দুনিয়া কাঁপানো ফিনিশাররা

সীমিত ওভারের আগের যুগে এই ‘ফিনিশার’ ভূমিকাটা খুব দরকার ছিলো না। টেস্টে ম্যাচ শেষ করে আসার জন্য বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান কে আর বিবেচনায় রাখতো!

তবে সীমিত ওভারের ক্রিকেটের এগোনোর সাথে সাথে এই রোলটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বিশেষ করে নব্বই দশক থেকে আমরা দেখতে পাই, অনেক দলে এরকম একজন ব্যাটসম্যানকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে রাখা হচ্ছে। এখন টি-টোয়েন্টির যুগে ফিনিশার তো জরুরী হয়ে পড়েছে।

আসলে ফিনিশার বলতে কি বোঝায়?

অনেকে ফিনিশার হবে একজন আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান। যিনি কিনা বোলারদের উপর চড়াও হবেন। না, ধারণাটা ভুল। ফিনিশার হলেন ঠান্ডা মাথার এক ব্যাটসম্যান। ‍যিনি পরিস্থিতি বুঝে রানের চাকা সচল রাখতে পারবেন এবং ম্যাচ শেষ করে আসতে পারবেন।

প্রায় সব দলে ফিনিশার দেখা যায়। আগের সময়ে ফিনিশার গুরুত্বপুর্ণ না হলেও কিছু ফিনিশার ছিলেন। যারা কিনা বিশ্বের সেরা ফিনিশারদের তালিকাতে বেশ উপরের দিকে থাকবেন।

  • স্যার ভিভ রিচার্ডস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন ভিভ রিচার্ডস। আধুনিক ক্রিকেটে খেললে হয়তো হতে পারতেন ক্রিকেট মাঠের অন্যতম বিনোদনদায়ক ব্যাটসম্যান। তাঁর সময়ে বলা হত, ভিভ রিচার্ডস সবচেয়ে আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান। তিনি ঠান্ডা মাথায় বোলারদের উপর চড়াও হয়ে খেলতে পারতেন।

  • এবি ডি ভিলিয়ার্স ( দক্ষিণ আফ্রিকা)

এবি ডি ভিলিয়ার্স; দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। তিনি একাই নিজের ভঙ্গিমায় শেষ করে দিতে পারেন একটি ম্যাচ। ওয়ানডে ক্রিকেটের সপ্তম দ্রুত সেঞ্চুরি তাঁর দখলে। আহমেদাবাদে ভারতের বিপক্ষে মাত্র ৫৮ বলে।

এছাড়াও মাত্র ৩০ বলে সেঞ্চুরি করে ওয়ানডে ইতিহাসের দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক তিনি। এই দুইটি রেকর্ডই যথেষ্ট তার মারকুটের ব্যাটিং এর উদাহরণের জন্য। বর্তমানের সবচেয়ে মারাত্মক ব্যাটসম্যানদের মধ্যে অন্যতম এবি ডি ভিলিয়ার্স।

  • অরবিন্দ ডি সিলভা (শ্রীলংকা)

অরবিন্দ ডি সিলভা শ্রীলংকার গ্রেট ব্যাটসম্যান। পাওয়ার হিট এবং এক-দুই রান বের করা দুই কাজেই ছিলেন সমান দক্ষ। তিনি ছিলেন ঠান্ডা মাথার মানুষ। তাই সহজাত ভাবেই ঠান্ডা মাথায় চড়াও হতে পারতেন বোলাদের উপর।

১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে ২৩ রানে দুই উইকেট পরে যাওয়ার পর ম্যাচ শেষ করে এসেছিলেন। সেটা এখনো বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা ইনিংস হিসেবে বিবেচিত হয়। তিনি তার ক্যারিয়ারে যেসব দলের বিপক্ষে খেলে ম্যাচ শেষ করেছেন সেটা সত্যিই অসাধারণ।

  • মার্ক বাউচার (দক্ষিণ আফ্রিকা)

দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম সেরা উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান ছিলেন মার্ক বাউচার। যদি কখনো দলের উপরের সারির ব্যাটসম্যানরা ব্যাট হাতে ব্যর্থ হতেন তাহলে ব্যাটিং এর হাল ধরতে হত মার্ক বাউচারকে। সেই কাজটা ক্যারিয়ার জুড়ে বেশ ভালোই ভাবেই সামলেছেন মার্ক বাউচার। দলের রানরেট বাড়িয়ে নিতেও বেশ কার্যকর ছিলেন মার্ক বাউচার।

  • আব্দুল রাজ্জাক (পাকিস্তান)

ইমরান খানের পর পাকিস্তানের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে বিবেচনা করা হয় আব্দুল রাজ্জাককে। রাজ্জাক ছিলেন ডানহাতি মারকুটে ব্যাটসম্যান। তাঁর বেশিরভাগ মারকুটে ব্যাটিং দেখা যেত ইনিংসের শেষদিকে। ২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১১ বলে ৪৭ রান করেছিলেন আব্দুল রাজ্জাক। এছাড়াও ওয়ানডে ইতিহাসের দ্রুততম অর্ধশতক করে অপরাজিত ছিলেন তিনি।

শারজাহতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে করা তাঁর একমাত্র শতকটি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ইনিংস হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

  • ল্যান্স ক্লুজনার (দক্ষিণ আফ্রিকা)

ল্যান্স ক্লুজনারকে বলা হয় দক্ষিণ আফ্রিকান জুলু। ওয়ানডে ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ক্লুজনারই পাওয়ার হিটিং এর পাওয়ার হিটিং এর সংঙ্গা বদলে দিয়েছেন। তাঁর ম্যাচ শেষ করার ক্যামিও ইনিংসের কারণে বোলিং দলের জন্য চিন্তার কারণ ছিলেন । ক্লুজনার যখন মাঠে নামতেন তখন দেখা যেত আর মাত্র ৮-১০ ওভার বাকি আছে।

ক্লুজনারের সবচেয়ে স্মরণীয় সময় ছিলো ১৯৯৯ বিশ্বকাপ। এই বিশ্বকাপে আট ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়েছিলেন। আর ব্যাট হাতে দুইটি অর্ধ শতকের পাশাপাশি করেছিলেন ২৫০ রান ।

  • জাভেদ মিয়াঁদাদ (পাকিস্তান)

জাভেদ মিয়াঁদাদ ছিলেন পাকিস্তানের অন্যতম সেরা ফিনিশার। ফিনিশিং এ দলের সবচেয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যান। তিনি ঠান্ডা মাথার কোনো ব্যাটসম্যান ছিলেন না। আগ্রাসী ব্যাটিং এ খুবই দক্ষ ছিলেন এই ব্যাটসম্যান।মাঠের চার পাশে সব ধরনের শট খেলতে বেশ পটুই ছিলেন মিয়াঁদাদ। দলের প্রয়োজনে বেশ বিস্ফোরক ব্যাটিং করতেন তিনি। তাঁর সক্ষমতার প্রমাণ পাওয়া গেছে ভারতের বিপক্ষে শারজাহতে।

  • মাইক হাসি (অস্ট্রেলিয়া)

অস্ট্রেলিয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। পরিচিত ‘মিঃ ক্রিকেট’ নামে। তিনি ক্রিকেটের যেকোনো ফরম্যাটে ছিলেন বেশ কার্যকরী।যেকোনো পরিস্থিতে দলের হাল ধরার অসাধারণ প্রতিভা। খুব বেশি পাওয়ার হিট করতে না করলেও সিংগেলস ডাবলসে বেশ ভালোই ছিলেন তিনি। তাঁর শান্ত স্বভাবের ব্যাটিং ছিলো খুবই কার্‍্যকরী। দলের রানের গতি বাড়াতে বেশ দক্ষ ছিলেন মাইক হাসি।

  • মাইকেল বেভান (অস্ট্রেলিয়া)

মাইকেল বেভান ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিনিশার ব্যাটসম্যান। ব্যাটিং এ ছয় নাম্বারে নেমে খুব বেশি সময় পেতেন না ব্যাটিং এর। বেভান ব্যাটিং এ নিজের সামর্থ্যের পরিচয় দিয়েছেন। ক্যারিয়ারে স্মরণীয় বেশ কয়েকটি ইনিংস খেলেছেন তিনি।

  • মহেন্দ্র সিং ধোনি (ভারত)

ভারতের অন্যতম সেরা অধিনায়ক ছিলেন ধোনি। আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ফিনিশার হিসেবে বিবেচনা করা হয় ধোনিকে। চাপের মুখে ঠান্ডা মাথায় দলকে উপরে টেনে নেয়ার কাজটা বেশ ভালো ভাবেই সামলেছেন তিনি। ধোনি নিজের জাত চেনান ২০০৫ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে ১৪৮ রানের ইনিংস খেলে। এছাড়াও আরও অনেক স্মরণীয় ইনিংস খেলেছেন তিনি। কিন্তু বিশেষভাবে স্মরণীয় ইনিংস হলো ২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনালে ৯১ রানের ইনিংস। যা ২৮ বছরে ভারতকে বিশ্বকাপের শিরোপা জেতাতে সাহায্য করে।

লেখক পরিচিতি

খেলাকে ভালোবেসে কি-বোর্ডেই ঝড় তুলি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link