ওয়াঙখেড়ে স্টেডিয়ামে সেদিন একপ্রান্তে গৌতম গম্ভীর দারুণ খেলছিলেন। তবে তাঁকে সঙ্গ দেয়ার জন্য একজনকে প্রয়োজন ছিল। তাও ফাইনাল ম্যাচের চাপ কাধের উপরে নিয়ে। বিরাট কোহলি শুরুও করেছিলেন। তবে ৩৫ রান করেই ফিরে গেলেন তরুণ এই ব্যাটার। এবার বাইশ গজে নামবে যুবরাজ সিং। এরই মধ্যে ক্যামেরায় ধরা পড়লো একজন অধিনায়ক তাঁর ব্যাটটা নিয়ে মাঠে নামছেন, যিনি আর কিছুক্ষণ বাদেই ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা মহানায়ক হয়ে উঠবেন।
২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনালে বিরাট কোহলি আউট হবার পরে অফ ফর্মে থাকা ধোনির মাঠে নামাটা ভারতের ক্রিকেটের সবচেয়ে আইকনিক দৃশ্য গুলোর একটি। পুরো বিশ্বকাপেই ব্যাট হাতে খুব একটা ভালো ছন্দে ছিলেন না মহেন্দ্র সিং ধোনি। ফলে ফাইনাল ম্যাচে সেই সময় পুরো আসরজুড়ে ব্যাটে বলে দারুণ ফর্মে থাকা যুরবাজ সিংয়ের জায়গায় ধোনিকে কেউই প্রত্যাশা করে না।
তার ওপর ধোনি বিশ্বকাপের সেই আসরে মোটামুটি ফ্লপই ছিলেন ব্যাট হাতে। তবে ধোনি সেই সাহসটা দেখিয়েছিলেন। তাঁর ওই একটি সিদ্ধান্তই তাঁকে ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল অধিনায়কে পরিণত করেছিল।
গম্ভীরকে সাথে নিয়ে ভারতের একটা বিশ্বকাপ জিতিয়ে এনেছিলেন সেদিন। খেলেছিলেন ৭৯ বলে ৯১ রানের অপরাজিত ইনিংস। তাঁর ব্যাটে সেই ছয় থেকেই আবার একটা বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছিল ভারত।
ধোনির এই অসাধারণ কীর্তির কথা পুরো ক্রিকেট দুনিয়াই জানে। তবে এর সিদ্ধান্তের পিছনের গল্পটা অজানা। সেই গল্পটাই সম্প্রতি বলেছেন সেই বিশ্বকাপে ভারতের মানসিক স্বাস্থ বিষয়ক কোচ হিসেবে কাজ করা প্যাডি উপটন।
এই কোচের কথা মত ধোনি আসলে সেই সময় ড্রেসিং রুমে বসে টিভিতে খেলা দেখছিলেন। এরপর হঠাত করে এসেই কাচের জানালাটায় টোকা দিয়ে হেড কোচ গ্যারি কার্স্টেনকে ডাকলেন। ইশারায় বোঝালেন এরপর ধোনি নিজেই ব্যাটিং করতে নামবেন। সেই সময় বাইশ গজে ছিল বিরাট কোহলি ও গৌতম গম্ভীর।
প্যাডি আপটন বলছিলেন, ‘ম্যাচের সময় ধোনি ড্রেসিং রুমেই থাকতো। বাইরে খুব বেশি বসতো না। সেদিনও ধোনি ভিতরেই ছিল। আর ড্রেসিংরুমটা কাচ দিয়ে ঘেরা ছিল। আমি আর গ্যারি কার্স্টেন পাশাপাশি বসে ছিলাম। আমার এখনো মনে আছে হঠাত করেই ড্রেসিং রুমের কাচে একটা টোকা পড়লো। ইশারায় বোঝালেন এরপর সে নামছে। গ্যারি কার্স্টেনও মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন।’
প্যাডি আপটনের এই বয়ান অনেকটা গল্পের মতই শোনা যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ‘সত্যিই ওদের দুইজনের মধ্যে কোন কথা হয়নি। এটা পুরোটাই ধোনির সিদ্ধান্ত ছিল যে এরপর সে নামবে। কারণ সে জানতো এই কাজটায় ধোনি বিশ্বসেরা। ধোনি সেটা ফাইনাল ম্যাচেও প্রমাণ করেছে। আগের আট ম্যাচে রান না পেয়েও সেই সময় এমন আত্মবিশ্বাসটা শুধু ধোনিই দেখাতে পারে।’
ওই সময় ধোনি আগে ব্যাট করতে নেমে কিছু করে আসার ব্যাপারে বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। প্যাডি আপটন আরো বলেন, ‘ওই মুহূর্তটাই আসলে প্রমাণ করে ধোনি কত বড় অধিনায়ক এবং তাঁর আত্মবিশাস কতখানি। এছাড়া গ্যারির সাথে ওর সম্পর্কটাও দুর্দান্ত ছিল। ওই মুহূর্তে এত বড় একটা সিদ্ধান্ত তবুও দুজন নিজেদের মধ্যে খুব বেশি আলোচনাও করেনি। ওরা একজন আরেকজনকে ভরসা করতে পেরেছিল।’