ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটারদের বলা হয় ক্রিকেটের ফেরিওয়ালা, বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে ক্রিকেট আনন্দ ফেরি করাই তাঁদের কাজ। তবে এত ব্যাখ্যা করার দরকার নেই বললেই চলে, উইন্ডিজ ক্রিকেটারদের কেন ফেরিওয়ালা বলা হয় সেটা সুনীল নারাইনের ভ্রমণসূচির দিকে তাকালেই বোঝা যায়; মাত্র ৭৫ ঘন্টার ব্যবধানে দুইটি ভিন্ন দলের হয়ে ৪ ম্যাচ খেলতে যাচ্ছেন এই রহস্যময়ী স্পিনার।
ক্যারিবিয়ান স্পিনার সুনীল নারাইন বর্তমানে অবস্থান করছেন আমেরিকায়। মেজর লিগ ক্রিকেট খেলতে এলএ নাইট রাইডার্সের শিবিরে আছেন তিনি। সবকিছু ঠিক থাকলে ১৪ জুলাই টেক্সাস সুপার কিংসের বিপক্ষে মাঠে নামতে যাচ্ছেন এই তারকা। শুধু দলটির খেলোয়াড়ই নন তিনি, অধিনায়কও বটে; তাই তো দায়িত্বটাও একটু বেশি।
এরপরই সুনীল নারাইন উড়াল দিবেন ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে; সেখানে পরেরদিন যোগ দেন ভিটালিটি ব্লাস্টের দল সারে ক্রিকেট ক্লাবের সঙ্গে। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিলেও অবশ্য বিশ্রাম করার সময় একেবারেই নেই সুনীল নারাইনের কাছে। ওইদিন দুপুরেই ভিটালিটি ব্লাস্টের সেমিফাইনালে খেলতে হবে তাঁকে।
যদি জিতে যায় তাঁর দল তাহলে জয়ের আনন্দ করা তো দূরে থাক, উল্টো ব্যস্ততা বাড়বে নারাইনের। কেননা সেদিন সন্ধ্যায় আবার শিরোপার শেষ লড়াইয়ে নামতে হবে সারে ক্রিকেট দলকে।
১৫ তারিখ সন্ধ্যায় টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলার পরেই আবারো আমেরিকার প্ল্যান ধরতে হবে সুনীল নারাইনকে। কারণ ১৭ তারিখ পুনরায় এলএ নাইট রাইডার্সের হয়ে টস করতে নামবেন তিনি। সারে ফাইনাল খেললে সবমিলিয়ে নারাইনকে ৭৫ ঘন্টার মধ্যে খেলতে হবে চার ম্যাচ আর ১৮ ঘন্টা থাকতে হবে বিমানে।
তিন দিনের মধ্যে দুইবার বিশাল আটলান্টিক পাড়ি দেয়া অবশ্য মুখের কথা নয়, তবু কমিটমেন্ট আর নিজের উপর বিশ্বাসের জোরেই হয়তো এই মিশন ইম্পসিবল সম্ভব করবেন সুনীল নারাইন।
সতীর্থের এমন হুড়োহুড়ি নিয়ে সারে অধিনায়ক ক্রিস জর্ডানও কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আপাতত এটাই পরিকল্পনা। তাঁর সময়সূচী বেশ আঁটসাঁট, তবে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে এমনটা হতেই পারে। আমিও এসব কিছুটা হলেও অনুভব করতে পারি৷ তবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকলে বাকি সবকিছু সহজ হয়ে যায়।’
সুনীল নারাইনের কমিটমেন্টের প্রশংসাও করেছেন ইংলিশ পেসার। তিনি বলেন, ‘সে (নারাইন) অত্যন্ত কমিটেড ক্রিকেটার। আপনাকে কেবল দেখতে হবে সে কিভাবে অনুশীলনে নিজের সেরাটা দেয়। সে ব্যাটিং এবং বোলিং পছন্দ করে। এছাড়া তার খেলার উন্নতি করতে এবং বিভিন্ন খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে খেলতে উন্মুখ হয়ে থাকে। আমি তাকে আমার সুইস আর্মি ছুরি বলি, কেননা সে যেকোনো পরিস্থিতিতে কার্যকরী একজন।’
ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে এমন তাড়াহুড়ো অবশ্য নতুন কিছু নয়। এর আগেও অ্যালেক্স হেলস, হ্যারি গারনে এমন টাইট শিডিউলের মধ্য দিয়ে গিয়েছেন। দুজনে ২০১৯ সালে নটিংহ্যামের হয়ে খেলার জন্য ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ থেকে উড়ে এসেছিলেন এবং একইদিনে ফিরেও গিয়েছিলেন।
তবে নারাইনের ঘটনা ছাড়িয়ে গিয়েছে সেসবকে; নয় হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে দুই দেশে এত অল্প সময়ের ব্যবধানে মাঠে নামার নজির নেই অন্য কোন ক্রিকেটারের। যদিও ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের আগামী দিনে নারাইনের মতই ভাগ্য মেনে নিতে হবে অনেককেই।