অন্য এক ‘স্টিভ স্মিথ’

স্টিভ স্মিথের গল্প কমবেশি সবাই জানি। লেগস্পিনার হিসেবে শিরোনামে আসা, এরপর ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে অনন্যসাধারণ উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া। এরপর স্যান্ডপেপার কেলেঙ্কারিতে নিষিদ্ধ হওয়া, সেই অঝোরে কান্নার দৃশ্য- সবই আমাদের জানা, দেখা। এরপর দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন, ধারাভাষ্যে নাসের হুসেইন বললেন, ‘Redemption is well and truly complete.’

স্টিভ স্মিথের গল্প কমবেশি সবাই জানি। লেগস্পিনার হিসেবে শিরোনামে আসা, এরপর ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে অনন্যসাধারণ উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া। এরপর স্যান্ডপেপার কেলেঙ্কারিতে নিষিদ্ধ হওয়া, সেই অঝোরে কান্নার দৃশ্য- সবই আমাদের জানা, দেখা। এরপর দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন, ধারাভাষ্যে নাসের হুসেইন বললেন, ‘Redemption is well and truly complete.’

এই গল্পগুলো সবার জানা। কাজেই এই গল্প লিখে লাভ নেই। বরং অন্য কোনো গল্প লিখি, অন্য একজন স্টিভ স্মিথের গল্প।

দু’জনেরই অবশ্য একটা জায়গায় মিল আছে। জন্ম নিউ সাউথ ওয়েলসের সিডনিতে, ১৯৬১ সালে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পুরস্কার হিসেবে জায়গা পান ওয়ানডে দলে। তৃতীয় ম্যাচেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩০ বলে ১১৭ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন স্মিথ। ওয়ানডে আর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দারুণ নৈপুণ্য তাকে জায়গা করে দেয় টেস্ট দলেও। ততদিনে আরও একটা ওয়ানডে সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন তিনি।

১৯৮৪ এর ক্যারিবিয়ান সফরের টেস্ট দলে জায়গা হল স্মিথের। ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়েই করলেন বাজিমাত। গায়ানার বিপক্ষে এক প্রস্তুতি ম্যাচে করে ফেললেন দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি, যা গত দশ বছরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে কেউ করতে পারেনি। এরপর প্রথম ওয়ানডেতেও করলেন ৬০। ৩২৩তম ব্যাগি গ্রিন ক্যাপটা উঠল স্টিভ স্মিথের মাথায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক হল স্টিভ স্মিথের। একটা সম্পূরক তথ্য দিয়ে রাখছি, আমাদের এই যুগের স্টিভ স্মিথের ওয়ানডে অভিষেক হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।

অভিষেক টেস্টটা ভুলে যেতে চাইবেন স্মিথ। প্রথম ইনিংসে করলেন ৩, দ্বিতীয় ইনিংসে ১২। দুই ইনিংসেই আত্মসমর্পণ করলেন জোয়েল গার্নারের কাছে। এক টেস্ট পরেই বাদ পড়ে যেতেন না যদি না সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের আগে অসুস্থতা বাগড়া না দিত। শেষমেশ তাঁর জায়গায় খেললেন ডিন জোন্স।

পরবর্তী ট্যুর ম্যাচের আগেই সেরে উঠলেন স্মিথ। বার্বাডোজের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে করলেন ৬৬। সিরিজের তৃতীয় টেস্টে ফিরলেন দলে। এবারও ভাগ্য সুপ্রসন্ন হল না, দুই ইনিংসেই আউট হলেন ম্যালকম মার্শালের বলে।

পরের টেস্টে বাদ পড়লেন। কিন্তু জবাবটা দিলেন ব্যাট হাতে। ট্যুর ম্যাচে উইনওয়ার্ড আইল্যান্ডসের বিপক্ষে করলেন সেঞ্চুরি, জ্যামাইকার বিপক্ষে ৮৪। মাঝে ওয়ানডেতে করলেন অর্ধশতক। দলে ফেরার জন্যে এটা যথেষ্ট ছিল।

ফিরে যে বিশেষ সুবিধা করতে পারলেন তা নয়। প্রথম ইনিংসে করলেন ৯, চোটে পড়ায় দ্বিতীয় ইনিংসে আর নামতে পারেননি ব্যাট হাতে। ৫৭ দিন স্থায়ী টেস্ট ক্যারিয়ারের এখানেই ফুলস্টপ।

৬ ডিসেম্বর, ১৯৮১ সালে সিডনি মর্নিং হেরাল্ডে ডরোথি গুডউইনের প্রকাশিত লেখা

পরের মৌসুমে ঘরোয়া ক্রিকেটে একটা সেঞ্চুরিও করতে পারেননি স্মিথ। তাই টেস্ট দলে আর ফেরা হয়নি। মাঝে ভারত সফরে গিয়েছিলেন দলের সাথে। দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে মুগ্ধ করেছিলেন স্বয়ং সুনীল গাভাস্কারকেও।

ওয়ানডে ক্রিকেটে অবশ্য টেস্টের মত ব্যর্থ ছিলেন না স্মিথ। আট হাফ সেঞ্চুরি ও দুই সেঞ্চুরির সাহায্যে ৩৯ গড়ে ২৪ ইনিংসে ৮৬১ রান করেন তিনি। দল থেকে বাদ পড়েছিলেন কেবল চোটের জন্যই।

ভারত সফরে সুনীল গাভাস্কারকে মুগ্ধ করার কথা বলছিলাম। সেই সফরেই গ্রাহাম ইয়ালপ স্মিথকে প্রস্তাব দিলেন ‘আনঅফিসিয়াল অস্ট্রেলিয়া’ দলের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যেতে, ইতিহাসে যা ‘রেবেল ট্যুর’ নামে পরিচিত। পরপর দুই সিরিজে দলে জায়গা না পাওয়ায় দুই মৌসুমের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাওয়ার চুক্তিতে সই করে ফেললেন স্মিথ।

রেবেল ট্যুরের সংগঠক ব্রুস ফ্রান্সিসের মতে, এই সফরে স্মিথের যাওয়ার প্রধান কারণ ছিল এটা প্রমাণ করা যে, তিনি ওয়ানডে স্পেশালিস্ট নন। টাকাও একটা কারণ ছিল, এক সফরে ট্যাক্স কেটে বিশ হাজার ডলার আর কোত্থেকে পাবেন!

প্রথম সফরে চোটের কারণে কেবল এক ‘টেস্ট’ই খেলতে পেরেছিলেন। তবে ছাপ রেখেছিলেন বটে, সফরের প্রথম ইনিংসেই করেছিলেন সেঞ্চুরি। আফসোস, এই ম্যাচগুলো তো টেস্টের স্বীকৃতি পায়নি।

পরের সফরেও ব্যাট হাতে রীতিমতো শাসন করলেন বোলারদের। সেই সফরে অজি ব্যাটসম্যানদের মাঝে সবচেয়ে বেশি রান এসেছিল স্মিথের ব্যাট থেকেই। নির্ঘাত ‘আধুনিক যুগের স্টিভ স্মিথ’ ভর করেছিলেন তাঁর উপর।

কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় ফিরেই আবার দৈন্যদশা শুরু। পরের দুই মৌসুমে সর্বোচ্চ রান ৮৪, নেই কোনো সেঞ্চুরি। অগত্যা পাড়ি জমালেন দক্ষিণ আফ্রিকায়, যেখানে ব্যাটে ছুটিয়েছিলেন রানের ফোয়ারা। দুই মৌসুম ট্রান্সভালের হয়ে খেলার পর অবসরে যান স্মিথ।

৯০ প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৩৬ গড়ে ১২ শতকের সাহায্যে ৫২৪৮ রান করেছিলেন স্টিভ স্মিথ। লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে খেলেছেন ৮৯ ম্যাচ। ৩৮.৫৭ গড়ে ২৮১৬ রান করেছেন তিন সেঞ্চুরিতে, যার দুটোই একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে।

এখন স্টিভ স্মিথ নামটা দেখার পর যদি স্টিভেন পিটার ডেভেরক্স স্মিথের পাশাপাশি যদি স্টিভেন ব্যারি স্মিথের নামটাও আপনার মনে পড়ে, তাহলেই লেখা সার্থক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link