সবার গলায় একই সুর। তামিম ইকবালের দিন নাকি ফুরিয়ে গেছে। সেই জৌলুশ কিংবা আগ্রাসনটার বড্ড অভাব। তাছাড়া ধারাবাহিকতারও যেন দেখা মিলছে না কোথাও। এমন একটি সময়ে আলোচনার বাইরে চলে যাচ্ছিলেন তামিম। এমন এক মুহূর্তেই নিজের জাত চেনালেন তিনি। ঠিক কি কারণে তিনি দেশ সেরা ওপেনার সেটাই প্রমাণ করলেন আরও একটিবার।
তামিমের দিনে যে তিনি অপ্রতিরোধ্য সেটাই করে দেখালেন আরও একটিবার। দুর্বার গতিতে তিনি এগিয়ে নিয়ে গেছেন নিজের ইনিংস। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বোলারদের রীতিমত শাসন করলেন তামিম। শুরুটা অবশ্য হয়েছিল একেবারে সাদামাটা। নাসিম শাহের প্রথম ওভারে কেবল একটি চার মেরে শুরু করেন। তাও আবার শেষ বলে। বাকিটা সময় যেন বাইশ গজের মতিগতি পড়ে ফেলার প্রচেষ্টা চালান তিনি।
কিন্তু ততক্ষণে মাহমুদুল হাসান জয় ফিরে গেছেন সাজঘরে। একটু একটু করে গতি বাড়াতে শুরু করেন তামিম ইকবাল। ঠিক যেমন গাড়ি তার গিয়ার বদলায়। তামিমও তেমন করেই ক্রমশ নিজের ব্যাটিং গিয়ার বদলাতে শুরু করেন তিনি। কুমিল্লার ধুরন্ধর বোলিং লাইনআপকে একহাত দেখে নিলেন তামিম ইকবাল।
অবশ্য এদিন তিনি কুমিল্লার সকল পরিকল্পনা ভেস্তে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন। তাঁকে সঙ্গ দিয়েছেন শাই হোপ। দুইজনে মিলে তৈরি করে ফেলেন এক অভেদ্য দূর্গ। সেই দূর্গে আঘাত করবার মত অস্ত্রের অভাবে পড়ে যায় ইমরুল কায়েসের দল। দিশেহারা অবস্থা। অন্যদিকে তামিম ও হোপ যেন নিজেদের মধ্যে এক তুমুল লড়াইয়ে নেমে পড়েন। স্বাস্থ্যকর এক লড়াই, অন্তত খুলনা টাইগার্সের দৃষ্টিকোণ থেকে।
দলটা বেশ ধুকছে। প্লে-অফের টিকিট এখনও নিশ্চিত নয়। পথটাও কঠিন। কিন্তু সেই কঠিন পথটাই যেন তামিমের আসল রুপটা সামনে নিয়ে এলো। ৪৪ বলে ৪৮ করেছিলেন তামিম। এরপর ১৫ তম ওভারে কুমিল্লার তানভীর ইসলামের উপর স্টিম রোলার চালান তামিম। তিনটি সুবিশাল ছক্কা হাকান তামিম, সেই সাথে একটি চার। পাঁচ বলের ব্যবধানে ২৩টি রান যুক্ত হয়ে যায় তামিমের নামের পাশে।
এরপর হোপ নাকি তামিম, কে আগে সেঞ্চুরি করবে সেই প্রতিযোগিতাই যেন করছিলেন দুই ব্যাটার। যদিও শেষ অবধি দুইজনের কেউই সেঞ্চুরির দেখা পাননি। ১৮৪ রানের বিশাল জুটির অবসান ঘটে তামিমের প্রস্থানে। ১৯ তম ওভারে নিজের সেঞ্চুরির দেখা পাওয়ার আশায় বড় শট খেলার চেষ্টা করেন তামিম। আর তাতেই ক্যাচ তুলে আউট হয়ে যান তামিম। এর আগে ৯৫টি রান তিনি যুক্ত করেছেন নিজের নামের পাশে।
প্রায় ১৫৬ স্ট্রাইকরেটে খেলা ইনিংসটিতে চারটি ছক্কার পাশাপাশি ১১ খানা বাউন্ডারি এসেছে তামিমের ব্যাট থেকে। তামিম ও শাই হোপের ব্যাটিং তাণ্ডবে ভর করেই ২১০ রানের বিশাল সংগ্রহ পায় খুলনা টাইগার্স। তামিমের স্বরুপে ফেরাটা স্বস্তি জুগিয়েছে সবার মাঝেই। এই তামিমের অপেক্ষাই যেন ছিল লম্বা একটা সময় ধরে।