অন্যরা যা করতে পারেননি, হৃদয় করলেন সেটিই। রান বের করে গেছেন, ইনিংসও বড় করেছেন। ক্যারিয়ারের সপ্তম ম্যাচে পেয়েছেন তৃতীয় ওয়ানডে ফিফটির দেখা। তাতে হয়তো সবার হৃদয় জিততে পারলেন না। কিন্তু ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশকে উত্তরণের পথ তো দেখিয়েছেন তিনিই। বাকিদের ব্যর্থতার দিনে তাই হৃদয়ের জয়গান অনুমেয়ই বটে।
আফগান-বাংলা লড়াইয়ের শুরুর গল্পে ফেরা যাক। ফজল হক ফারুকির পেসে রীতিমত হাসফাঁস করছিলেন তামিম। পেসের তাণ্ডবে পরাভূত তামিম বেশিক্ষণ টিকলেনও না। তাঁর সাথে সঙ্গ দিলেন লিটন৷ শান্তরাও। টপ-অর্ডারের ৩ ব্যাটারই তখন সাজঘরে।
চারে খেলতে আসা সাকিবও সুবিধা করতে পারলেন না। এরপর রশিদের স্পিনে মুশফিকও অসহায় আত্মসমর্পণ করলেন। আফগান পেস আর স্পিন ঘূর্ণির মিশেলে বাংলাদেশের তখন বেহাল দশা। আর এমন সংকটাপন্ন অবস্থাতে একাই সম্মুখপানে ছুটলেন তাওহীদ হৃদয়।
সে যাত্রায় যোগ্য সঙ্গী পাননি। তবে তাতে কী! তারুণ্যের আগ্রাসন দেখানোর সেটাই তো মোক্ষম সময়। হৃদয়ের ব্যাটে আগ্রাসী চিত্র ফুটে ওঠেনি। তেমন আক্রমণাত্মকও ছিলেন না। তাঁর ইনিংসে বাংলাদেশের ইনিংসে তেমন কোনো লাভও হয়নি। তবে হৃদয় যেন একটা বার্তা দিয়ে গেলেন। বাংলাদেশের মিডল অর্ডারে ভবিষ্যৎ ব্যাটিং স্তম্ভ হতে যাচ্ছেন তিনি।
কারণ বলতে গেলে আপাতত একটা সমীকরণই তো যথেষ্ট। পাঁচে নেমে প্রথম ৬ ইনিংসে কোনো ব্যাটারের ৩০০+ রান ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাস প্রথম দেখল তো তাওহীদ হৃদয়ের কল্যাণেই।
৫১ রানের ইনিংস। কেমন ছিল সেই ইনিংস? শুরুর ঝলকটা দেখিয়েছিলেন মুজিবের বলে পুল শট খেলে। যদিও শটটা যথাযথ হয়নি। রহমানুল্লাহ গুরবাজের গ্লাভস ছুঁয়ে গিয়েছিল।
পরেও খুব যে পারফেক্ট শট খেলেছেন, এমন নয়। বরং দৃশ্যপটটাই ছিল এমন— এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে তাওহীদ হৃদয়, অন্য প্রান্তে একের পর এক ফিরছেন তাঁর সঙ্গীরা। এমন প্রবল চাপের মুখে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে কিছু রানের যোগান দেওয়াটাই ছিল বড় ব্যাপার। তাওহীদ হৃদয় সেই ‘বড়’ কাজটাই করেছেন।
তাওহীদ হৃদয়ের ৫১ রানেও বাংলাদেশের ইনিংস থেমেছে ১৬৯ -এ। জয়ের আশা এই মুহূর্তে ক্ষীণই বটে। তবে শত অস্বস্তি, প্রশ্নের মাঝে তাওহীদ হৃদয় যেন নিজেই একটা আলোচনার সৃষ্টি করলেন। বেশ কিছু বছর ধরে বাংলাদেশের মিডল অর্ডারে নতুন মুখের দেখা নেই।
সেই ‘নেই’ এর শূন্যতা মেটাতে শুরু করেছেন তাওহীদ হৃদয়। অবশ্য শূন্যকে কিভাবে পূর্ণ করতে হয় তা তো এই হৃদয়ের জানাই আছে। এ হৃদয়ের হৃদয় তো এক ‘বিশ্বচ্যাম্পিয়’ এর হৃদয়!