স্পিনার থেকে বাস ড্রাইভার: আফসোস ও বিস্ময়-গাঁথা

কিছুদিন আগে শেষ হওয়া বোর্ডার গাভাস্কার ট্রফির এমসিজি টেস্টের আগে টুইটারে একটি ছোট্ট ভিডিও ক্লিপ কিছুটা ভাইরাল হয়। ভিডিওটিতে অস্ট্রেলীয় দলের অনুশীলনে একজন ডানহাতি অফস্পিনারকে বল করতে দেখা যায়, যার বোলিং অ্যাকশন হুবহু শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটার সুরাজ রানদিভের মত! অজি দলের প্র‍্যাকটিস সেশনে রনদিভ তো থাকতে পারে না ধারণা নিয়ে অনেকেই ভিডিওটি বারবার দেখেছেন এবং পরবর্তীতে নিশ্চিত হয়েছিলেন, হ্যাঁ, এটাই সুরাজ রানদিভ!

ভিডিওটি দেখার পর প্রথম যে প্রশ্নটি আমার মাথায় এসেছিল – কিভাবে!?

গুগল করে খুব একটা লাভ হয়নি, তবে অস্ট্রেলিয়াতে মাইগ্রেট করেছেন এটুকু জানতে পেরেছিলাম! এবং পরবর্তীতে খুব অখ্যাত এক লঙ্কান ফেসবুক পেইজের কমেন্ট সেকশনে কেউ একজন লিখেছিল রানদিভ অস্ট্রেলিয়াতে বাস ড্রাইভার হিসেবে পার্ট টাইম কাজ করেন! অথেনটিক নয়, তার উপর গুগল করেও কোন তথ্য পাই নাই, তাই উড়ো খবর ভেবে পাশ কাটিয়ে গিয়েছিলাম।

আজ প্রায় দুই মাস পর জানতে পারলাম, খবরটা সঠিক ছিল, সুরাজ রানদিভ অস্ট্রেলিয়াতে একটা কোম্পানির হয়ে বাস ড্রাইভিং করেন জীবিকার তাগিদে! বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সাইটে নিউজটা সম্প্রতি পাবলিশ হয়েছে, সেখান থেকেই কিছু টুকরো তথ্য আপনাদের জানাচ্ছি।

শুধু রানদিভ নয়, অস্ট্রেলিয়ায় মাইগ্রেট করে সেইম কোম্পানিতে বাস ড্রাইভারের কাজ করছেন আরও দুজন ক্রিকেটার। একজন রানদিভেরই স্বদেশী চিনথাকা জয়াসিংহে এবং আরেকজন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার ওয়াডিংটন মোয়ায়েঙ্গা! চিনথাকা শ্রীলঙ্কার হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন, মোয়ায়েঙ্গাও জিম্বাবুয়ের হয়ে টেস্ট এবং ওয়ানডে খেলেছেন। ভাগ্যের সুপ্রাপ্তির খোঁজে আজ তারা অস্ট্রেলিয়ায়!

রানদিভ অস্ট্রেলিয়ায় শিফট হবার পর লোকাল ক্লাব ক্রিকেটে জয়েন করেন। তিনজনের ভেতর রানদিভই শুধুমাত্র ডিস্ট্রিক্ট লেভেল ক্রিকেট খেলেন অস্ট্রেলিয়ায়। এছাড়া ভিক্টোরিয়া ক্লাবের সাথে সম্পৃক্ত ড্যান্ডেনং ক্রিকেট ক্লাবেও রানদিভ খেলেন। এই ক্লাবে এক সময় জেমস প্যাটিনসন, পিটার সিডলরা ক্রিকেট খেলেছেন।

এমসিজি টেস্টের আগে, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া থেকে রনদিভকে ডাকা হয় নেটে ব্যাটসম্যানদের বোলিং করার জন্য। রানদিভ সানন্দে রাজী হন, যার ভিডিও টুইটারে এসেছিল।

পড়ন্ত বেলায় অস্ট্রেলিয়াতে ক্রিকেট ক্যারিয়ার গড়ার পাশাপাশি রনদিভদের জীবিকার খোঁজও করতে হয়। ট্রান্সডেভ নামে ফ্রান্স বেসড একটি কোম্পানির হয়ে পাবলিক বাসে ড্রাইভিং হয়ে ওঠে রানদিভ দের রুটির নিমিত্ত।

রানদিভের ক্যারিয়ারে ঝলমলে আলোর রোশনাই হয়ত ছিল না, কিন্তু অন্ধকারে নিমজ্জিত হবার মত অমাবস্যাও সেখানে ছিল না। এক সময় লঙ্কা দলের নিয়মিত মুখ ছিলেন, আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়েও খেলেছেন। ২০১০ সালে ইচ্ছাকৃত নো বল করে বীরেন্দ্র শেবাগকে সেঞ্চুরি বঞ্চিত করে খবরের পাতায় ভিলেন হয়েছেন। অথচ, আজ খবরের পাতায় সুরাজ রানদিভ এসেছেন শুন্যতায় ভাসতে, আফসোস আর বিস্ময়ের কারণ হয়ে!

জীবন কত বিচিত্র! একই লেভেলে ক্রিকেট খেলে কেউ কিংবদন্তি হয়, কেউ কোচ হয়, কেউ বা অবসরের পর ব্যবসায়ী হয়! আবার, কেউ কেউ জীবিকার তাগিদে ট্রাক ওয়াশ করে, বাস ড্রাইভার হয়!

কোন কাজই ছোট নয়, কোন পেশাই অসম্মানের নয়। সুরাজ রানদিভরা তাই উদাহরণ হয়ে বারবার ফিরে আসে! শিক্ষা দিয়ে যায় চ্যালেঞ্জ গ্রহনের, শিক্ষা দিয়ে যায় শেষ পর্যন্ত লড়ার, শিক্ষা দিয়ে যায় জীবন সংগ্রামের এবং সেই সাথে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে যায় জীবন মুদ্রার দুইটি পিঠ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link