‘নাইটওয়াচম্যান’ তাইজুল ছাপিয়ে গেছেন সবকিছু

দুই দলের টপ অর্ডার যখন মুখ থুবড়ে পড়েছে। বাংলাদেশ দল যখন ঘোরতর বিপদের মুখে পতিত হয়েছে। ঠিক সে মুহূর্তে দাঁড়িয়ে দৃঢ়তার গান শুনিয়ে গেলেন তাইজুল ইসলাম। ব্যাট হাতে রেকর্ড গড়া ইনিংসই খেলে গেলেন তাইজুল।।

সাম্প্রতিক সময়ে সাদা বলের ক্রিকেটে তাইজুলের কার্যকারিতা নিয়ে উঠেছিল প্রশ্ন। তবে টেস্ট ক্রিকেটে তাইজুল বরাবরই বাংলাদেশের অন্যতম পারফর্মার। তবে সেটা অবশ্যই রেডচেরি হাতে। কিন্তু এদফা তিনি দলের বিপর্যয়ে সামনে এলেন নতুন রূপে। ব্যাটিংটাও ঠিকঠাক করতে পারেন- সে প্রমাণ রেখে গেলেন সিলেটে।

নেমেছিলেন নাইট ওয়াচম্যান হিসেবে। তৃতীয় উইকেট পতন ঘটে বাংলাদেশের দলীয় ৩১ রানে। ৭.২ ওভারের মাথায় ফিরে যান মুমিনুল হক। দিনের খেলার তখন স্রেফ ২.৪ ওভার বাকি। সেই সময়টুকু টিকে থাকতে হতো বাংলাদেশকে। তাইতো নতুন কোন ব্যাটারকে বাইশ গজে পাঠানোর ঝুঁকি নিতে চায়নি। তাইজুলের দায়িত্বই ছিল সে সময়টুকু দেখে-শুনে খেলে আসা।

তবে তিনি স্রেফ প্রথম দিনের শেষভাগটুকুই দেখে-শুনে খেলেননি, দ্বিতীয় দিনে তিনি বনে গেছেন বাংলাদেশের অন্যতম রান সংগ্রাহক। প্রথম ঘন্টায় যেখানে আবারও শুরু হয় উইকেট হারানোর মিছিল, সেখানে তাইজুল থেকেছেন অটল।

পুরোদস্তুর ব্যাটারদের তুলনায় তাইজুল বেশ ভুগিয়েছেন লঙ্কান বোলারদের। খেলেছেন ৮০টি বল। এত পরিমাণ বল বাংলাদেশের কোন টপ অর্ডার ব্যাটারও প্রথম ইনিংসে খেলতে পারেননি। শুধু যে বল খেলেই থেমে থেকেছেন তাও নয়। রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। তাতে করে নিজের ক্যারিয়ারের এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসও খেলে ফেলেন তাইজুল।

এমনকি নাইট ওয়াচম্যান হিসেবে বাংলাদেশী খেলোয়াড়দের মধ্যেই সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলে ফেলেন তাইজুল। ৪৭ রানে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। তার ব্যাটে ভর করেই মূলত বাংলাদেশ অন্তত লড়াই চালিয়ে গেছে। ব্যাটারদের চরম ব্যর্থতার দিনে, বাংলাদেশের মেঘাচ্ছন্ন আকাশে এক ফালি রোদ হয়েই ধরা দিয়েছেন তাইজুল ইসলাম।

তার খেলা এই ইনিংসটিতে ৬টি বাউন্ডারিও হাঁকিয়েছেন। বাংলাদেশের পক্ষে দুইটি সর্বোচ্চ রানের জুটিতে ছিলেন তিনি। খেলেছেন ১৫৪ মিনিট। এত সময় ধরে এর আগে বাংলাদেশের কোন ব্যাটার নাইট ওয়াচম্যানের দায়িত্ব পালন করতে পারেননি।

২০১০ সালে পেসার শাহাদাত হোসেন নাইট ওয়াচম্যানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন একদফা। সেবার তিনি ১০০ মিনিট টিকে ছিলেন বাইশ গজে। তাইজুলের খেলা এই ইনিংসটির আগে অবধি শাহাদাতের সেই ইনিংসটিই ছিল বাংলাদেশী নাইট ওয়াচম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। ভারতের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে সেদিন ৪০ রান করেছিলেন শাহাদাত।

শাহাদাতের খেলা সেদিনের ইনিংসটি বাংলাদেশের পরাজয় এড়াতে পারেনি। তাইজুলের এই ইনিংসে শেষ অবধি বাংলাদেশের পক্ষে ফলাফল আসবে কি-না তা সময়ই হয়ত বলে দেবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link