমাত। নিজের খেলা প্রথম ম্যাচেই হয়েছেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ।

ক্রিকেট মাঠে দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলছেন শানু। তবে মাঠের বাইরে শানুর জীবনটা যেন বিধ্বস্ত। বাড়িতে মা ও ভাই বিছানায় পড়ে আছেন। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বাবাও এখন আর সেভাবে কাজ করতে পারেন না। ফলে পুরো পরিবার এখন তাকিয়ে আছে একমাত্র মেয়ের দিকেই।

শানুও ক্রিকেট খেলে যা উপার্জন করেন তা পুরোটাই প্রায় পরিবারের হাতে তুলে দেন। এরমাধে কালবৈশাখী ঝড় এসে শানুদের থাকার একমাত্র ঘরটাও লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে। সেখানে এখন আর থাকার অত অবস্থা নেই। ফলে নিজেদের থাকার একটা ব্যবস্থা করাই এখন শানুর সবচেয়ে বড় চিন্তা। এই চিন্তা নিয়েই মাঠে পারফর্ম করে যাচ্ছেন।

তবে ঢাকা লিগ বা ক্যাম্পের বাইরের সময়গুলোতে শানুদের খোজ কেউ নেয় না। বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের এমনই বেহাল দশা। যে শানু বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের ভবিষ্যত হতে পারেন তাঁকে যত্ন করার কেউ নেই। যখন খেলা থাকেনা, তখন তাই নিজেকে নিয়ে বাড়তি কাজ করার সুযোগও তেমন পাননা।

তবুও এসবকিছুতেই তিনি থেমে থাকতে রাজি নন। মনে অদম্য সাহস নিয়ে বল হাতে লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছেন। যখন সুযোগ পাচ্ছেন বাইশ গজে নিজের ঘূর্নিতে ব্যাটসম্যানদের হাপিত্তোশ তুলছেন। ক্রিকেট দিয়েই নিজের জীবনের সব সমস্যার সমাধান করতে চান তিনি। হয়তো এই ক্রিকেট দিয়েই একদিন বড় দালান তুলবেন তিনি। শুধু একটূ সময়ের অপেক্ষা, একটূ নজর দেয়ার অপেক্ষা।

পরিবারের আর্থিক অবস্থা, মা ও ভাইয়ের চিকিতসারা খরচ, এরপর ঝড় এসে লন্ডভন্ড করে দেয়া ঘর সবকিছু মিলিয়ে শানু আর পেরে উঠছেন না। তবুও নিজের খেলাটা চালিয়ে যাচ্ছেন। কেননা অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে ক্রিকেট বলটা হাতে নিয়েছিলেন তিনি। ইতোমধ্যে জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পাওয়া শানু স্বপ্ন দেখেন লাল সবুজ জার্সিটা গায়ে মাঠে নামার। স্বপ্ন দেখেন একদিন খেলবেন বিগ ব্যাশের মত আসর গুলোতেও।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link