‘টক অব দ্য টাউন’ – এখন সাকিব আল হাসান। তিনি যা বলেন তাই যেন এখন নতুন করে আলোচনা কিংবা সমালোচনার জন্ম দিচ্ছে। সেই সাকিব ক্যারিয়ার নিয়ে নিজের নতুন একটা ভাবনার কথা জানালেন প্রকাশ্যে, যা নিয়ে ক’দিন ধরেই ছিল আলোচনা।
বেসরকারী স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাকিব সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনটা ফরম্যাট এক সাথে খেলাটা প্রায় অসম্ভব তাঁর জন্য। তিনি বেছে বেছে যেকোনো দুটি ফরম্যাট খেলতে চান।
তিনি বলেন, ‘আমার কাছে কোনটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা আমি জানি এবং কোনটার অগ্রাধিকার দিতে হবে সেটাও আমি জানি। আর এখন আসলেই এমন একটা সময় এসেছে যে আমি টেস্ট নিয়ে চিন্তা করছি। এটাই হচ্ছে সমস্যা। আমি আদৌ আর টেস্ট খেলবো কি না। খেললেও কি ভাবে খেলবো।’
এই প্রসঙ্গে সাকিব আরো বলেন, ‘এমনকি ওয়ানডে ফরম্যাটে যে গুলো পয়েন্ট পদ্ধতিতে হয় সেই গুলায় আমার অংশগ্রহণ দরকার আছে কি না। আসলে আমার কাছে আর কোন অপশন নাই। আমি বলছি না যে টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়াবো। এমনো হতে পারে ২০২২ সালের বিশ্বকাপের পরে আমি আর টি-টোয়েন্টিই না খেলি। তখন ওয়ানডে আর টেস্ট খেললাম। একসাথে তিন ফরম্যাটে খেলা চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব। কারণ আপনি যখন ৪০-৪২ দিনের মধ্যে দুইটা টেস্ট খেলেন এটা কোন ভাবেই ফুলফিল হওয়ার মত বিষয় না। স্বাভাবিক ভাবেই এটা অনুপ্রাণিত করে বাছাই করা ম্যাচ খেলার জন্য। যে গুলো নিয়ে বিসিবির সঙ্গে ভালোভাবে একটা পরিকল্পনা করা জরুরি। আর সেই পরিকল্পনা করেই সামনে আগানোই হবে বুদ্ধিমানের মত কাজ। আর এই পরিকল্পনা জানুয়ারির মধ্যে হলেই জানতে পারবো পুরো পরিকল্পনা কি হচ্ছে।’
সাম্প্রতিক সময়ে সাকিব ক্রিকেটের চাপ কমাতে অনেক কিছুই করেছেন। সর্বশেষ বিশ্রাম নিয়েছেন নিউজিল্যান্ড সফর থেকেও। বিশেষ করে, বিশ্বকাপের সময়েও বলেছিলেন – তিনি বেশ ক্লান্ত। ইনজুরির কারণে বিশ্বকাপের শেষ কয়েকটা ম্যাচ খেলতেও পারেননি বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার।
সাকিবের কাছে ক্রিকেটের চাপটাকে এখন মাত্রাতিরিক্ত মনে হওয়ার আরেকটা কারণ হল জৈব সুরক্ষা বলয়। তিনি এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে,যদি আপনাকে জেল খানায় দিয়ে দেয় যেমন লাইফ থাকবে ঠিক তেমন। জেলখানায় আপনি কারো সাথে কথা বলতে পারবেন। এমন না যে প্লেয়াররা বাইরে ঘুরাঘুরি করে, শপিং মলে যায়, সিনেমা হলে যায়, রাস্তা দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তা কিন্তু না। এটা আসলে মেন্টালি যখন জানবেন আপনি চাইলেও বের হতে পারবেন না তখন সমস্যাটা ওখানে। আপনি দেখেন নিউজিল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ দল পাঠাবে না বিশ্বকাপে। শুধু মেন্টাল হেলথের কথা চিন্তা করে। তাদের কাছে যেটা মনে হচ্ছে করোনা তাড়াতাড়ি যাওয়ার না। তো আমাদের এর মধ্যে বেঁচে থাকতে হলে আমাদের যেটা করতে হবে এটা উপায় বের করতে হবে। বায়োবাবল বা কোয়ারেন্টাইন হয়তো ভালো সমাধান না।’
সাকিবের পরিবার থাকে যুক্তরাষ্ট্রে। আর তিনি পৃথিবী ব্যাপী নানারকম ক্রিকেট খেলে বেড়ান। পরিবার থেকে দূরে থাকাটাও সাকিবের জন্য এখন অসহ্যকর।
তিনি বলেন, ‘যখন আপনার তিনটা ছোট ছোট বাচ্চা থাকবে আর আপনি তাদের সময় দিতে পারবেন না। হঠাৎ তাদের সাথে দেখা হবে ৮-১০ দিনের জন্য তারপর আবার আপনি দেড় থেকে দুই মাসের জন্য বাইরে। আবার ১৫ দিনের জন্য দেখা হবে। খুবই অস্বস্তিকর অবস্থা। এটা বাচ্চাদের বড় হওয়ার পিছনে খুব আনহেলদি, ওদের বড় বিকশিত হওয়ার পিছনে খুব আনহেলদি। তাই আমি নিজেই চাই না আমার বাচ্চারা এই অবস্থায় থাকুক।’