ক্ষুধার রাজ্যে ক্রিকেট গদ্যময়

প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্যে ভর করেই চলতো দেশটির অর্থনৈতিক চাকা। তবে হঠাৎই সেই চাকা থমকে গেছে, অর্থনীতির বিশাল মারপ্যাচে পড়েছে একটি দেশ। মুদ্রাস্ফীতির থাবায় পড়ে একটা জাতি, একটা পরিচয় কিংবা একটা গোটা মানচিত্র যেন বিলীন হতে চলেছে। হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় একটি ক্রিকেট সংস্কৃতিও। ঘুরে দাঁড়াতে প্রয়োজন অর্থনৈতিক তহবিল কিংবা ধনী দেশগুলোর সাহায্য।

ক্রিকেট মাঠে যে সিংহরা গোটা ক্রিকেট দুনিয়া দাপিয়ে বেড়িয়েছে তারাই আজ মাথানত, অশ্রুশিক্ত। ক্রিকেটেরে কারণেও আলাদা একটা পরিচয় গড়ে তুলেছিলেন মাহেলা জয়াবর্ধনে, কুমার সাঙ্গাকারারা। দেশের এমন অবস্থায় শ্রীলঙ্কানরা যখন রাজপথে নেমেছেন দুমুঠো ভাতের জন্য সেই সময় সাঙ্গাকারারাও চুপ করে থাকেননি। নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য আওয়াজ তুলেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

বেঁচে থাকাই যেন এখন কঠিন হয়ে পড়েছে ২ কোটি মানুষের এই দেশটিতে। দেউলিয়া হতে বসা শ্রীলঙ্কাকে এখন বাঁচাবে কে? একটি শিক্ষিত জাতি, অথচ নেই কোন কাজের ব্যবস্থা। সবাই পথে নেমেছেন, পুলিশের বন্দুকের সামনে দাড়িয়েছেন। কেননা দুটো চালের চেয়ে বুঝি এখন বন্দুকের গুলিই বেশি সস্তা। এক কেজি চাল কিনতে শ্রীলঙ্কায় এখন খরচ করতে হচ্ছেও প্রায় ৫০০ টাকা। একটা ডিম নূন্যতম ৩০ টাকা। নেই তেল কিংবা প্রয়োজনীয় বিদ্যুতও।

১৯৯৬ বিশ্বকাপ জয়ী অর্জুনা রানাতুঙ্গারা শ্রীলঙ্কাকে একটা নতুন পরিচয় দিয়ে গিয়েছিলেন। নতুন একটা ক্রিকেট জাতির উত্থান হয়েছিল। ক্রিকেটের কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই দেশটাতে। এরপর লাসিথ মালিঙ্গাদের মত তারকারাও তো উঠে এসেছেন এই সিংহের দেশ থেকেই। তবে সেসব এখন শুধুই রূপকথার গল্প, এসব পরিচয় সবই যেন মিছে। ঋনের জ্বালে এখন লংকান জাতিটাই তো হুমকির মুখে।

এসব থেকে ফিরে আসতে হলে একটা বিশাল পাহাড় পারি দিতে হবে শ্রীলঙ্কাকে। ওদিকে গত সপ্তাহেই অর্থমন্ত্রী হয়ে আসা আলি সাবরি জানান জিনিসপত্রের সরবরাহ স্বাভাবিক করতে পরবর্তী ৬ মাসের মধ্যে শ্রীলঙ্কার প্রায় ৩০০ কোটি ডলার বৈদেশিক সাহায্য প্রয়োজন। এই সংকট মোকেবেলায় শ্রীলঙ্কাকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে আগেও ঋণ নেয়া দেশগুলোর দিকেই। ফলে আশাও দিন দিন ক্ষীণ হচ্ছে।

এছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাথেও বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশটি। হয়তো আরেকটি আশা হিসেবে কিংবা শ্রীলঙ্কার পরিচয় ফিরে পাওয়ার শেষ আশা এটিই। এসবের বাইরেও ক্রিকেট দুনিয়াকে পোড়াচ্ছে এমন একটি দেশকে হারানোর আশঙ্কা।

কুমার সাঙ্গাকারা, তিলকারত্নে দিলশানদের পর ক্রিকেট মাঠেও খুব একটা ভালো সময় পার করছিল না দেশটি। মাঠের ক্রিকেটেও বেশ ধুকতে হচ্ছিল। তরুণ ক্রিকেটাররা সাফল্য এনে দিতে পারছিলেন না। তবে দেশটির ক্রিকেটও আবার ঘুরে দাড়াতেও শুরু করেছিল সম্প্রতি। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গারা নতুন করে হাল ধরেছিলেন।

এছাড়া এবছর এশিয়া কাপও অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা শ্রীলঙ্কার মাটিতে। হাতে খুব বেশি সময়ও নেই। তবে এই মুহূর্তে শ্রীলঙ্কার যে অবস্থা তাঁর উন্নতি না হলে এশিয়া কাপ আয়োজন করাও দেশটির পক্ষে সম্ভব না। ফলে এই গোটা জাতিটাকে বাঁচাতে কিংবা দেশটির ক্রিকেট বাঁচাতে দ্রুতই একটা সমাধানের রাস্তা খোজা জরুরি।

ওদিকে শ্রীলঙ্কার এমন কঠিন সময়ে সম্মুখ সারিতে এসে মিছিল করছেন দেশটির ক্রিকেটের বড় তারকা সনাথ জয়াসুরিয়া। বড় বড় অট্টালিকা কিংবা প্রজেক্টের স্বপ্ন তারা দেখেন না। তারা শুধু চান পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি বসবাস যোগ্য দেশ রেখে যেতে। যেখানে সবাই অন্তত দুমুঠো খাবার পাবে। তাঁদের চাওয়া পৃথিবীর বুক থেকে যেন শ্রীলঙ্কার মানচিত্রটা মুছে না যায়।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link