ইনটেন্ট যাকে বলে!

স্যোশাল মিডিয়ায় দেখলাম হৈ হৈ রৈ রৈ ব্যাপার। তামিম ইকবাল নাকি একটা ঝড়ো ইনিংস খেলেছেন। হ্যাঁ, তামিম ১০০’র ওপর স্ট্রাইক রেটে একটা ফিফটি করেছেন। তিনি ৪৫ বলে ৫০ রানের একটা ইনিংস খেলেছেন। ১১১.১১ স্ট্রাইক রেট। ১০ টি চার ও একটি ছক্কায় সাজানো। খালি চোখে ঝা-চকচকে এক ইনিংস। তবে, এখানেও যদি/কিন্তু আছে।

খেলা না দেখে থাকলেও বাউন্ডারির সংখ্যাটা দেখেই অবশ্য চোখ কপালে ওঠার কথা। ১০ টি চার থেকে ৪০ রান। আর ছক্কা থেকে ছয় রান। মানে, মোট ৪৬ রান তিনি পেয়েছেন বাউন্ডারি থেকে। সেখানে খেলেছেন ১১ ডেলিভারি। মানে মানে ৩৪ বল থেকে দৌঁড়ে নিয়েছেন মোটে চার রান।

এখানে যোগ করা দরকার যে, জিম্বাবুয়ের হারারে স্পোর্টিং ক্লাবে খেলা হচ্ছে পিওর ব্যাটিং উইকেটে। সেখানে তামিম ওই ৩৪ টি ডেলিভারিতে চার রান না করে সহজেই ২৫ রান করতে পারতেন। করা উচিৎ আসলে ৩০ রান। সেখানে তামিমের নিজের রানটাই প্রথমে বাড়তো, দলের আত্মবিশ্বাসটাও বেশ বাড়তো। কঠিন কিছু ছিল না। তামিম ইকবাল খান যে ক্যালিবারের ব্যাটার – তাতে তিনি এটা চাইলেই পারতেন।

এখানে মূল সমস্যাটা ক্রিকেটে ব্যাসিক বোঝাপড়ায়। ক্রিকেটের আধুনিকায়নের যুগে এসে একটা ব্যকরণ বিদ্যার প্রয়োগ প্রায়শই দেখা যাচ্ছে। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মানেই চার-ছক্কার খেলা নয়। বরং এখানে বেশি জরুরী হচ্ছে স্ট্রাইক রোটেশন। চার ছক্কার খেলা বরং টেস্টকে বলা যায়। কারণ, সেখানে বলের মেরিট বুঝে রান আদায় করার ব্যাপার আছে। সব বলে রান বের করার দিব্যিও কেউ দেয়নি।

কিন্তু, ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টির ব্যাপারটা ভিন্ন। বিশেষ করে ব্যাটিং ট্র্যাকে ইনিংসে এক গাদা ডট বলের হার বেশি থাকাটা অপরাধের মধ্যে পড়ে, যতই স্ট্রাইক রেট ১০০’র বেশি হোক না কেন। যে উইকেটে আমি ৪৫ বল খেলে ৭০ রান বের করতে পারবো, সেখানে কেন ৫০ করে সন্তুষ্ট থাকবো। আর ইনিংসটার সমস্যার সমাধানটাও তো খুবই সহজ। স্রেফ স্ট্রাইক রোটেশন।

সাদা বলের ক্রিকেটে ইনটেন্ট এটাকেই বলে। এখানে ডিমান্ড থাকবে বলে বলে চার ছক্কা মারার। কিন্তু, সেই ডিমান্ড ফুলফিল করা আদতে কারো পক্ষেই সম্ভব না। তাই, বিরাট কোহলি বা বাবর আজমরা এখানে স্ট্রাইক রোটেড করে রানের চাকাটা সচল রাখেন। রান রেট একটা মান সম্পন্ন জায়গায় রাখেন। এখানেই পার্থক্যটা গড়ে যায়।

স্ট্রাইক রোটেশনের একদমই তোয়াক্কা না করে দিব্যি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বা ফ্রাঞ্চ্যাইজি ক্রিকেট খেলে গিয়েছেন ক্রিস গেইল। কিন্তু, সেটা একদমই আলাদা একটা ঘটনা। গেইল নিজেও শেষ বয়সে এই ইস্যুতে ভুগেছেন এবং এখনও ভুগছেন। চার ছক্কায় আপনি হয়তো তারকা হয়ে যেতে পারবেন, কিন্তু পার্থক্যটা গড়ে দেবে ওই স্ট্রাইক রোটেশনই।

তামিমও এই ইনিংসটা দিয়ে চাইলে পার্থক্যটা গড়ে দিতে পারতেন। সেই সুযোগ, সময় আর উইকেট – সবই মন মত পেয়েছিলেন তিনি। কিন্ত, হল না। ১১১.১১ স্ট্রাইক রেটেই তাকে থামতে হল। থামা নিয়ে সমস্যা নাই। তামিমের মনের মধ্যে যেন ‘ভাল স্ট্রাইক রেট’-এর সন্তুষ্টি চলে না আসে। আসলেই বিপদ।

 

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link